ট্রেইল অফ টিয়ারস

Featured Video Play Icon
আমেরিকা অভিবাসীদের দেশ। ইউরোপীয়রা জনসংখ্যার ৭২ শতাংশ, আফ্রিকান-বংশোদ্ভূত ১২ শতাংশ, ভারতীয়-চীনা ইত্যাদি সকল এশিয়ান ৫ শতাংশ। কিন্তু অনেকেই ভুলে যায় আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের অস্তিত্ব, যারা এখন জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম, দোআঁসলা মিলিয়ে মাত্র ৫০ লাখের মত। তাই আজকে এদের ওপর একটু আলোকপাত করতে চাই।

আমেরিকান ইন্ডিয়ান বা নেটিভ আমেরিকান নাম দিয়ে আমরা যাদের সবাইকে এক বাক্সে বন্দী করি, তাদের কিন্তু প্রায় ৫০০টি স্বতন্ত্র ট্রাইব আর তারা ৯টি আলাদা পরিবারের ৩০০টি ভাষায় কথা বলে। এদের ধর্মীয় বিশ্বাস আর সামাজিক রীতিনীতিও সেরকম বৈচিত্রময়। অ্যারিজ়োনার হোপিরা মাতৃতান্ত্রিক, ওকলাহোমার ওসেজরা পুরুষশাসিত। মিডওয়েস্টের প্রেইরি ইন্ডিয়ানরা ঐতিহ্যগতভাবে যাযাবর শিকারী গোত্র, আবার নিউমেক্সিকো-অ্যারিজ়োনার আনাসাজ়ি-পুয়েবলোরা কৃষিপ্রধান নগরসভ্যতা গড়ে তুলেছিল।

এ সকল জাতেরই পিতৃপুরুষ পূর্ব এশিয়া বা সাইবেরিয়ায় বাস করত। ত্রিশ হাজার বছর আগে — বরফযুগের শেষে — তারা শিকার তাড়া করতে করতে বরফাবৃত বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে আলাস্কায় ঢুকে পড়ে। বরফ গলে যাবার পরে প্রশান্ত মহাসাগরের অকূল পাথার তাদেরকে এশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তারপর কয়েক হাজার বছরের মধ্যে তারা দক্ষিণ আমেরিকা আর ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। অন্যান্য বিশ্বসভ্যতা, বাণিজ্যপথ, আর সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান থেকে আলাদা হয়ে পড়ায় ১৪৯২এ ক্রিস্টোফার কলাম্বাস তাদেরকে পান প্রস্তরযুগীয়, বড়জোর ব্রোঞ্জ প্রযুক্তির পর্যায়ে। এমনকি চাকার ব্যবহারটা পর্যন্ত কেউ জানত না!

দক্ষিণে আজ়তেক, মায়া, ইন্কারা যখন পাথর কেঁটে অতিকায় পিরামিড বানাতে ব্যস্ত, তখন উত্তরের নেটিভ আমেরিকান ট্রাইবগুলি অতটা অগ্রসর ছিল না। তারপরেও তাদের সমৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায় ইলিনয়ের ক্যাহোকিয়া, কলোরাডোর মেসা ভের্দে, আর নিউমেক্সিকোর টাওসচাকোর ধ্বংসাবশেষগুলোর মাঝে। স্প্যানিশ দিগ্বিজয়ীরা ষোড়শ শতকে মেক্সিকোতে লোকমুখে শুনেছিল উত্তরের সাতটি স্বর্ণমণ্ডিত নগরীর কথা। সেগুলো খুঁজে বের করতে তারা অভিযানও পাঠিয়েছিল। কিন্তু ততদিনে এ সকল জনপদ ক্ষয়িষ্ণু।

১৬২১এর হেমন্তে মেফ্লাওয়ার জাহাজে আগত ইংরেজ সেটলার আর তাদের পড়শি ওয়াম্পানোগ ট্রাইব নবান্নের খাবার একসাথে ভাগাভাগি করে খায়। থ্যাংকসগিভিং ঐতিহ্যের সূত্রপাত এখানেই। কথিত আছে ১৬১৪ সালে ভার্জিনিয়ার জেমসটাউনে জন স্মিথ বলে এক ইংরেজ সেটলারের প্রেমে পড়ে স্থানীয় ইন্ডিয়ান চীফের মেয়ে পোকাহোন্তাস। আমেরিকার ইতিহাসে নাকি সেই প্রথম ইন্টাররেশিয়াল বিয়ে। তাদের প্রেমকাহিনী নিয়েই অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘পোকাহোন্তাস’ তৈরি করে ডিজ়নি।

অন্যদিকে ইউরোপীয়রা বাজে যে জিনিসটা নিয়ে এসেছিল আমেরিকায়, তা হলো গুটিবসন্তের জীবাণু। পুরনো পৃথিবীর এ রোগের সাথে অপরিচিত নেটিভদের ইম্যুন সিস্টেম এর বিরুদ্ধে ছিল অকার্যকরী। ফলে মহামারিতে বিপুলসংখ্যক ইন্ডিয়ান মারা যায়।

আমেরিকার গোড়াপত্তনের পরে নেটিভ আমেরিকানদের সম্বন্ধে মার্কিন প্রতিষ্ঠাতাদের ধারণা ছিল ভাল-খারাপ মিশ্রিত। তাদের হিসাবে নেটিভরা জংলী জাত হলেও নৈতিক মূল্যবোধ টনটনে, আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব তাদেরকে সভ্যতা শেখানো। (ব্যতিক্রমঃ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন।)  এ কারণে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক ট্রাইব, যেমন চেরোকিরা, তাদের আদিভাষা, পোশাক-আষাক, কৃষ্টি ছেড়ে আমেরিকান হতে শুরু করে।

তারপরও যখনই নেটিভদের জমিজমার উপর ইউরোপীয়দের দৃষ্টি পড়েছে, তখনই তারা প্রশাসনের সাথে যোগসাজশ করে তাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করেছে। চেরোকিদের এলাকায় স্বর্ণ আবিষ্কৃত হলে বাইবেলের এক্সোডাসের ইহুদীদের মত তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বাচ্চা-কাচ্চা, বুড়ো-বুড়িদের নিয়ে শ’ শ’ মাইল পায়ে দলে চেরোকিদের চলে যেতে হয়েছিল পশ্চিমের ইন্ডিয়ান টেরিটোরিতে। যাত্রাপথে খাদ্যাভাবে, ঠান্ডায় মৃত্যুবরণ করেছিল অনেকে। তার উপরে ভিন্নগোষ্ঠীর নেটিভরাও তাদের উপরে আক্রমণ করে। যারা আদিনিবাস ছাড়তে অরাজি ছিল, তাদের সাথেও ইউরোপীয়দের যুদ্ধ লেগে যায়। ১৮৩০এর দশকের এসব ঘটনা ইতিহাসে পরিচিত ‘ট্রেইল অফ টিয়ারস’ হিসাবে।

গৃহযুদ্ধের পরে শিল্পবিপ্লবের সস্তা প্রডাক্ট মদ্যপানীয় আর আগ্নেয়াস্ত্রও নেটিভদের হাতে আসা শুরু করে। সাদাদের বিরুদ্ধে তো ইন্ডিয়ানরা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করেই, একে অন্যের বিরুদ্ধেও অপ্রতুল গোচারণভূমি নিয়ে ঝগড়াঝাটিতে লেগে থাকে তারা। ফলে যুদ্ধে, নেশায়-বিষণ্ণতায়, অনাহারে-অপুষ্টিতে নেটিভ আমেরিকান জনসংখ্যা আরো কমতে থাকে।

১৮৯০এ এক মার্কিন সেনাদল সাউথ ডাকোটার উন্ডেড নী ক্রীকের কাছে লাকোটা ইন্ডিয়ানদের একটা গ্রুপকে  তাদের নির্ধারিত রিজ়ারভেশনে এসকর্ট করে নিয়ে যাচ্ছিল। সেসময় ভুল বুঝাবুঝি থেকে ঝগড়ার সুত্রপাত হয় আর সৈন্যরা গুলি করে প্রায় তিনশ’ লাকোটাকে মেরে ফেলে। তাদের মধ্যে নারী-শিশু মৃতের সংখ্যা ছিল ২০০। উন্ডেড নী এখন মার্কিন ইতিহাসে সবচে’ রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ড হিসাবে স্বীকৃত।

এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া শুরু করে ১৯২৪ সালে। সে বছর আমেরিকার সকল আদিবাসীকে জাতিগোষ্ঠীনির্বিশেষে মার্কিন নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার দেয়া হয়। ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত চার্লস কার্টিস ১৯২৯এ রিপাবলিকান পার্টির টিকেটে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট রোজ়ভেল্টের আমলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে প্রচুর নেটিভ আমেরিকান জওয়ান সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছায় নাম লিখিয়েছিল। সেনাজীবনকে নেটিভরা সেসময়ে সম্মানজনক হিসাবে দেখতো। ২০০২এর উইন্ড-টকারস মুভিটাতে দেখতে পারবেন নাভ়াহো ট্রাইবের নেটিভরা কিভাবে মার্কিন সেনাবাহিনীকে গোপন সাংকেতিক ভাষায় যোগাযোগ করতে সাহায্য করেছিল।

আজ অধিকাংশ নেটিভ আমেরিকান শহুরে, কিছু থাকে রিজ়ারভেশনে। রিজ়ারভেশনগুলি স্বায়ত্ত্বশাসিত, তাদের ক্ষেত্রে স্টেটের আইন খাঁটে না। তার সুযোগ নিয়ে কিছু রিজ়ারভেশন জুয়া আর টাকা ধারের ব্যবসা বসিয়ে টাকাপয়সা বানিয়ে ফেলছে। সবসময় সেগুলি যে সৎ ব্যবসা তা নয়। নিউমেক্সিকো-অ্যারিজ়োনার কিছু নেটিভ জীবিকানির্বাহ করে চিত্তাকর্ষক স্যুভনির হস্তশিল্প বানিয়ে। আবার মন্টানা-ডাকোটার অনেক রিজ়ারভেশন আছে, যারা সরকারী অনুদানের উপর নির্ভরশীল। তাদের ভালো স্কুল-কলেজ নেই, বেকারত্ব-মাদকাসক্তির হার অতিরিক্ত।

২০০৯এ ওবামা সরকার নেটিভ আমেরিকানদের ওপর অতীতের দুর্ব্যবহারের জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এখন অনেক নেটিভ আমেরিকান সম্প্রদায় নতুন প্রজন্মকে তাদের আদিভাষা-সংস্কৃতি শিখানোর ব্যাপারে সচেতন। ওকলাহোমার চেরোকিদের অঞ্চলে গেলে ইংরেজির পাশাপাশি তাদের ভাষারও রোডসাইন দেখা যায়। মতপ্রকাশ আর সংস্কৃতিচর্চার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বাসস্থান আর খাদ্যসংস্থানের নিরাপত্তার জন্যে এখনও অনেক সম্প্রদায়কে সংগ্রাম করতে হয়।

নেটিভ আমেরিকান বংশোদ্ভূত একজনকে আমি চিনি। ইউএস আর্মিতে বহুদিন থাকার পরে সফ্টওয়্যার সেক্টরে চাকরি করে সফল হয়, আর্লি রিটায়ার করে। সে অবশ্য ব্যতিক্রম। নেটিভ আমেরিকানদের মোটে ১৫% স্নাতক ডিগ্রিধারী। তবে বেকারত্বের হার সাদাদের তুলনায় একটু বেশি হলেও এখন আগের তুলনায় বেশি নেটিভ সার্ভিস সেক্টরের পেশায় আসে। কিছু বছর আগেও তারা ট্রাডিশনাল সমাজব্যবস্থা আর জীবনযাত্রা ছেড়ে চাকরীতে খুব একটা আসতো না।

ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক দিয়ে নেটিভ আমেরিকানদের মধ্যে খ্রীষ্টান যেমন আছে, সেরকম স্থানীয় একেশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারীও আছে। পেয়োটে বলে এই ধর্মে ওয়াখান থানকা, অর্থাৎ ‘মহান আত্মা’, নামে এক নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনা করা হয়। প্রকৃতির জীব-জড় সবকিছু ওয়াখান থানকার আত্মার ধারক, তাই বুনো গাছপালা আর জানোয়ারদের সংরক্ষণ করা পেয়োটে অনুসারীদের ধর্মীয় কর্তব্য। নেটিভ আমেরিকানদের নাচ-গানও মূলত প্রাকৃতিক শক্তি আর পূর্বপুরুষদের আত্মার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। তাদের প্রসিদ্ধ নাচগুলি হল গোস্ট ডান্সরেইন ডান্সসান ডান্স, প্রভৃতি।

মা’ক্ চি বলে এই গানটির ভাষা অধুনাবিলুপ্ত টুটেলো-সাপোনি। মোহক-বংশোদ্ভূত রোবি রবার্টসন কানাডার মূলধারার স্বনামধন্য শিল্পী। আর মার্কিন ইউলালি ব্যান্ডটার সদস্যরাও ইন্ডিয়ান ঐতিহ্যের। নেটিভ আমেরিকানদের পূর্বপুরুষরা গানটির বিষয়বস্তু। উত্তরপ্রজন্মকে সাহস যোগাতে তাদের আত্মা ফিরে ফিরে আসে, যেন নিজস্ব সংস্কৃতি আর মূল্যবোধে তারা অটল থাকে, যেন তারা ভুলে না যায় আত্মপরিচয় আর স্বজাতির শিকড়।

সুবর্ণদ্বীপের বানরনৃত্য

Featured Video Play Icon
জাকার্তা, সুকার্নো, ইয়োগইয়াকার্তা, সুহার্তো, জাভা, সুমাত্রা, গারুডা, মালয়, সিঙ্গাপুর — মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার এই নামগুলির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। আজ বলবো কি কারণে এই নামগুলো যথাক্রমে আসলে জয়কর্তা, সুকর্ণ, যোগ্যকর্তা, সু-অর্থ, যব, সমুদ্র, গরুড়, মলয়, সিংহপুর ইত্যাদি থেকে এসেছে।

লেখার সাথের ভিডিওতে দেখতে পাচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী ‘কেচা’ নামক অনুষ্ঠান। অপার্থিব এই দৃশ্যটি নেয়া হয়েছে ‘বারাকা’ বলে ১৯৯২এ তৈরি তথ্যচিত্র থেকে। এটা ধারণ করা হয়েছে বালির গুনুং কাউয়ি বলে একাদশ শতাব্দীর এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের মাঝে।

বালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ট্যুরিস্টদের কাছে যেমন জনপ্রিয়, ঠিক ততটা মনকাড়া তাদের শিল্প-সংস্কৃতি — যার মধ্যে আছে ছায়ানাট্য, লেগংবারং নৃত্য, আর রামায়ণের নাট্যাভিনয়। রাবণের রাক্ষসবাহিনী বনাম হনুমানের বানরবাহিনীর যুদ্ধের প্রতীকী রি-এন্যাক্টমেন্ট এই কেচা  নামক ‘বানরনৃত্য’।

অংশগ্রহণকারীদের কানে গোঁজা জবাকুসুম — যেটা বাংলায় দুর্গাপূজায় ব্যবহৃত হয়। দৃশ্যটির গোঁড়ার দিকে দেখা যাচ্ছে বালির উলুওয়াতু মন্দিরের নিকটবর্তী অরণ্যের শাখামৃগদের, তারা সেখানকার পবিত্র রক্ষক। আর দেখানো হয়েছে জাভার বোরোবুদুর বৌদ্ধবিহার আর কম্বোডিয়ার আংকোর ভাটের বিষ্ণুমন্দিরের স্থাপত্য ও অলংকরণ। সেগুলি ভারতবর্ষের মন্দির-মসজিদগুলোর থেকে কোন অংশে কম নয়!

রামায়ণ আর হিন্দুধর্ম বালিসহ সারা ইন্দোনেশিয়াতে এসেছে প্রাচীন ভারতবর্ষ থেকে। ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ প্রায় দু’হাজার বছরের পুরনো।

ভিয়েতনামের ফুনানচম্পা, কম্বোডিয়ার চেনলাখ্মের, থাইল্যান্ডের দ্বারাবতী, মালয়েশিয়ার গঙ্গানগরলংকাসুকা, ইন্দোনেশিয়ার মজাপহিতশ্রীবিজয়াশৈলেন্দ্র, মায়ানমারের পাগান — অতীতের এ সকল রাজ্য সবাই কোন না কোনভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা করেছে। এদের অধিকাংশের নামই সে ইতিহাসের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষ্য।

বিশেষ করে ভারতের দুটো অঞ্চল পূর্বদিকে হিন্দু-বৌদ্ধধর্ম, সংস্কৃত-পালি ভাষা, নাগরীলিপি, স্থাপত্যশৈলী, আর পরবর্তীতে ইসলাম, ইত্যাদির বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। সে দুটো কোরোমান্ডেল উপকূল আর বঙ্গ। নালন্দার বৌদ্ধবিহারে ৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে খচিত শিলালিপি থেকে আমরা জানতে পারি ‘সুবর্ণদ্বীপের’ — অর্থাৎ সুমাত্রার — শ্রীবিজয়া রাজ্যের শৈলেন্দ্রবংশীয় মহারাজা বলপুত্র কর্তৃক একটি মঠস্থাপনের জন্যে অনুদানের কথা। আর আমাদের বিক্রমপুরের বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে ধর্মপ্রচারে যাবার আগে সুবর্ণদ্বীপেই  শ্রীবিজয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় অধ্যয়ন করেন।

কি উপায়ে ভারতীয় সংস্কৃতি প্রথম পূর্ব এশিয়াতে এসে পৌঁচেছে, তার বিস্তারিত কোথাও লিপিবদ্ধ নেই। ধারণা করা যেতে পারে বাণিজ্যের খাতিরে শ’ শ’ বছর ধরে ধীরে ধীরে এখানকার স্থানীয় রাজ-রাজড়ারা — সাথে তাদের প্রজারা — ভারতবর্ষের বিজ্ঞান-শিল্পকলা-ধর্মচিন্তার ঐশ্বর্য দেখে তাতে আকৃষ্ট হয়। দক্ষিণ ভারতের তেলেগু পল্লব বংশের রাজারাও বিশেষ ভূমিকা পালন করে সমুদ্রের অপরপারে নতুন রাজ্য আর রাজবংশ স্থাপনে। এ ছিল কমবেশি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া।

ভারতীয় দখলদারিত্ব আর ঔপনিবেশিক শোষণের ইতিহাসও অবশ্য একটা সময়ে পাওয়া যায়। সেটা হলো একাদশ শতাব্দীতে তামিল চোলবংশের আগ্রাসনে শ্রীবিজয়া সাম্রাজ্যের পরাজয়, যাদের স্থান পরে পূরণ করে ত্রয়োদশ শতকের মজাপহিত বলে জবদ্বীপের — অর্থাৎ জাভার — আরেকটি রাজবংশ।

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমদের ঠিকানাও এ এলাকায় প্রাচীনতা থেকে পাওয়া যায়। সপ্তম-অষ্টম শতক থেকে তাদের বাণিজ্যপ্রধান সমুদ্রতীরবর্তী বন্দর-নগরগুলি ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হতে শুরু করে। সুফী ধর্মপ্রচারকরা দ্বীপগুলির আরো গভীরাঞ্চলে ইসলামের বাণী নিয়ে যায়। তার উপরে ভারতে মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার পরে তাদের বনেদী বংশগুলির সাথে আত্মীয়তা করার জন্যে ইন্দোনেশিয়ার রাজারাও ধর্মান্তরিত হওয়া শুরু করে। তাছাড়াও আরবীর পরিবর্তে মালয় ভাষাতে ইসলামী পান্ডুলিপির প্রাচুর্য ছিল। এসব কারণে শীঘ্রই পুরো ইন্দোনেশিয়ার আশি শতাংশ মানুষ মুসলিম হয়ে যায়।

সেই ধারার ব্যতিক্রম শুধু বালি । বহুদিন ধরে তারা জাভা-সুমাত্রার মুসলিম রাজ্যগুলি থেকে স্বাধীন ছিল। আলাদা দ্বীপ হওয়ায় ধর্মপ্রচারকরাও সহজে সেখানে যেতে পারেনি। সেকারণে তারা আদিধর্ম বজিয়ে রেখেছে। তাদের রাজ্যগুলিকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে দখলে নেয় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি হল্যান্ড। বালিনিজ়দের উপর তাদের অত্যাচার দেখে বাকি ইউরোপীয় জাত তাদেরকে ছি-ছি করেছিল। সে কারণে তিরিশের দশকে অনেকটা ক্ষতিপূরণস্বরূপ ডাচরা বালির শিল্পসংস্কৃতিকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া শুরু করে। কেচা-নৃত্যের উদ্ভব সে সময়।

এদের হিন্দুধর্মও ভারতের থেকে অনেক স্বতন্ত্র। পুরনো অ্যানিমিস্ট বিশ্বাসের মূল খুঁজতে বেশিদূর যাওয়া লাগে না। যেমন, কেচা আসলে সাংহিয়াং বলে বালির এক ভূততাড়ানি অনুষ্ঠানের আধুনিক রূপ। বৌদ্ধধর্মও পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়নি। মজাপহিত রাজবংশের সময় শিব আর বুদ্ধ দু’য়েরই উপাসনা চলত একই মন্দিরে, এ ছিল তাদের অভাবনীয় ধর্মীয় সংস্কার আর সহনশীলতার প্রমাণ। ইসলামের বিস্তারের পরেও আগের অনেক আচারব্যবস্থা সুফী চিন্তার প্রভাবে রিডিফাইন-রিপারপাজ় হয়েছে। যেমন সুরো বলে নববর্ষের অনুষ্ঠান যুগ যুগ ধরে মুসলিম সমাজে জনপ্রিয়তাসহকারে পালিত হয়ে আসছে।

অবশ্য ১৯৯৮ সালে সুহার্তোর পতনের সময় থেকে মুসলিম-খ্রীষ্টান, মালয়-চীনা দাঙ্গা এখন নিত্যনৈমিত্তিক। নাইন-ইলেভেনের মত ভূরাজনৈতিক কারণে স্থানীয় কট্টরপন্থীদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা গিয়ে ইন্দোনেশীয়দের হাজার বছরের ধর্মীয় সহনশীলতা বিপন্ন। বালির হিন্দু জনগোষ্ঠী তাও বেঁচে গেছে দেশের কদর বাড়ানো আর ট্যুরিস্টদের টাকা উপার্জনের সামর্থের কারণে। সেটা কতদিন টেকে সেটা দেখবার বিষয়। অন্তত যতদিন ওয়াহহাবি মতবাদের সরকারগুলির অর্থায়ন থাকবে, ততদিন তাদের ভয় থেকেই যাবে।

মাৎসুরি

Featured Video Play Icon

জাপানের পরব মাৎসুরি বাংলাদেশের মেলার মতই উৎসবমুখর, রঙ্গীন। আর তাতে তাল-সুর দিয়েছে আমাদের ঢাকের মত তাইকো ড্রাম।

ছোটবেলায় গ্রাম্যমেলা রচনা লিখতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। ঢাকার উত্তরায় থাকতে আব্বা কাছের গ্রামেই বৈশাখী মেলায় নিয়ে যেতেন। চড়কীতে চড়া, বাতাসা খাওয়া, ইত্যাদির মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ছিল।

এখন মার্কিনী প্রবাসজীবনে যাই কাউন্টি আর স্টেট ফেয়ারে। সে অভিজ্ঞতা বস্তুত অন্যরকম, কিন্তু ভাবে একইরকম! দূর-দূরান্তের ফার্ম থেকে গরু-ছাগল-ঘোড়া-ভেড়া চলে এসেছে, সাথে ট্রাক্টর-প্লাউ-ওয়্যাগন ইত্যাদিও হাজির। বাচ্চারা চরম মজা পায় সেগুলিতে চড়ে। টার্কি লেগ খাই যত অখাদ্যই হোক। একেক স্টেটের ফেয়ারের ভাবগতিকও তাদের ইতিহাস-সংস্কৃতিমত একেকরকম।

তবে আজকে লিখছি জাপানী মেলা নিয়ে!

জাপানে গ্রাম্য মেলা এখন আর গ্রাম্য নেই। মাৎসুরি নামে পরিচিত এসব অনুষ্ঠান এখন সাধারণত শহরের মূল রাস্তা ধরেই হয়। প্রত্যেকটা পার্বণের পিছনে কোন শিন্তো বা বৌদ্ধধর্মীয় উপাসনার উপলক্ষ্য আছে। কোথাও কোথাও ধর্মীয় উপলক্ষ্য ছাড়াও হয়। একেক এলাকায় অনুষ্ঠান হয় বছরের বিভিন্ন নির্ধারিত সময়ে। বিশেষ করে পৌষপার্বণ বা নবান্নের সময়ে অনেক অঞ্চলেই এ অনুষ্ঠান হয়। হানামি বা চেরি ব্লসম ফেস্টিভাল তো এখন বিশ্বের যেখানেই চেরি হয়, সেখানেই ছড়িয়ে গেছে! বু্দ্ধের জন্মোৎসবও পালিত হয় হানামাৎসুরির মাধ্যমে।

সেই মেলাতে কখনো কখনো জাপানীরা আমাদের দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা বা শিয়া সম্প্রদায়ের তাজ়িয়ার মত পাল্কিতে করে তাদের আঞ্চলিক কামি বা ‘দৈবশক্তির আধার প্রতিমাকে’ নিয়ে মন্দিরে স্থাপন করে। এমন একই জিনিস সামনাসামনি দেখেছি ঢাকার ইস্কন রথযাত্রায়, সেটার আরেকটু অরিজিন্যাল দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দিরে। কৃষ্ণের প্রতিমা বাৎসরিক বাপের-বাড়ি-শ্বশুরবাড়ি যাওয়া-আসা করে। ক্যাথলিকদের প্যাশন প্লে-ও অনেকটা একই।

মাৎসুরি মেলার দোকানপাটে বড়রা তাকোইয়াকি বলে সীফুড স্ন্যাক খায়, ছোটরা গোল্ডফিশ ধরার খেলা খেলে। চীনের লায়ন ড্যান্স বা ড্রাগন ড্যান্সের মত কাগজের তৈরি নেবুতা ফ্লোট নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পোশাকপরিহিত জাপানীরা শোভাযাত্রা করে। হানেতো বলে লম্ফজম্ফের বিশারদ হাতে পাখা নিয়ে তাদের সামনে নাচতে নাচতে যায়।

আর সে উৎসবের প্রাণ ঢাক জিনিসটা বঙ্গীয়-জাপানী দুই কালচারে এক্কেবারে কমন!

বাংলাদেশে কমপক্ষে বিশ রকমের পারকাশন ইন্স্ট্রুমেন্ট আছে। পাখোয়াজ-তবলা তুলনামূলক অধুনার আবিষ্কার, আরবী-ফারসীদের রপ্তানী। জাপানী বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন যে, তাইকো নামের কয়েকরকম ঢাক প্রাচীনকালে — ষষ্ঠ শতকে — ভারত থেকে বৌদ্ধধর্মের সাথে সাথে সিল্ক রোডের মারফত চীন-কোরিয়া হয়ে আমদানি হয়। বহু বৌদ্ধ সংস্কৃত পান্ডুলিপিও সে পথে পাচার হয়েছে, সাথে সংস্কৃত কিছু প্রপার নাউনও জাপানীতে ঢুকে পড়েছে। যেমন ধ্যান হয়ে গেছে জ়েন, অমিতাভ বুদ্ধ থেকে আমিদা

যে ট্র্যাকটা দিলাম লেখার সাথে, সেটা পরিবেশন করছে কোদো বলে একটা বিশ্বখ্যাত তাইকো ড্রামারদল। সাদো বলে একটা ছোট দ্বীপে তাদের বাস। বাঁশি, করতাল, জয়ঢাক আর দুন্দুভির মত বাদ্যযন্ত্রের সাথে নাচানাচি করে তারা মাৎসুরির চমৎকার একটা আবহ তৈরি করেছে। সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে শোনা ঢাকের তালও মনে করিয়ে দেয় এদের ঢাকের আওয়াজ। শব্দধারণটাও খেয়াল করবেন! ভাল হেডফোনে বা থ্রিডি সাররাউন্ড সিস্টেমে ফুল ভল্যুমে শুনলে আপনার মনে হবে লাইভ শুনছেন।

আর এ লাইভে শোনারই বস্তু! আমি প্রথম তাইকো শুনি বোধহয় ২০০৩এ, ঢাকার শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে ওয়াদাইকো ইয়ামাতো দলটির পরিবেশনায়। সে এক না-ভোলা অভিজ্ঞতা! গগনবিদারী ড্রামের শব্দের ভাইব্রেশনটা আপনার হৃদয়ের গভীর ছুঁয়ে ফেলবে! মুস্তাফা জামান আব্বাসী বোধহয় তখন ডিরেক্টর আর উপস্থাপক ছিলেন, আমাদের দেশের ঢাকঢোলের সমান্তরালটা দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে ভুলেননি!

১৯৬৪র টোকিও অলিম্পিকে তাইকোর রিদম শোনার পরে পশ্চিমা বিশ্বও এই ঐতিহ্যকে জাতিনির্বিশেষে আপন করে নিয়েছে। খোদ আমেরিকাতেই মনে হয় এখন আটশ’র বেশি তাইকো ক্লাব। গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি আর শারীরিক ব্যায়ামের মজায় অনেকেই এসবে অংশ নেয়। জাপানের ইলেক্ট্রনিক মিউজ়িকের কম্পোজ়ার কিতারোও তাঁর কয়েকটি ট্র্যাকে তাইকো ড্রাম ব্যবহার করেছেন, মাৎসুরি নামে তাঁরও একটা কম্পোজ়িশন আছে।

এখন পপ কালচারে তাইকো জায়গা করে নিলেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এর ব্যবহারের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় দ্বাদশ শতকের সামুরাই-সামন্ততান্ত্রিক কামাকুরা পিরিয়ড থেকে। জাপানের অন্যান্য স্বকীয় সংস্কৃতিরও উদ্ভব এসময়ে। তখন সমগ্র জাপান সম্রাটের শাসনে নামমাত্র থাকলেও সামন্তরা ছিল নিজেদের এলাকায় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। বিভিন্ন সামন্ত রাজ্য নিজেদের মধ্যে সামুরাই বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করত। তখন যুদ্ধসঙ্গীতে তাইকোর স্থান ছিল। তারপর নো বা কাবুকি নাটকের উদ্ভবের পরে তার আবহসংগীত তৈরিতে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের সাথে তাইকোও শামিল হয়।

পুরনো আমলে ঢাকঢোল পেটানোতে ছেলেদের একচেটিয়া মনোপোলি থাকলেও এখন কিন্তু জাপানে মেয়ে তাইকোবাদকের সংখ্যা ছেলেদের থেকে বেশি! জাপানের ট্র্যাডিশনাল সমাজে আরো অনেক কিছুর সাথে এখানেও একটা সমতা চলে এসেছে। টকিং অ্যাবাউট দ্যাট!… বাংলাদেশী মেয়েদের জন্যে ঢাকঢোল পেটানোর অনুপ্রেরণা রইলো!

শুভ নববর্ষ ১৪২৫

শুভ বাংলা নববর্ষ!

পহেলা বৈশাখ যারা মনে করেন ‘হিন্দুয়ানি অপসংস্কৃতি’, আশা করি তাদের জন্যে এই পোস্টটি কিছুটা শিক্ষামূলক হবে।

অনেকে বলেন রাজা শশাংকের সময়ে, সপ্তম শতকে, নাকি বঙ্গাব্দের যাত্রা শুরু। তা হতে পারে, কিন্তু সনাতনী হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে সে সময়কার সব ভারতীয় রাজত্বের হিসাবই ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, সম্ভবত আলাদা করে বঙ্গাব্দ ব্যাপারটা ছিল না। এই অব্দের প্রচলনের মূল তাই অনেকে ধরেন আমাদের দেশের হিন্দু রাজ-রাজড়াদের ইতিহাসে প্রথিত।

কিন্তু সেটা প্রমাণ করা কষ্টসাপেক্ষ, আর রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।

যেটুকু আমরা প্রমাণসহ বলতে পারি, সেটা হলো সম্রাট আকবরের সময় যখন দেখা গেল আরবী চান্দ্র হিজরী সন ধরে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল প্রজাদের কর আদায় করা কঠিন (কারণ তাতে ঋতু ওলটপালট হয়ে যায়), তখন সম্রাটের নির্দেশে পুরনো মাসগুলি রেখেই সৌর সন তৈরি করা হয়। তাতে কৃষকদের সুবিধা হয় সময়মত কর দিতে, আর বাংলা সেসময় ভারতের অন্যতম কৃষিপ্রধান অঞ্চল ছিল।

অনেকে বলেন মঙ্গল শোভাযাত্রা এসব হিন্দু ঐতিহ্য। পুরোপুরি সত্য নয়, এর সাথে জড়িত বাংলার নবাব মুর্শিদকুলী খানের সময় প্রচলন করা রাজপুন্যাহের পহেলা বৈশাখের ‘করপ্রদানযাত্রা’। সকল প্রজারা তাদের যা যা বাৎসরিক কর দেয়ার মত আছে, তাই নিয়ে রাজা বা রাজকীয় প্রতিনিধির কাছে যেত, এরই জাতিস্মৃতি আমি মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যে দেখতে পাই। এখনো চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলে এরকম রাজপুন্যাহ উৎসব হয়।

রাজপ্রতিনিধিরাও এসময় প্রজাদের আদর করে দু’বেলা আপ্যায়ন করতেন। এই আপ্যায়নের ঐতিহ্যটা মুর্শিদকুলী খান করতেন ইসলামী বা আরবী ঐতিহ্যের অতিথিপরায়ণতার খাতিরেই। এর জাতিস্মৃতি আমাদের রমনার বটমূল আর পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মাঝে।

হিন্দুধর্মাবলম্বীরা অনেকে ধর্মীয়ভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন, কিন্তু সেটা পরে এসেছে, কারণ যারা বণিক, তারা নতুন হালখাতা খুলতেন লক্ষ্মী-গণেশের আশীর্বাদ নিয়ে। অর্থাৎ নতুন বছরটা আগে এসেছে, পরে তার ধর্মীয় যোগাযোগ।

যারা চৈত্রসংক্রান্তির সাথে পহেলা বৈশাখকে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন, তাদের জন্যে বলি যে এটা চৈত্রের শেষ দিনে পালন করা হলেও, এর সাথে স্প্রিঙ ইকুইনক্স বলে বহু প্রাচীনকাল থেকে পালিত আরেক পরব জড়িত। সেটার আসল তারিখ মার্চের ২০ হলেও সেটা কিভাবে চৈত্রের শেষে চলে আসল সে এক ঐতিহাসিক গবেষণার বিষয়।

আরো বলি যে এখনকার ইরান, যেটা কিনা ইসলামী গণপ্রজাতন্ত্র, তাদের নববর্ষ বা নওরোজ পালন হয় ঠিকঠাক মার্চের ২০ তারিখ। অর্থাৎ খাস চৈত্রসংক্রান্তিতে। এ তাদের প্রাক-ইসলামী ঐতিহ্য, কিন্তু কেউ সেটার ‘বিধর্মী’ শিকড় ঘাঁটাতে যায় না।

আপনার নববর্ষ আনন্দময় আর প্রাচুর্যপূর্ণ হোক!

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!