পুরাকীর্তির সপক্ষে

পুরাকীর্তির দরকারটা কি? এটা কি খায় না পিন্দে? গরিব মানুষের আবার পুরাকীর্তি কি? অথবা — আধুনিক যুগে আমরা হবো আধুনিক, কেন ফিরে ফিরে প্রাচীনকে আগলে রাখা? এগুলির সাথে আমাদের বর্তমান পরিচয়ের যোগাযোগ কোথায়?

কিংবা, তালেবান-আইসিসের মত ‘এগুলি মোনাফেকি, মোশরেকি, কুফ্ফার; ধ্বংস কর সব!’

শেষ ‘যুক্তি’টা থেকে উল্টোদিকে যাই।

তালেবানরা যখন বামিয়ানের পাহাড় কেটে তৈরি বিশালকায় বুদ্ধমূর্তি রকেট মেরে ধুলায় মিশিয়ে দেয়, তখন আমার চোখ ফেঁটে জল এসেছিল। বামিয়ানের বুদ্ধ এমন এক শৈলীর উদাহরণ যাকে বলে গান্ধার শিল্প — ভারতীয় সনাতন বৌদ্ধ শৈল্পিক রীতির সাথে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সাথে আসা গ্রীক শিল্পী আর তাদের বংশধরদের গতিশীল আইডিয়া মিলে তৈরি হয়েছিল অনন্য গ্রেকো-বুডিস্ট আর্ট।



আরও পড়ুন বিজ্ঞাপনের পর...




সিরিয়া-ইরাকে আইসিস গণহত্যাসহ নানা অপরাধ তো করেছেই। তার সাথে সাথে পালমিরার প্রাচীন অনন্য স্থাপত্যশৈলী আর জাদুঘরে রক্ষিত পুরাকীর্তি ধ্বংস করেছে। পালমিরাও গান্ধারশিল্পের মত অনন্য কারণ আরবদের সাথে গ্রীক মিলেছে এখানে। আবার অনেক সুন্দর সুন্দর মসজিদ, সমাধি আর সুফী খানকাও ট্যাংক-রোলার দিয়ে গুড়িয়ে আইসিস ধূলিসাৎ করেছে। চোদ্দশ’ বছর ধরে বিভিন্ন মুসলিম আমলে, এমনকি ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চার খলিফার আমলেও, এ এলাকায় এরকম ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি।

মালির তিমবাক্তুতেও ২০১২ সালে ইসলামী কট্টরপন্থী দল আনসারদ্বীন প্রাচীন মালি সাম্রাজ্যের আদি ইসলামী সুফী সন্তদের অদ্বিতীয় সমাধির শৈলী আর সংলগ্ন মসজিদের অংশবিশেষ ধ্বংস করেছে। অথচ সুফীদের মাধ্যমেই সে এলাকায় ইসলামের প্রথম প্রচার-প্রসার হয়।

তাদের এসব করার জন্যে তারা কেতাব ঘাঁটিয়ে ঘাঁটিয়ে সন্দেহপূর্ণ নানা ফতোয়া আর পুরনো উদাহরণ বের করে। কিন্তু আসল ইচ্ছেটা হল, তারা প্রাচীন কালে নবীরা যেমন কা’বা বা অন্য কোন পবিত্রস্থানের ভেতর রাখা মূর্তি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন, তার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে মনে মনে পুণ্যার্জন করতে চায়। সুফীদের কোন কোন গ্রুপের ধর্মচর্চা মূলধারার হিসাবে একটু প্রশ্নসাপেক্ষ হতে পারে, কিন্তু পালমিরা-বামিয়ান কি দোষ করলো তা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। কারণ সিরিয়া-আফগানিস্তান এখন মুসলিম সংখ্যাগুরু, আর কেউই সেসব জায়গায় গিয়ে প্রাচীন ধর্মের অবতারদের উপাসনা করে না।

বরং পুরাকীর্তি টিকিয়ে রাখারই যুক্তি আমার মনে হয় কোরান-সুন্নাহ পড়লে পাওয়া যায়। সূরা আহকাফে বর্ণনা করা হয়েছে আদ্ আর সামুদ জাতের ওপর গজবের কাহিনী। সৎপথ থেকে বিচ্যুত হবার ফলে তাদের নগরগুলিকে ভূমিকম্প আর ঝড় দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়। মাদাইন সালেহ বলে সৌদি আরবের মরুভূমিতে এখনো সামুদ জাতির নগরের ধ্বংসাবশেষ আছে। সুপ্রচলিত একটি হাদীসে মাদা’ইন সালেহর মতো ‘অভিশপ্ত স্থান’ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যাবার উপদেশ বলা থাকলেও, কুরআনের সূরা রূমের নবম আয়াত অনুযায়ী আমার মতে প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে নৈতিক শিক্ষাগ্রহণের অনুপ্রেরণা রয়েছে। আর পুরাকীর্তি ধ্বংস করার ইসলামী যুক্তি আমি খুঁজে কোথাও পাইনি।

সৌদির কথা যখন উঠলো, তখন স্বীকার যেতেই হয় আইসিস, তালেবান, আনসারদ্বীন — এদের পেছনে সৌদি সরকারের সরাসরি ইন্ধন যদি না থেকেও থাকে তো তাদের নাকের ডগা দিয়ে ধনাঢ্য সৌদি নাগরিকেরা প্রশ্নবিদ্ধ চ্যারিটিতে পয়সা ঢেলে সন্ত্রাসবাদকে মালসামান দিয়েছে। অথচ সৌদিতে কিন্তু কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জাদুঘরে, জেদ্দা জাদুঘরে অনেক পুরাকীর্তি সংরক্ষিত আছে, যাদের মধ্যে প্রচুর প্রস্তরমূর্তি। সেগুলিও মাঝেমধ্যে বাইরের দেশে ট্রাভেলিং একজিবিশনে যায়। মাদাইন সালেহসহ অন্যান্য নগরেও এখন পর্যটকরা যেতে পারে। অর্থাৎ দুনিয়ার সবচে’ ‘বর্বর’ মুসলিম রাজ্যটিও তাদের পুরাকীর্তি টিকিয়ে রেখেছে, আর বহির্বিশ্বকে তা প্রদর্শন করে। পরিহাসের ব্যাপার, ওয়াহাবি কট্টরপন্থীরা ইসলামধর্মের সাথেই জড়িত অনেক সমাধিচিহ্ন — সমাধি নয় — ধ্বংস করে দিয়েছে এই অজুহাতে যে অন্যথায় অশিক্ষিত মানুষ সেগুলিতে গিয়ে খোদার পরিবর্তে নবী বা সন্তের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করবে।



আরও পড়ুন বিজ্ঞাপনের পর...




অন্তত এটুকু মনে হয় দাবি করতে পারি যে ইসলামে খুঁজে খুঁজে পুরাকীর্তিবিরোধী নিয়ম পাওয়া গেলেও পুরাকীর্তির সপক্ষে উদাহরণ কম নয়। শুধু ইসলামে নয়, যেকোন ধর্মের একটু গোঁড়ারা প্রাচীন শিল্পকর্ম বা পান্ডুলিপি নিয়ে একটু অস্বস্তিতেই থাকে। অধুনা ভারতে হিন্দু কট্টরপন্থীরা পাঁচশো বছরের পুরোনো অনন্য স্থাপত্যশৈলীর বাবরী মসজিদ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। শুধু যে ধর্মান্ধরাই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী ধ্বংস করেছে তা নয়, কমিউনিস্ট চীনে ষাটের দশকে কালচারাল রেভলুশনের সময় অনেক পুরোনো বৌদ্ধ ও তাওইস্ট মন্দির ধ্বংস করে ফেলা হয়। প্রাচীন চীন সম্রাটদের সমাধি লুট করে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করে ফেলে সরকারি মদদ পুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রের দল। একই ঘটনা ঘটে কমিউনিস্ট খ্‌মের রুজ শাসিত কম্বোডিয়াতেও

যা হোক, ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে পুরাকীর্তি ধ্বংস করার যুক্তিখন্ডনের একটা চেষ্টা করলাম। এখন জবাব দিই আধুনিক টেকি বস্তুবাদী আত্মতুষ্ট জেনারেশনের প্রশ্নের। পুরাকীর্তির সাথে বর্তমান যুগের যোগাযোগ কোথায়। কেন তারা অমূল্য।

কম্প্লেসেন্ট বলে আমরা আজকের যুগের অনেক কিছুই মেনে নিই, ধরে নিই ‘গ্রান্টেড’। টাকা আছে, কেন টাকা আছে আড়াই হাজার বছর ধরে জানি না! সুতরাং বিটকয়েনে পয়সা ঢালি! টাকাকে নাকি সে প্রতিস্থাপন করবে। টাকা কেন এতদিন ধরে কি কি গুণের কারণে কি কি প্রয়োজন মেটায় তা আমরা জানি না। এগুলো জানতে হলে ইতিহাস-সমাজবিজ্ঞান পড়ে বোঝা যায়। কিন্তু কেউ কি কখনো চিন্তা করে দেখেছে কি ধরনের পরিস্থিতি প্রাচীন তুরস্কের ছোট্ট লিডিয়া রাজ্যে টাকার উৎপত্তি ঘটালো, অথচ তারও প্রাচীন যুগের আরো উন্নত সভ্যতা মিশরে টাকার প্রচলনই ছিল না?

মনে হতে পারে, এসব প্রশ্ন অবান্তর। কি হবে এসব জেনে! কিন্তু মানুষের মনস্তত্ত্ব কিন্তু হাজার বছরের বিবর্তনে খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি! আমরা দশ হাজার বছর আগে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতাম, এখনো করি। যেধরনের কুসংস্কার নিয়ে চলতাম, এখনো সেসব বেঁচে আছে আমাদের মধ্যে কোন না কোনভাবে। অর্থাৎ খুবই মৌলিক অনেক ব্যাপার আছে যেগুলি দশ হাজার বছর আগে যতটা সত্য ছিল আজও ততটা।



আরও পড়ুন বিজ্ঞাপনের পর...




দুনিয়ার সকল মানুষকে ভাবুন একটা বড় প্রাণী, তার বিভিন্ন কোষের মধ্যে নানারকম মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে তার বিবর্তন হয়। আমাদের পক্ষে সে প্রাণীটি কোনদিকে গেলে তার উদ্বর্তনটা সুনিশ্চিত হবে, তা বোঝার জন্যে অতীতের দিকেই দৃষ্টিক্ষেপণ একমাত্র রাস্তা। কেন হঠাৎ করে ময়েন্জোদারোর এত উন্নত সভ্যতা বিলুপ্ত হলো সে এক রহস্য। যদি তার সোজাসাপ্টা উত্তর বেরুত, তাহলে বোধহয় আমরা সামগ্রিক সার্ভাইভাল পাজলটার আরেকটা মিসিং পীস পেতাম। ইসলামে আদ্-সামুদের ধ্বংসাবশেষ দেখে যেসকল প্রকারের শিক্ষাগ্রহণের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে হয়ত এও একটা! যখন আদসামুদের মত গজব আবার আসবে তখন ধনীগরীব কেউই পরিত্রাণ পাবে না!

আর এসকল প্রাকটিক্যাল ব্যাপার-স্যাপারের উপরে আছে আর্ট — শিল্প! একটা সুন্দর নিখুঁত কারুকার্য দেখলে কার না মন জুড়ায়! ময়েন্জোদারোর বালাপরিহিত নর্তনরত কিশোরীর ছোট্ট একটা মূর্তির মধ্যে আমাদের অতি আদি এক পূর্বসূরীর যে মানবিক ছবি ফুঁটে উঠেছে, সামনাসামনি দেখলে মনে হয় এ যুগেরই কোন গ্রাম্য লাস্যময়ী বালিকা।

শুধু তাই নয়, ইরাকের এশনুন্নার জিগুরাতে পাওয়া ছোট ছোট নারী-পুরুষ-শিশুর স্ট্যাচুয়েটগুলি যেভাবে হাত জোড় করে চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, তাতে চিত্রিত হয়ছে তাদের অসহায়ত্ব। তাদের সহায় ঈশ্বরকেই স্মরণ করছে তারা। সেদেশে দুই নদী ছিল বেয়ারা, মিশরের নীলনদের মত নিয়মিত দু’তীর প্লাবিত করত না। মাঝেমধ্যে খরা হত, তখন আকাল। আবার ভয়াবহ বন্যাও হত, তাতেও জীবন ও সম্পদের ক্ষয়। সেকারণে তাদের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি আর ধর্মীয় দর্শন ছিল অদৃষ্টবাদী বা ফেটালিস্ট। নূহনবীর বজরা আর মহাপ্লাবনের কাহিনীও মূলে সেদেশের।



আরও পড়ুন বিজ্ঞাপনের পর...




সোজা কথায় আমরা আজ যা যা বিশ্বাস করি, যেসব মূল্যবোধকে উচ্চাসন দিই, আমাদের পূর্বপুরুষরা কিভাবে কেন সেসবে উপনীত হলেন, কি ধরনের পরিস্থিতি তাদেরকে সেসবের দিকে চালিত করল — এসকল কিছুর উত্তর আছে পুরাকীর্তি আর প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের গবেষণার মধ্যে। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন সেসবকে ধ্বংস করে আমাদের পুরনো পরিচয়কে ধামাচাপা দিয়ে জোর করে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করতে, আমরা পারব না! কারণ সেসকল প্রাচীনতা আমাদের মনস্তত্ত্বের মধ্যে, জাতিগত স্মৃতির মধ্যে মজ্জাগতভাবে প্রথিত!

বামিয়ানের বড় বুদ্ধমূর্তি — তালিবানদের ধ্বংস করার আগে ও পরে। ষষ্ঠ শতকে তৈরি এবং হিউয়েস ৎসাং এগুলির বিবরণ দিয়ে গেছেন। আদি মুসলিমদের আমলে টিকে থাকলেও আওরাংজেব প্রভৃতি ফ্যানাটিক শাসক এগুলি ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালান।
গান্ধার শিল্পের এক অনন্য উদাহরণ লাহোর জাদুঘরে সংরক্ষিত উপবাসরত বুদ্ধের এই মূর্তিটি। সম্ভবত চতুর্থ বা পঞ্চম শতকে তৈরি। বুদ্ধের বোধিপ্রাপ্তির আগে তিনি শ্রমণদের সাথে সংযমসাধনা করতেন, সম্ভবত এটা সে সময়ের প্রতিকৃতি। তাঁর দেহ কংকালসার, চক্ষু কোটরাগত; কিন্তু মুখে স্মিতহাসি আর অসাধারণ এক ঔজ্জ্বল্য। গ্রীক শিল্পীরা ছিলেন রিয়েলিস্টিক, কোন ভারতীয় শিল্পী বুদ্ধকে এ ভাবে কল্পনা করার আইডিয়াও পেত না!
পালমিরার দেবতা বা’লের মন্দির ২০১৫তে আইসিস ধ্বংস করে ফেলে। ৩২ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ মন্দিরটি খ্রীষ্টান রোমান সম্রাটদের পাগানদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় শুদ্ধি অভিযানের সময় বন্ধ করে দেয়া হয়, কিন্তু নানা সাম্রাজ্যের উত্থানপতন সত্ত্বেও টিকে রয়েছিল আইসিস পর্যন্ত।
জার্মানীর ফ্রাংকফুর্টের লীবীগহৌস জাদুঘরে সংরক্ষিত পালমিরিন আর্টের নিদর্শন। ১৫০-২০০ খ্রীষ্টাব্দের লাইমস্টোনে খোদাই করা সমাহিত ব্যক্তির প্রতিকৃতি। মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি, হাতে পশুবলির রক্ত ধরার পাত্র। শিল্পটির শৈলী আদতে গ্রীক হলেও সাবজেক্ট স্পষ্টতই সেমিটিক (হিব্রু বা আরব) কালচারের মানুষ।
পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের সিদি ইয়াহিয়া আল আন্দালুসি ছিলেন সাংকারে মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অধ্যক্ষ। তাঁর নামে পরিচিত সিদি ইয়াহিয়া মসজিদটি স্থাপিত হয় ১৪৪০ সালে। তিমবাক্তু সেসময় জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চার জন্যে সুপরিচিত ছিল — বর্তমানের আফ্রিকার মত নয়। মসজিদের বিশাল কাঠের দরজায় খোদাই করা ডিজাইন ছিল, মাগরেবী রীতির শৈলীতে। আনসারদ্বীন ২০১২তে অন্যান্য পুরাকীর্তির সাথে বর্তমান যুগের মালির মুসলিমদের তীর্থস্থান এ মসজিদটির দরজা ভেঙ্গে ইট তুলে বন্ধ করে দেয়।
মাদাইন সালেহ বা সালেহ নবীর শহরে এরকম ১৩১টি পাথর কুঁদে তৈরি সমাধি আছে। এগুলি প্রথম খ্রীষ্টাব্দে আল-আনবাত বা নাবাতিয়ান গোত্রের আরবদের তৈরি। কোরানে এদের সামুদ নামে উল্লেখ আছে। জর্দানের পেত্রা শহরের পাহাড় কেটে তৈরি সমাধিগুলিও নাবাতিয়ানদের তৈরি।
স্যান্ডস্টোন খোদাই করে তৈরি এ মূর্তিটি খ্রীষ্টপূর্ব ৩য়-৪র্থ শতকে লিহিয়ানবাসীদের তৈরি। এই সাম্রাজ্য উত্তরপশ্চিম আরব উপদ্বীপে, মদিনা-তাইমা ইত্যাদি শহরসহ বর্তমান লেবানন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আরব বা সেমিটিক তুতো ভাই নাবাতিয়ানদের সাথে এদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় সম্ভবত বাণিজ্যপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে, এবং পরে মাদাইন সালেহসহ বিভিন্ন জায়গায় লাহিয়ানীদের জায়গায় শাসনভার তুলে নেয় নাবাতিয়ানরা। এই মূর্তিটি কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে সংরক্ষিত। অন্যান্য পুরাকীর্তির সাথে মাঝেমধ্যে বাইরের জাদুঘরেও লোনে যায়।
৬৩০-৬২০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের লিডীয় মুদ্রা। ইলেক্ট্রাম নামে সংকরধাতুর তৈরি। সিংহ লিডীয় সংস্কৃতিতে রাজকীয় কর্তৃত্বের প্রতীক। তার মাথার ওপর উজ্জ্বল সূর্য। লিডিয়ার রাজা এসময় ছিলেন সাডিয়াটিস, তাঁর পৌত্র ক্রীসাসের নাম গ্রীক-লাতিন হয়ে ইংরেজীতে এসেছে একটি প্রবচনের মাধ্যমে — রিচ অ্যাজ় ক্রীসাস বলতে খুব ধনবান কাউকে বুঝানো হয়। লিডিয়ার রাজধানী সার্ডিস ভূবনবিখ্যাত ছিল তার সৌন্দর্যের জন্য।
ব্রোঞ্জের তৈরি এই নর্তনরত কিশোরীর মূর্তিটি এখন নয়াদিল্লী জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। ২৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদারো নগরে আবিষ্কৃত নিদর্শন এটি। মোটে ৪ইঞ্চি এই মূর্তির মধ্যে দৃপ্ত অঙ্গভঙ্গি যেরকম প্রাকৃতিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তার কারণে এটি সুপরিচিত শিল্পকর্ম। তার চুলের খোঁপা করার স্টাইল, হাতভর্তি বালা — এগুলি জানান দেয় যে ভারতীয় উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় সিন্ধুসভ্যতার সময়ে এখনকার থেকে খুব বেশি আলাদা ছিল না। আরো উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সেসময় সব সভ্যতা ব্রোঞ্জের কাজ জানত না, কিন্তু এরা পারত, এবং ভালই পারত। ১৭০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের দিকে মহেঞ্জোদারো-হরপ্পার মত শহরগুলোর অবক্ষয় শুরু হয়। প্রত্নত্ত্ববিদরা গৃহযুদ্ধ আর যক্ষ্মার মত রোগের প্রমাণ পেয়েছেন। নগরগুলির অবক্ষয়ের সাথে সাথে নাগরিকরা ধীরে ধীরে গ্রামে চলে যায়, তাই সিন্ধুসভ্যতার আচারব্যবহার ইত্যাদির অবশেষ বেঁচে গেছে গ্রাম্য সংস্কৃতির মধ্যে। অনেক ইতিহাসবিদের ধারণা বৈদিক ধর্মের মধ্যেও সিন্ধুসভ্যতার প্রভাব রয়েছে।
এশনুন্না প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার একটি নগররাষ্ট্র। সেখানকার দেবতা আবুর মন্দির বা জিগুরাতের ধ্বংসাবশেষে এই প্রার্থনাকারীদের মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। ২৯০০ থেকে ২৫৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে লাইমস্টোন খোদাই করে তৈরি এগুলো। আসলে প্রার্থনাকারীরা উপাসনা থেকে দৈনন্দিন কাজে ফিরে যাবার আগে দেবমূর্তির সামনে নিজেদের প্রার্থনারত ছোট ছোট মূর্তি স্থাপন করে যেতেন, যেন দেবতা তুষ্ট থাকেন তারা সশরীরে সামনে না থাকলেও। প্রার্থনার ভঙ্গি, পোশাকআশাকের ডিটেইল, পিগমেন্টে রং করা বড় বড় চোখ — সবকিছু প্রাকৃতিক। পোশাক আশাক বর্তমানের হলে বোধহয় আধুনিক চার্চে খ্রীষ্টান প্রার্থনাকারী বলে চালিয়ে দেয়া যেত!



আরও পড়ুন বিজ্ঞাপনের পর...




মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!