নিচের তিনটি ডাকটিকেট সিরিয়ার জন্মলগ্নের। প্রথমটা আসলে তুর্কী সাম্রাজ্যের, কিন্তু ১৯১৯ সালে এর উপরে ছাঁপ মেরে দেয়া হয়েছে ‘আল-হুকুমাত-আল-আরাবিইয়া’ (আরব সরকার)। দ্বিতীয়টা ১৯২০এর, নতুন আরব রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা এর প্রকাশের উপলক্ষ্য। আর শেষটা ১৯২১এর, আরব সরকারের ডাকটিকেটের ওপর এবার ছাঁপ ফরাসীতে — ও.এম.এফ, ওক্যুপাসিয়োঁ মিলিতের ফ্রঁসেজ়, ফরাসী সামরিক দখলদার সরকার।
ম্যাপে ওসমানী তুর্কী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহীদল ও তাদের ব্রিটিশ-মিশরী মিত্রদের সিনাই-ফিলিস্তিন সামরিক অভিযানের (১৯১৫-১৮) চিত্র দেখানো হয়েছে। ১
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে সংঘাতের ভৌগোলিক ব্যাপ্তি যতটুকু ছিল তার থেকে অনেক বেশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সমরাঙ্গনে। ইউরোপের থিয়েটারে সার্বিয়ার পক্ষ নিয়ে রুশ সাম্রাজ্য অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে অস্ট্রিয়ার মিত্র জার্মানি ও রাশিয়ার মিত্র ফরাসী-ব্রিটিশরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
সেরকম, তুরস্ক-জার্মানির গোপন আঁতাঁতের পরে একটি জার্মান যুদ্ধজাহাজ তুর্কী সহায়তায় কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী ওডেসা বন্দরের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনা ছিল তুর্কী যু্দ্ধমন্ত্রী আনওয়ার পাশার যুদ্ধ বাঁধানোর ষড়যন্ত্র, কারণ সুলতানসহ ওসমানী সরকারের অনেকের যুদ্ধে সায় ছিল না। এরপর রুশদের আহ্বানে আবার সেই ফরাসী-ব্রিটিশদের তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা।
সুয়েজ় প্রণালী সবসময়ই মধ্যপ্রাচ্যের যুধ্যমান সকল পক্ষের চোখের মণি। সুয়েজ়বিজয়ের লক্ষ্যে জার্মান উপদেশ নিয়ে তুর্কীরা সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। সুয়েজ়ের প্রতিরক্ষার খাতিরে ব্রিটিশ ক্যাম্পেন ২ শুরু করার পাশাপাশি মক্কার ‘শরীফ’ ৩ হুসেইন বিন আলীর সাথে গোপন পত্রযোগাযোগ শুরু করেন মিশরের ব্রিটিশ হাই কমিশনার ম্যাকম্যাহন।
শরীফ হুসেইন ছিলেন বিখ্যাত বনি হাশেম গোত্রের গোত্রপতি ৪। সাতশ বছর ধরে তাঁর বংশ মক্কা ও মদিনার শাসন পরিচালনা করে আসছিল — অবশ্য ওসমানী সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করে। তাঁর রাজ্যের নাম ছিল হেজাজ়।
বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পরপর হেজাজ়ের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। তুর্কীদের সাথে হুসেইন বিন আলীর বহুদিনের ভাল সম্পর্ক থাকার পরেও যখন মক্কায় হজ্জ্বযাত্রীদের আগমনে ভাঁটা পড়া শুরু করলো, মিশর থেকে খাদ্যশস্য আসা গেল বন্ধ হয়ে, আর শেষে যখন তিনি খবর পেলেন ওসমানীরা তাঁকে সরানোর মতলব করছে, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ব্রিটিশদের সাথে যোগ দেবার।
তিনি ম্যাকম্যাহনের সাথে চুক্তি করলেন যে তুরস্কের বিরুদ্ধে বেদুইন সৈন্যদলের সাহায্যের বিনিময়ে ব্রিটিশরা উত্তরে হালাব (আলেপ্পো) থেকে দক্ষিণে আদেন পর্যন্ত আরব এলাকায় তাঁকে স্বাধীন রাজ্যগঠনে সমর্থন দেবে। অবশ্য মধ্যোপসাগর তীরের সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত অঞ্চল, আর দক্ষিণ আরবের আদেন-কাতার-কুয়েত ইত্যাদি ইউরোপীয়দেরই থাকবে। হুসেইন আরো দাবি করলেন বেদুইনদের সমর্থন কেনার জন্য লাখ লাখ স্বর্ণমুদ্রা, যাতে ম্যাকম্যাহন রাজি হলেন। (এসময় এই এলাকায় তেল আবিষ্কার হয়নি।) সে চুক্তির পরে টি.ই. লরেন্স বা ‘লরেন্স অফ আরাবিয়া’ ৫ ১৯১৬ সালে আরব বিদ্রোহীদের উপদেষ্টা হিসাবে এসে হাজির হন।
এভাবে ঔপনিবেশিক শক্তিদের সহায়তায় আরব স্বাধীনতাকাংক্ষীদের ডি ফ্যাক্টো প্রতিনিধি হয়ে যান হুসেইন। ওসমানী সাম্রাজ্যের মধ্যবিত্ত আরব প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা ১৯১৩ সালে প্রথম আরব কংগ্রেসের ৬ মাধ্যমে যে আরব জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের সূচনা করেন, রাতারাতি তার রাজনৈতিক ঝান্ডা হাইজ্যাক হয়ে যায়। ওসমানী আরব প্রদেশগুলিতে যেসকল বেদুইন গোত্রের আবাস ছিল, তারাও উৎকোচ নিয়ে তু্র্কীদের সাহায্য করে। অর্থাৎ আরবের নেতা হিসাবে হুসেইন বিন আলীর সমর্থন সব জায়গায় ছিল না। এসুযোগে এক সময় ওসমানীরা মক্কা দখল করে নেয় আর পবিত্র শহরটির বিপুল ধ্বংসসাধন করে।
ম্যাপে দেখানো হেজাজ় রেলওয়ে ছিল ইস্তাম্বুল থেকে মক্কা পর্যন্ত বিস্তৃত ওসমানী সেনাবাহিনীর সাপ্লাই লাইন। ব্রিটিশ ও ফরাসীদের অর্থ ও প্রযুক্তির সাহায্যে হুসেইন বিন আলীর পুত্র ফয়সাল এই রেললাইনের ওপর চোরাগোপ্তা মাইন হামলা, লুটতরাজ শুরু করেন। তাঁর গেরিলাদল ছিল ট্রাইবাল বেদুইন আর ওসমানী সেনাবাহিনীর যুদ্ধবন্দী আরবদের নিয়ে সংগঠিত। টি.ই. লরেন্স ছিলেন যুদ্ধ পরিকল্পনায় তাঁর শরিক। পূর্বদিকে ফয়সালের এক ভাই আব্দুল্লাহ তুর্কী মিত্র রাশিদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাব্যুহ গঠন করেন। আরেক ভাই আলী দক্ষিণে মদিনায় তুর্কীদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন।
এভাবে হেজাজ় রেলওয়ে ধরে ধীরে ধীরে উত্তরদিকে অগ্রসর হয় আরব সেনাদল। ফয়সাল একে একে জেদ্দা, ইয়ানবো, আকাবা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ নগর জয় করেন। অন্যদিকে মিশর থেকে ব্রিটিশ-ফরাসী ফৌজও সিনাই হয়ে ফিলিস্তিন-লেবাননে ঢুকে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে ১৯১৮এর সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ ঈজিপশান এক্সপেডিশনারি ফোর্স সিরিয়ার দামেস্ক দখল করে নেয়। ফয়সালও তাদের পিছু পিছু দামেস্কে প্রবেশ করে আরবদের জন্যে স্বাধীন রাজ্য ঘোষণা করেন। সে রাজ্যে ধর্মনির্বিশেষে সকল আরবদের অধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কিন্তু এর পরপরই ফয়সাল ও হুসেইন একের পর এক দুঃসংবাদ পাওয়া শুরু করলেন। জানতে পারলেন ১৯১৭তে ব্রিটিশদের ঘোষিত বালফুর ডিক্লারেশনের কথা — যাতে ফিলিস্তিনের অংশবিশেষে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটে ইহুদীদের জন্যে আবাসস্থল প্রতিষ্ঠার অধিকার স্বীকৃত হয়। আরো তাঁদের কানে এলো ব্রিটিশ-ফরাসীদের গোপন সাইকস-পিকো চুক্তির কথা। এর শর্তানুযায়ী সিরিয়া-লেবানন আর ইরাক হবে যথাক্রমে ফ্রান্স আর যুক্তরাজ্যের ঔপনিবেশিক বলয়ের অংশ, স্বাধীন আরব বাসভূমি নয়। ব্রিটিশদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গে বিশ্বাস হারালেন না অবশ্য ফয়সাল। ভাবলেন, সাইকস-পিকোর বাস্তবায়ন হবে যুদ্ধের সমাপ্তিতে, ততদিনে তিনি ব্রিটিশদের মত পরিবর্তন করতে সক্ষম হবেন।… এর এক মাস পরেই অক্ষশক্তি আত্মসমর্পণের ফলে যুদ্ধের যবনিকাপাত হয়ে যায়।
যুদ্ধের পরে তুরস্কের দখলকৃত এলাকাগুলির কি হবে সে নিয়ে প্যারিসে মিত্রশক্তির আলোচনা বসে। তাতে যোগ দেন ফয়সাল। মার্কিনরা ব্রিটিশ আর ফরাসীদের রাজি করায় স্বাধীন কিং-ক্রেইন কমিশনের মাধ্যমে ফয়সালের সমস্যাটি সমাধান করতে। সে কমিশন ১৯২০এ সিরিয়ায় এসে পৌঁছায় এবং বিভিন্ন শহরে গিয়ে আরব জনগোষ্ঠীর মতামত নেয়া শুরু করে। তাদের মতে পৌঁছতে বছর খানেক সময় লাগে। শেষ পর্যন্ত যখন সে কমিশনের রিপোর্টও এল যে এসব এলাকার অধিকাংশ অধিবাসী কোন না কোন প্রকার স্বাধীনতা চায় আর এদের সকলে স্বাধীন আবাসভূমির যোগ্য না হলেও সিরিয়াতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব, ততদিনে ব্রিটিশ-ফরাসীরা কমিশন থেকে পদত্যাগ করেছে, আর লীগ অব নেশন্সের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে সাইকস-পিকো চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বাগিয়ে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র লীগের সদস্য হয়নি, কংগ্রেসের বাগড়া দেয়ার কারণে। তাই কিং-ক্রেইন কমিশনের রিপোর্টও বস্তাবন্দি হলো।
এসব ঘটনার বিপরীতে সিরিয়ায় ফয়সালপন্থী বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। লেবাননের ম্যারোনাইট খ্রীষ্টান আর দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজরা অবশ্য ফয়সালবিরোধী ছিল। ফরাসীরা সেনাদল পাঠিয়ে জোরপূর্বক নিজেদের ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠা করে। তাদের সাথে এক দফা যুদ্ধে ফয়সালের সেনাদল পরাজিত হয়। ফয়সাল হার মেনে যুক্তরাজ্যে নির্বাসন চলে যান। এখানে শুরু হয় তৃতীয় ডাকটিকেটটির ইতিহাস।
অবশ্য ফয়সালকে বেশিদিন রাজ্যবিহীন রাজা থাকতে হয়নি। ব্রিটিশরা তাদের ম্যান্ডেটরাজ্য ইরাকে তাঁকে রাজসিংহাসনে বসায়। আর ট্রান্সজর্ডান ম্যান্ডেটের রাজা হন তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ। হেজাজ় রাজ্যে তাঁদের বড় ভাই আলী কিছুদিন রাজা থাকার পর সৌদী আক্রমণের মুখে ১৯২৫এ তাঁকে গদি ছাড়তে হয়। সেখানে শুরু হয় ইতিহাসের নতুন এক পাতা।
(১) মিডল ঈস্ট থিয়েটার ছিল পাঁচটি সমরাঙ্গন জুড়ে: সিনাই-ফিলিস্তিন, মেসোপটেমিয়া, ককেশাস, পারস্য, আর গালিপোলি। মেসোপটেমিয়া বা ইরাক অভিযানে বিপুলসংখ্যক ব্রিটিশ ভারতীয় সেনা অংশগ্রহণ করে। বিদ্রোহী কবি নজরুল এ যুদ্ধে যোগদানের জন্যে লাহোর সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ নেন, কিন্তু সে যুদ্ধক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত তাঁকে যেতে হয়নি। [Middle Eastern theatre of World War I]↩
(২) ইজিপশান এক্সপেডিশনারি ফোর্স বা ই.ই.এফ. ছিল মিশরভিত্তিক ব্রিটিশ কমনওয়েলথ, ফ্রান্স ও ইতালীর সম্মিলিত সেনাদল। কমনওয়েলথ সেনাদলের অস্ট্রেলীয় ও নিউজিল্যান্ডার কোরের ডাকনাম আনজ়াক — এরা গালিপোলি সমরাঙ্গনে সাহসিকতার সাথে লড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আরেক ক্যাজুয়াল্টি ছিল মিশর। ১৮৬৭ থেকে নামে মাত্র তুরস্কের অধীন ছিল মিশরের স্বাধীন শাসক খদিভরা, ইউরোপীয়দের সাথে তাদের ভাল সম্পর্ক ছিল। ১৯১৪ সালে খদিভ আব্বাসকে অপসারণ করে ব্রিটিশরা সরাসরি মিশরের শাসন ক্ষমতা দখল করে, এর মূল কারণ ছিল ভারতের সাথে যোগাযোগের অবলম্বন সুয়েজকে রক্ষা করা। [Egyptian Expeditionary Force]↩
(৩) মক্কার শরাফা বা আমিরাত, এ ছিল হুসেইন বিন আলীর রাজ্যের আনুষ্ঠানিক নাম। হেজাজ়ের আগে এটি সার্বভৌম রাজ্য ছিল না। ৯৬৮ থেকে ১৯২৫ পর্যন্ত এই রাজ্যটি নানা আকারে বহাল ছিল। [Sharifate of Mecca]↩
(৪) বনি হাশেম গোত্র প্রাচীন কুরাইশ বংশের অন্তর্গত, এর নাম হযরত মুহম্মদের(স.) প্রপিতামহের নামে। অর্থাৎ হুসেইনের একটা ধর্মীয় বংশগত মর্যাদা ছিল। তিনি সৌদী ছিলেন না। সৌদীরা এসময় ছিল মরুভূমির সীমিত গুরুত্বের বেদুঈন গোত্রমাত্র। আর তাদের শত্রুতা ছিল হুসেইনের সাথে। হুসেইনের তিন পুত্র আলী, ফয়সাল ও আবদুল্লাহ পর্যায়ক্রমে হেজাজ, সিরিয়া-ইরাক আর জর্দানের রাজা হন। ১৯২৫এ ইবন সৌদ নজদ রাজ্য থেকে আক্রমণ চালিয়ে হেজাজ় দখল করে নিয়ে সৌদী আরব রাজ্যের সূচনা করেন। আলী জর্দানে ফিলিস্তিন আততায়ীর হাতে মারা যান ১৯৫১তে। আর ফয়সালের পৌত্র ইরাকের রাজা দ্বিতীয় ফয়সাল মিলিটারি কুতে ১৯৫৮ সালে নিহত হন। এখন একমাত্র জর্দানে হাশেমী রাজত্ব চলছে। ব্রিটিশদের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে অনেকদিন হুসেইন ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাঁর পুত্রদের রাজমুকুট পড়িয়েও ব্রিটিশরা তাঁর রাগ ভাঙ্গাতে পারেনি। শেষে তাঁকে ছেড়ে সৌদবংশের সাথে মিত্রতাচুক্তি করে ব্রিটিশরা। [Hussein bin Ali, Sharif of Mecca]↩
(৫) টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স তাঁর ডাকনাম অর্জন করেন ব্রিটিশ খবরের কাগজে আরব বেদুঈনদের স্বাধীন একরোখা জীবনের রোমান্টিক চিত্র অঙ্কন করে। গুপ্তচর-কূটনীতিক-সেনাপ্রধানের পাশাপাশি শখের প্রত্নতত্ত্ববিদও ছিলেন। ১৯৬২তে তাঁর জীবনের ঘটনা নিয়ে তৈরি অনবদ্য ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে তাঁর চরিত্রের রূপ দেন অভিনেতা পিটার ও’টুল। ফয়সালের সাথে তাঁর ভাল সখ্য থাকলেও বাকি দু’ভাইকে খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি লরেন্স। [T. E. Lawrence]↩
(৬) (৬) ওসমানী সাম্রাজ্যের আরবদের জাতীয়তাবাদ ভারতীয়দের তুলনায় অধুনার ধারণা। ১৯০৮এ বিপ্লবের মাধ্যমে তুরস্কের শাসনক্ষমতা নেয় ইয়াং টার্ক বলে একদল প্রগতিশীল কর্মজীবী নেতা। তাদের শাসনামলে সংসদীয় প্রথার পুনর্প্রবর্তন হলেও বেশিরভাগ মানুষের জীবনে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। তার ওপর বাল্কানের যুদ্ধের ডামাডোল। ফলে ১৯১৩তে কুয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে তিন পাশার ত্রিনায়কতন্ত্র। প্রতি ক্ষেত্রেই তুর্কীরা স্বহস্তে ক্ষমতা কুক্ষিগত করায় ইউরোপে অবস্থানরত একদল বীতশ্রদ্ধ আরব শিক্ষার্থী ১৯১৩তে প্যারিসে একটি আরব কংগ্রেস ডাকে। এতে ওসমানী সাম্রাজ্যের ফিলিস্তিন, সিরিয়া, মিশর প্রভৃতি এলাকার বুদ্ধিজীবীরা যোগ দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে আরবদের সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়, বরং স্বাধিকার। ফিলিস্তিনে তুর্কী অভিবাসন আইনের সদ্ব্যবহার করে ইহুদীদের আগমন আর ব্রিটিশ-ফরাসীদের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছিল আরবদের সংগঠিত হবার আরেক কারণ। আরব কংগ্রেস থেকেই মুসলিম ব্রাদারহুড, বাথ পার্টি, ফ্রী অফিসারস, প্রভৃতি মুভমেন্টের ধারার বিবর্তন। অর্থাৎ হাশেমী-সৌদী রাজতন্ত্রের ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। বলা বাহুল্য, এসময় অধিকাংশ অশিক্ষিত বেদুঈন গোত্রীয় যোদ্ধার দল এত কিছু বুঝত না। প্রাচীনকালের নিয়মানুযায়ী যে দল বেশি উৎকোচ দিত, তাদেরই পক্ষ নিত তারা। [Arab Congress of 1913]↩
One Reply to “সিরিয়া ও সাইকস-পিকো”