ইসরাইল ও জর্দান ভ্রমণঃ ভূমিকা

কাজের সুবাদে গত সপ্তাহ ঘুরে এলাম ইসরাইলের তেল আবিব। আর ব্যক্তিগত সময় কাটালাম পবিত্র শহর জেরুজালেম আর জর্দানের প্রাচীন পেত্রা নগরীর ধ্বংসাবশেষে। এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা!

শুধু যে স্থানগুলি দেখা হল তা নয়, উপস্থিত ছিলাম একেবারে সঠিক সময়ে। সাথে ছিল কয়েকজন চীনা ও ভারতীয় সহকর্মী।

ডোম অফ দ্য রকের পাদদেশে ওয়েস্টার্ন ওয়ালে শুক্রবার মধ্যরাতে শুরু হয় ধর্মপ্রাণ ইহুদীদের প্রার্থনা। নতুন বছরের প্রথম দিন রোশ হাশানা’র আগমনের দিনখানেক আগ থেকেই সন্ধ্যার পর এখানে লোকসমাগম শুরু হয়। লাগোয়া সিনাগগে প্রার্থনা-বিলাপ চলে। কাগজে লেখা অনুশোচনার প্রার্থনা কেউ গুঁজে দেয় দেয়ালের পাথরের ফাঁকে ফাঁকে। বেশ আবেগঘন পরিবেশে ইসলামী মাহফিলের মত সুর করে “সেলিকোত” প্রার্থনা চলে। গত ২৬ তারিখ ছিল রোশ হাশানা। দশম দিন ইয়ম কিপ্পুরের সাথে আশুরার মিল উল্লেখযোগ্য। হাদীস ঘাঁটালে পাওয়া যাবে, এক সময় দুটো দিন একই ছিল।

শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজে অংশ নিলাম পবিত্র মসজিদুল আকসার কম্পাউন্ডে। হাজারে হাজারে মুসলিম জেরুজালেমের পুরনো শহরের অলিগলি বেয়ে এই প্রাচীন প্রান্তরে এসে প্রার্থনা করল, অনেকে খোলা আকাশের নিচে কড়া রৌদ্রের মধ্যে। বেশ কয়েকটি অজুর স্থান আছে। অবাক হতে পারেন যে ওয়েস্টার্ন ওয়ালের সামনেও এমন দুটো অজুখানা, ইহুদীরা প্রার্থনার আগে ব্যবহার করে। মসজিদুল আকসায় মহিলাদের নামাজের জন্য আলাদা করে বরাদ্দ কুব্বাত আস-সাখরার (ডোম অফ দ্য রক) উঁচু প্ল্যাটফর্ম। আগের রাতে দেখেছি ইহুদী মহিলাদের জন্যেও পাশে আলাদা পার্টিশন করা জায়গা বরাদ্দ। নামাজের পর পুরো কম্পাউন্ড প্রদক্ষিণ করলাম। হোটেলের রিসেপশনিস্ট যুগল যে আরব সেটা বুঝেছিলাম। তাদের জিজ্ঞেস করাতে তারাই সাহস যুগিয়েছিল যে শুক্রবারের নামাজে এখানে আসা সবচেয়ে নিরাপদ। ঢোকার সময় দু’দু’বার সূরা ফাতিহা পাঠ করে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে আমি মুসলিম। তারপরেও বোধহয় পেছনে আঁঠার মত ফেঁউ লেগে ছিল। অমুসলিম সহকর্মীদের সাথে পরে আরেকবার ঢুকেছি। সেটা অন্য রাস্তায়, আরো মহা কড়া নিরাপত্তা। সে বিষয়ে পরে বলব। ওয়েস্টার্ন ওয়াল কম্পাউন্ডে ঢোকার সময়েও সিকুরিটি চেক পার করে যেতে হয়েছিল।

শুক্রবার বিকেলেই যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশবহন করে চলার পথ ভিয়া দোলোরোসা ধরে একে একে চৌদ্দটা স্টেশনে চক্কর মারতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেলাম ফ্রান্সিসকান ক্যাথলিক ফ্রায়ারদের দৈনিক শোভাযাত্রা। তাদের অনুসরণ করছে খ্রীষ্টান তীর্থযাত্রীর দল। মুসলিম কোয়ার্টারের অলিগলি বেয়ে একে একে নয়টি স্টেশন স্পর্শ করার পর শোভাযাত্রা গিয়ে ঢুকল খ্রীষ্টান ধর্মজগতের কেন্দ্র চার্চ অফ দ্য হোলি সেপালকারের ভেতর। চৌদ্দ স্টেশনের পাঁচটিই এর ভেতর। সেখানে ফ্রান্সিস্কান পাদ্রীদের প্রার্থনাগীতির অনুরনণ মনোমুগ্ধকর। খ্রীষ্টান ধর্মমতে যীশু খ্রীষ্টকে যে পাথরের সমাধিতে শায়িত করা হয়েছিল, তারপর সেখান থেকে তিনদিন পর পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন, সেই সেপালকারের সামনে চলল ধর্মগীতি। ওপরের লেভেলে গলগোথা টিলার ওপর যেখানে যীশু খ্রীষ্টকে রোমানরা ক্রুশবিদ্ধ করেছিল, সেখানেও গেলাম এর পর। ফ্রানসিস্কান মংকদের পর সেখানে এল আর্মেনিয়ান অর্থডক্স পাদ্রীদের দল, চলল তাদের প্রার্থনাগীতি। জেরুজালেম শহর নিয়ে তিন ধর্মের ঐতিহাসিক সংঘাতই যে শুধু হয়েছে তা নয়, চার্চ অফ দ্য হোলি সেপালকারের বিভিন্ন অংশের দখল নিয়েও নানা খ্রীষ্টান ধর্মমতের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতিহাস আছে। এখন টাইম আর স্পেস শেয়ার করে স্থিতিশীলতা বজিয়ে রাখা হয়েছে।

সব মিলিয়ে ওয়ান্স ইন এ লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স। সামনের দিনগুলিতে অল্প অল্প করে আরো তথ্য দেব। আপাতত ঐ তিনটি ধর্মাচার নিয়ে ‌ধারণ করা অল্প কটি ভিডিও শেয়ার করছি।

 

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!