প্রস্তরযুগের মানুষের বিবর্তনের কথা বলেছি এর আগে। সেসাথে আগুনের আবিষ্কারের ফলাফল। আগুনের পরপরই সম্ভবত ধাতুকার্যের কাকতালীয় আবিষ্কার।
প্রস্তরযুগ আর তাম্রযুগের মাঝের যুগটাকে বলে ক্যালকোলিথিক। এসময় তামা মেশানো পাথর বা আকরিক দিয়ে অস্ত্র আর যন্ত্রপাতি বানানো হত। হয়ত এরকম কোন আকরিক পাথর আগুনের কুন্ডলীতে ফেলার পর সেটা গলে পরিশুদ্ধ ধাতু হয়ে বেরোয়। ক্যাম্পফায়ারের তাপমাত্রা খুব বেশি নয়, হয়ত কোন বিশেষ ধরনের চুলোর মধ্যে অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে এই আকস্মিক আবিষ্কারটি হয়।
আবিষ্কারটি প্রথম যারা করেছিল, তারা ওয়াকিবহাল ছিল এর তাৎপর্য সম্পর্কে। ধাতু পাথরের থেকে কয়েক গুণ বেশি শক্ত আর গলিত অবস্থায় বিভিন্ন আকার দেয়া যে যায় তাকে, তারা সেটা বুঝতে পেরেছিল। সে কারণে যে খনি থেকে তামার আকরিক পেয়েছে, সেখানে তারা ফিরে গেছে আরো সংগ্রহের জন্যে। তারপর আরো গবেষণা করে জ্ঞানটাকে মোটামুটি পাকাপোক্ত করেছে।
আর এরা জ্ঞানটা গোপন রেখেছে অন্যান্যদের কাছ থেকে। ইন ফ্যাক্ট, এই প্রাচীন কামারদের কাছে এটা বিজ্ঞান নয়, প্রকৃত অর্থেই জাদুবিদ্যা ছিল। কারণ কখনো কখনো ঠিক তাপমাত্রায় চুল্লী গরম রাখতে না পারলে পুরো কাজটা যেত ভেস্তে। তাই মন্ত্রপাঠ আর দেবপূর্বপুরুষদের পূজোর দরকার হয়ে পড়ত বৈকি। আবার কখনো পশু কিংবা নরবলিরও!
এই যে তামা কিংবা তামার সাথে টিন মিশিয়ে আরো শক্ত ব্রোঞ্জ তৈরির প্রণালী, এর আবিষ্কার কমপক্ষে আট হাজার বছর আগে। ওয়েলসের ক্লানদুদনোতে ৪,০০০ বছরের পুরনো বিশাল এক তামার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখান থেকে উত্তোলিত তামা পুরো মধ্যোপসাগরে রপ্তানি হত। অর্থাৎ ইতিমধ্যে ধাতুর খনন কুটিরশিল্প থেকে বৃহদশিল্পে পরিণত হয়েছে। এরকম আরেকটা জায়গা বর্তমান সাইপ্রাস, যার নামের মধ্যেই রয়েছে ‘কপার’ (গ্রীকে ক্যুপ্রোস, তুর্কীতে কিবরিস)। প্রাচীন মিশর-তুরস্ক-গ্রীসের ব্রোঞ্জশিল্পের তামার আদি উৎস এই সাইপ্রাস।
ওয়েলসের ক্লানদুদনোর গ্রেট ওর্ম কপার মাইনস। ৪,০০০ বছর আগে এখানে খনিতে কাজ শুরু হয়। ম্যালাকাইট নামের আকরিক উত্তোলনের পন্থা ছিল পশুর হাড় আর পাথরের হাতুড়ি দিয়ে খনির দেয়াতে ক্রমাগত ঘা মারা।সাইপ্রাসের স্কুরিওতিসার তামার খনি বিশ্বের প্রাচীনতম। ৪,০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকে এখনও পর্যন্ত এখানে তামা উত্তোলন চলছে।
ব্রোঞ্জের আবিষ্কারের পরে কর্মকারদের সৃজনশীলতা তুঙ্গে ওঠে। খোদার ওপর খোদকারি করে নানা জন্তু-জানোয়ার, মানুষ, বস্তু, এমনকি দেবদেবীর নিখুঁত মূর্তি পর্যন্ত তারা বানিয়ে ফেলতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে এ বিদ্যা জাদুটোনার থেকে কম কিছু ছিল না। শিকারী কিংবা কৃষকের কাছে খনির গভীর অন্ধকারে ঢুকে পাথর খোঁড়া ছিল রহস্যময় একটা ব্যাপার। সে ‘পাথর’ যে চুল্লীতে ঢুকে নতুন সৃষ্টি হয়ে বেরিয়ে আসছে, এটাও অলৌকিক শক্তির লক্ষণ। শয়তান বা অশুভ আত্মাকে যদি কেউ নাকানি-চুবানি দিতে পারে, তো সে এই ধূর্ত কামারই। ‘কর্মকার’ মানেও আসলে ‘স্রষ্টা’।
ব্রোঞ্জ আমলের কামারদের অবশ্য অনেক পেশাগত ঝুঁকি ছিল। তামা-টিনের খনিতে মিশ্রিত থাকে বিষাক্ত আর্সেনিক ও সীসা। এ বিষের সংস্পর্শে এসে শারীরিক ও মানসিক বৈকল্য দেখা দিত তাদের। এ কারণেই হেফেস্টাস ল্যাংচা, পাগলা, বেঁটে। হয়ত আয়রিশ লোককথায় ডয়ার্ভস কিংবা বামনদের সাথে খনি ও ধাতুবিদ্যার রহস্য জড়িত এ কারণেই।
১৫৫০-১৫০০ খ্রীষ্টপূর্বে সোনার তৈরি মাস্ক অফ আগামেমনন। ট্রয়ের আবিষ্কর্তা হাইনরিষ শ্লীমান মাইসেনির ধ্বংসাবশেষে এটি খুঁজে পান। তিনি ভেবেছিলেন ইলিয়াডের আগামেমননের সমাধি খুঁজে পেয়েছেন। ব্রোঞ্জ যুগের অসাধারণ ধাতবশিল্পের প্রমাণ এটি।
ব্রোঞ্জের পর লৌহযুগের শুরু হয় প্রায় ২,২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। এ ছিল আরেক অসম্ভব ব্যাপার। সাধারণ ক্যাম্পফায়ারে ৪০০ ডিগ্রিরই বেশি তাপমাত্রা ওঠে না, আর লোহার গলনাংক ১,৪০০-১,৫০০ ডিগ্রি। অর্থাৎ লোহা গলানোর জন্যে দরকার হয়ে পড়ে বিশেষ ধরনের চুল্লি। তাছাড়া কাঠকয়লারও দরকার পড়ে আকরিককে পরিশুদ্ধ করার জন্যে। কখনো কখনো পশুর হাড়গোড়ও চুল্লিতে ফেলত কামাররা, এতে অর্গানিক কার্বন মিশে লোহাকে আরেকটু মজবুত করত। স্টীলের রহস্য ঠিক তাই। সাধারণ মানুষ অবশ্য এর উসিলায় গুজব রটাত যে কামাররা চুল্লীতে নরবলি দেয়। সত্যমিথ্যা বলা মুশকিল।
ইতিহাসের সবচে পুরনো লোহার তৈরি অস্ত্র পাওয়া গেছে তুরস্কের প্রাক-হিট্টাইট হাট্টিয়ান কালচারে। এ অসম্ভব না যে, এদের উত্তরপূর্বের পন্টিক স্তেপের আদি ইন্দোইউরোপীয়রাই লোহা বিশুদ্ধকরণ প্রণালী প্রথম আবিষ্কার করে। মিশরে অবশ্য এর থেকেও পুরনো লোহার তৈরি ছুরি আবিষ্কৃত হয়েছে, তুতানখামুনের সমাধিতে। কিন্তু সেটা পৃথিবীর লোহা নয়, উল্কার লোহা! অর্থাৎ তার বিশুদ্ধিকরণের তেমন কোন প্রয়োজন ছিল না। মোটামুটি একটা উচ্চ তাপমাত্রায় নিয়ে পিটলেই হলো।
১৪০০ খ্রীষ্টপূর্বে ডেনমার্কে ব্রোঞ্জের তৈরি এই সূর্যরথ। সূর্যদেবতাকে প্রতি ভোরে ঘোড়ায় টানা এ রথ টেনে তোলে। ঋগ্বেদসহ সকল ইন্দো-ইউরোপীয় মিথে প্রায় একই মোটিফের ছড়াছড়ি।৩৭০০-৩০০০ খ্রীষ্টপূর্বে ককেশাসে মাইকপ কালচারের মানুষ ব্রোঞ্জ দিয়ে এই ষাঁড়টি বানায়। পন্টিক স্তেপের ইন্দোইউরোপীয়দের সরাসরি দক্ষিণের পড়শী ছিল এরা। দু জাতের মধ্যে প্রযুক্তি আদানপ্রদান হওয়ারই কথা।২৩০০-২০০০ খ্রীষ্টপূর্বের আনাতোলিয়ার হাট্টিয়ান কালচারের মানুষ ব্রোঞ্জে তৈরি করেছে এই জোড়া ষাঁড়।১৭০০-৫০০ খ্রীষ্টপূর্বে ডেনমার্কে তৈরি হয়েছিল ব্রোঞ্জের এই শিরোস্ত্রাণ।
লৌহযুগের আগমনের সাথে সাথে অস্ত্রশস্ত্র বানানোতে একটা বিপ্লব শুরু হয়ে যায়। ভাল কামাররা তরবারি তৈরির প্রক্রিয়াকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যায়। এসব ‘অলৌকিক’ তরবারিকে নাম দিলে তার জাদুশক্তি আরো কয়েকগুণ বাড়ত। সেই থেকে আর্থারের এক্সক্যালিবার, রোলাঁর দ্যুরন্দাল, শার্লমেনের জোয়াইওজ, সিগুর্দের গ্রাম, বেওউল্ফের হ্রুনটিং, আলীর জুলফিকার, ইত্যাদি।
এদের সাথে যোগ করতে পারি বর্তমান যুগের ‘রূপকথা’ লর্ড অফ দ্য রিংসের দুটো ধাতব জিনিস। ওয়ান রিং — যার মধ্যে রয়েছে সারা বিশ্বের ক্ষমতালাভের শক্তি। আর নারসিল, যে তরবারি দিয়ে সাউরনের হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ইসিলদুর। ভেঙে যাওয়া নারসিলের ধাতু গলিয়ে তৈরি হয় নতুন তরবারি আন্দুরিল। আর ধাতুবিদ্যায় শ্রেষ্ঠ গিমলির জাত ডয়ার্ফরা। তাদের আবাস পাহাড়ের গভীরের খনিশহরে।
তুতানখামুনের সমাধিতে পাওয়া মিটিওরিক আয়রনের তৈরি ছুরি, ১৩২৩ খ্রীষ্টপূর্ব, ব্রোঞ্জ যুগ চলছে তখনও।শার্লমেনের তরবারি লা জোয়াইয়োজ। লেজেন্ডারি এই তরবারি নাকি আরো আদি রাজা রোলাঁর দ্যুরন্দালের ধাতু গলিয়ে তৈরি। ফরাসী রাজাদের রাজ্যাভিষেকে দ্বাদশ শতক থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে।লর্ড অফ দ্য রিংসে ভেঙে যাওয়া তরবারি নারসিলের ধাতু গলিয়ে তৈরি এল্ফরা আরাগর্নের জন্যে তৈরি করে নতুন আরেক তরবারি আন্দুরিল।
যাক গে, রূপকথা থেকে বহু দূরে সরে এসেছি। কামার ও শয়তান রূপকথাটির একটা মোরাল বা নীতিকথা অবশ্য আছে। ফাউস্টের মত বিদ্বান ব্যক্তিরা, যারা কিনা কামারের উন্নত সংস্করণ, তারা নিজেদের আত্মা বিকিয়েছেন জাগতিক অলৌকিক ক্ষমতার বিনিময়ে। তারা বৈশ্বিক জ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়েছেন ঐশ্বরিক জ্ঞানের ওপরে।
কামারদের চরিত্রটাও অনেকটা সেরকম। খোদার ওপর খোদকারির ব্যাপারটা বলেছি। তাছাড়াও সোনা-রূপা ইত্যাদি ধাতুর জাগতিক মূল্যটাই খালি বুঝতে পারে কামার। এখানেই তার ট্র্যাজেডি। ধূর্ত শয়তানকে ঠকিয়ে ইহলোক সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে কাটিয়ে পরলোকে স্বর্গ-নরক কোথাও ঠাঁই হয় না জ্যাক ও’ল্যান্টার্নের। এ কারণেই প্রাচীন গল্পটা পরবর্তীকালের খ্রীষ্টান ধর্মের লেজেন্ডে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
আজকে অবশ্য আমরা এত কিছু গবেষণা করে বের করতে পারছি কামারের মতই প্রযুক্তির ম্যাজিক খাঁটিয়ে। তেহরানি তার গবেষণায় যে খান পঞ্চাশেক ভাষার আড়াইশ’ রূপকথার প্রব্যাবিলিস্টিক অ্যানালিসিস করেছেন, তা সম্ভব হয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের বদৌলতে। ঊনবিংশ শতকের গ্রিমভ্রাতৃদ্বয় জার্মানিতে, আর বিংশ শতকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাদেশে বছরের পর বছর গবেষণা করে যে সব ইন্দোইউরোপীয় রূপকথার কাহিনী একে অন্যের সাথে যুক্ত করেছেন, সে কাজটা কম্পিউটারের বদৌলতে এখন কয়েক সপ্তাহের না হলেও মাস দুয়েকের ব্যাপার। তাই বলতে পারি, জয় হোক কামারের হাতুড়ি-নেহাই-হাঁপর-চিমটের। আর প্রোগ্রামারের মাউস-কীবোর্ড-মনিটরের।
সত্যজিতের প্রফেসর শঙ্কুর রোমাঞ্চকর সব অভিযানের মধ্যে একটা ছিল একশৃঙ্গ অভিযান। তাতে শঙ্কু আর তাঁর সঙ্গীসাথীরা তিব্বতের দুর্গম এলাকায় গিয়ে সন্ধান পান অদ্ভূত এক স্থানের। সেখানে দুনিয়ার যাবতীয় রূপকথার প্রাণী আর বৃক্ষের আবাস — এদের মধ্যে একটা হচ্ছে ইউনিকর্ন, যার বাংলা সত্যজিৎ করেছেন একশৃঙ্গ।
এই গল্পটা আজ মনে পড়ল একটা খবর দেখে। বিজ্ঞানীরা পুরনো কিছু ফসিল পুনরায় নিরীক্ষণ করেছেন, যেগুলি এলাস্মোথেরিয়াম বলে এক অতিকায় গন্ডারজাতীয় প্রাণীর। গন্ডারের শিংয়ের থেকেও লম্বা একটিমাত্র শিং ছিল এই আদি স্তন্যপায়ী প্রাণীটির। কিছুদিন আগেও ধারণা করা হত যে এলাস্মোথেরিয়াম পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এক থেকে দু’লাখ বছর আগে।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন যে পশ্চিম রাশিয়া ও মধ্য এশিয়া থেকে সাইবেরিয়া ও উত্তর চীন পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় এলাস্মোথেরিয়াম বেঁচে ছিল ৩৬,০০০ বছর আগ পর্যন্ত। অর্থাৎ এলাস্মোথেরিয়াম সিবিরিকাম নামক এ প্রজাতিটির সাথে আদি হোমো স্যাপিয়েন্সের মোলাকাত অসম্ভব কিছু ছিল না। হয়ত কোন কোন দুর্গম এলাকায় আরো কয়েক হাজার বছর বেঁচে থাকলেও থাকতে পারে এই ইউনিকর্ন।
স্বভাবতই আমরা ভাবতে পারি এই এলাস্মোথেরিয়ামই রূপকথার ইউনিকর্ন কিনা। প্রাচীনকালের মানুষ হয়ত সে জানোয়ারকে নিয়েই বর্তমানের রূপকথা ফেঁদেছে। যদিও রূপকথার ইউনিকর্ন দেখতে ঘোড়ার মত, তার শিং প্যাঁচানো। আর এলাস্মোথেরিয়াম দেখতে গন্ডারের মত। তবে তাপির, গন্ডার আর ঘোড়া একই বর্গের খুরসহ প্রাণী — তাদেরকে বলে অড-টোড্ আঙ্গালেটস।
যদি ধরে নিই এলাস্মোথেরিয়ামই আদিকালের ইউনিকর্ন, তাহলে প্রস্তরযুগের মানুষ তার চিত্র ফ্রান্সের রুফিন্যাক গুহায় এঁকেছে ১৩,০০০ বছর আগে। আবার ২,৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে সিন্ধু সভ্যতারটেরাকোটা সীলেও পাওয়া গেছে এর মত এক ছবি। চীনা আর তুর্কী-মোঙ্গল মিথলজিতেও এরকম ঘোড়া আছে। আবার অনেক ক্লাসিক গ্রীক লেখক ইউনিকর্নের বর্ণনা দিয়েছেন তাঁদের বইয়ে। কিন্তু সন্দেহ নেই তাদের সে বিবরণ সেকেন্ড-হ্যান্ড, পূর্ববর্তী কোন মৌখিক গল্প শুনে তাতে আরো মনের মাধুরী মিশিয়ে মুখরোচক বানিয়েছেন একশৃঙ্গ ঘোটককে।
মধ্যযুগে আরব আলকেমিস্টরা ইউনিকর্নের শিংয়ের ভেষজ গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। আবার বাগদাদের খলিফা হারুন-অর-রশিদ নাকি ফ্রাংক সম্রাট ও প্রথম হোলি রোমান এম্পেরর শার্লমেইনকে ইউনিকর্নের শিং উপহার পাঠিয়েছিলেন, যেগুলো এখন ফ্রান্সের এক জাদুঘরে সংরক্ষিত। কিন্তু এগুলো আসলে নারহয়াল নামে এক শিংওয়ালা তিমির। এখনো চীনের হোমিওপ্যাথি মেডিসিনে গন্ডারের শিংয়ের ওষধি গুণ আছে বলে কুসংস্কার চালু আছে। যেকারণে আফ্রিকার প্রচুর দেশে পোচাররা বিলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক রাইনো মেরে তাদের শিং চীনা-অধ্যুষিত দেশগুলিতে মোটা দামে পাচার করেছে।
রূপকথার প্রাণী নিয়ে যে জীববিদ্যা তাকে বলে ক্রিপ্টোজুওলজি। যারা এতে আগ্রহ পান, তারা নানাভাবে অতীতের বিলুপ্ত প্রাণীর সাথে রূপকথার জীবের যোগাযোগ বের করেছেন। দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের থিওরিগুলি প্রমাণ করা সহজ কাজ নয়। মানুষের আদিমতম স্মৃতিগুলি সোজাসাপ্টা লিখিত ভাষায় কেউ বলে যায়নি। যদি থেকে থাকে তো তা মৌখিকভাবে বংশপরম্পরায় ‘ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো’ টাইপ ঘুমের গান অথবা ঠাকুরমার ঝুলির মত গল্পের মাধ্যমে কালে কালে অনেক ফিল্টার হয়ে আমাদের কাছে এসেছে।
কিন্তু রূপকথা নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তারা বলবেন যে পৃথিবীর নানা সংস্কৃতির রূপকথাগুলির মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রয়েছে। আমাদের দেশের ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভারতবর্ষের রূপকথার সাথে পূর্ব ইউরোপের রূপকথার যোগাযোগ নিয়ে কিছু গবেষণা করেছিলেন বলে মনে পড়ে। তাঁর আগ্রহ যোগানোর জন্যে বোধহয় তাঁর গুরু ময়মনসিংহগীতিকার সংকলক দীনেশচন্দ্র সেন কৃতিত্বের দাবিদার। দীনেশচন্দ্র ছিলেন ভারতীয় উপকথার পাইওনিয়ার, যদিও তিনি তুলনামূলক লোককথা নিয়ে শহীদুল্লাহর মত কাজ করেননি।
এখানে এটাও উল্লেখ না করে পারছি না যে, শহীদুল্লাহ ধর্মপরায়ণ মুসলিম ছিলেন, একই সাথে বৌদ্ধ চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা-অনুবাদ করেছেন, সংস্কৃত-তিব্বতীসহ বহু প্রাচীন ভারতীয় ভাষায় তাঁর দখল ছিল। পশ্চিমা শিক্ষাতে শিক্ষিত হয়েও আরবী-ফারসী থেকে অনেক সাহিত্যকর্ম বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন, যার মধ্যে রুবাইয়াতে ওমর খইয়াম রয়েছে। আজকের যুগে আমাদের তরুণপ্রজন্ম তাঁর নাম শুনেছে কিনা আমার সন্দেহ!
যাক গে, মূল কথায় ফিরে আসি। চীনের মিথে যেমন ড্রাগন আছে, তেমন ইউরোপেও আছে, আবার দক্ষিণ আমেরিকাতেও সর্পরূপী দেবতার উপাসনা করা হত। আমাদের রূপকথায় যেমন পঙ্খীরাজ, তেমন তুর্কী-মোঙ্গল-তিব্বতী রূপকথাতেও আছে উড়ন্ত ঘোড়া। তুর্কীদের পঙ্খীরাজের নাম আবার তুলপার। নর্সভাইকিংদের উপকথার ভালক্যুরিরা উড়ন্ত ঘোড়ার পিঠে চেপেই যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে আসত নিহত বীরদেরকে ভালহাল্লা স্বর্গে নিয়ে যেতে। গ্রীকদের পাখাওয়ালা ঘোড়ার নাম পেগাসাস।
সেরকম কেল্টিক রূপকথায় আছে ডয়ার্ফ–গবলিন, লর্ড অফ দ্য রিংসে দেখে বুঝেছেন যে ডয়ার্ফদের অবসেশন মাটি খুঁড়ে ধনরত্ন বের করা, কিন্তু তাদের মত কিপ্টে আর হয় না। সেরকম ভারতের রূপকথায় আছে যক্ষ আর যক্ষের ধন।
কোত্থেকে কি এসেছে সেটা বের করা কঠিন কাজ। তবে কিছু কমন থিম সব রূপকথায় আছে। যেমন জোসেফ ক্যাম্পবেল বলে এক উপকথাবিদ হিরো থিমটা নিয়ে গবেষণা করেছেন। হিরো থাকবে একজন গল্পে, তার ‘কামিং অফ এইজে’ বা পরিপক্বতার বয়েসে কোন কঠিন পরীক্ষা বা ফীট থাকবে। উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে গ্রীকদের ‘টুয়েল্ফ টাস্কস অফ হারকিউলিস’। জোসেফ ক্যাম্পবেল এসব কাহিনীকে ইন্টারপ্রেট করেছেন প্রাচীন মানুষের মনস্তত্ত্ব আর তাদের ম্যাজিকে বিশ্বাসের মাধ্যমে। এ থিমটা তাই সব কালচারেই কমন, কারণ সব মানবপ্রজাতির আদি মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন একইভাবে হয়েছিল, পরে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে সেসবে আরো স্থানীয় ডিটেইল যোগ হয়।
কিছু রূপকথাতে সেক্সুয়াল আন্ডারটোনও রয়েছে। যেমন বিউটি অ্যান্ড দ্য বীস্ট এবং আরো অনেক। আমি জানি না কোন নৃতত্ত্ববিদ এ প্রমাণ করতে পারবেন কিনা, যে সেসব কাহিনী প্রাচীনকালে যেসব আলাদা আলাদা মানবপ্রজাতি ছিল — যেমন নিয়ান্ডারটাল, হোমোসেপিয়েন্স, ডেনিসভ়ান, আরো একটি অজানা প্রজাতি — তাদের মধ্যে ইন্টারমিঙলিংয়ের অবচেতন স্মৃতি। তারা যে ইন্টারমিঙ্গল করেছিল তা এখন বিজ্ঞানীদের অজানা নেই, আফ্রিকার বাইরের মানুষের কমপক্ষে শতকরা পাঁচ ভাগ জীন নিয়ান্ডারটাল। বলা বাহুল্য নিয়ান্ডারটালদের চেহারা ছিল গাঁট্টাগোট্টা, অনেকটা লর্ড অফ দ্য রিংসের ডয়ার্ফরাজা গিমলির মত! আবার যদি ডেনিসোভানদের আরো পরিপূর্ণ ফসিল বেরোয়, আর তাতে যদি দেখা যায় তারা এল্ফদের মত, তাহলে তো উপকথাবিদ-নৃতত্ত্ববিদ দুয়েরই পোয়াবারো! এখানে আমি সত্যজিতের মত একটু অতিকল্পনার আশ্রয় নিলাম!
অনেক কাহিনীই আছে যেখানে কল্পনার আশ্রয় নেয়ার কোন দরকার নেই। নূহনবীর মহাপ্লাবনের কাহিনী ৩০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের সুমেরীয় গল্প থেকে এসেছে। সে কাহিনী পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়নি, কিন্তু তার অংশবিশেষের উল্লেখ আছে প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশের বীরত্বগাঁথার মধ্যে। আরব্যোপন্যাসের সিন্দবাদ যদি পড়ে থাকেন, তাহলে ২০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের প্রাচীন মিশরের টেইল অফ দ্য শিপরেকড সেইলর পড়ে মিলিয়ে দেখুন!
আরব্যোপন্যাসের আলিবাবা-চল্লিশ চোরের কাহিনী তো সত্য ঘটনা অবলম্বনে! ১৪৫৬ থেকে ১৪০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে হিব্রুদের পূর্বসূরী কানানাইট জাতির জোপা (বর্তমান জাফা) নগররাষ্ট্র ফারাও তৃতীয় থুতমোসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। প্রাচীন মিশরের নাপোলেওঁ হিসাবে পরিচিত থুতমোসে তাঁর জেনারেল জেহুতিকে পাঠান বিদ্রোহদমনে। জেহুতি জোপ্পার রাজকুমারকে শান্তিআলোচনার নামে নগরপ্রাচীরের বাইরে তাঁর ক্যাম্পে দাওয়াত দিয়ে পাঠান। তারপর চালাকি করে তাঁকে বন্দি করে ফেলেন। আর কয়েকশ’ সৈন্যকে বস্তায় ভোর ঘোড়াগাধার পিঠে চাপিয়ে এক রথীকে পাঠান নগরে। সেখানে গিয়ে রথী ঘোষণা করে যে জেহুতি রাজকুমারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন আর নগরবাসীকে শান্তির টোকেনস্বরূপ উপহার পাঠিয়েছেন। মাথামোটা কানানাইটরা যে দরজা খুলে দিয়েছিল বলা বাহুল্য! ট্রোজান হর্সের কাহিনীও একই রকম!
কথায় কথায় ইউনিকর্ন থেকে বহু দূরে চলে এসেছি। উপসংহারে এটুকুই বলতে চাই যে, মানবসভ্যতার রূপকথা-মিথ-ফেইরিটেল-লেজেন্ডের মধ্যে অনেক ভুলেযাওয়া স্মৃতি আছে যেগুলি মানুষ এখনো ফিরে ফিরে মনে করে, কারণ সেগুলি তার মানসের কাছে এখনও আকর্ষণীয়। কয়েক শতাব্দী পরে স্টার ওয়ারসেরল্যুক স্কাইওয়াকার হয়ে যাবে গিলগামেশ, লর্ড অফ দ্য রিংস হয়ে যাবে রামায়ণ বা ইলিয়াড। এগুলিতে যা রয়েছে, পূর্বসূরীদের মত তাদের একই রসদ! তখনকার মানুষ তাই খাবে, কারণ তার মনস্তত্ত্ব তখনও থাকবে আজকের মতই প্রাচীন।
১৮৭৮ সালে শিল্পীর কল্পনায় এলাস্মোথেরিয়াম চিত্রিত হয়েছিল এভাবে। ১৮০৮ সালে প্রাণীটির বিবরণ প্রথম প্রাণীবিদদের কাছে তুলে ধরেন মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরের পরিচালক য়োহান ভ়াল্ডহাইম।নেদারল্যান্ডের উট্রেখটের রাইকসমিউজিয়ামে সংরক্ষিত ‘ইউনিকর্নের শিং’।ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনায় ১৮৮৫ সালে, মৃত্যু ১৯৬৯এ ঢাকাতে। বহুভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ. করার পরে ফ্রান্সের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেন, তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল চর্যাপদের প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন ডায়ালেক্ট বা আঞ্চলিক ভাষার বিশ্লেষণ। তিনি ছিলেন অখন্ড ভারতবর্ষের মুসলিমদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেটধারী। দেশবিভাগের আগেই পূর্ববঙ্গের নতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ৫২র ভাষা আন্দোলনেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।কনরাড গেসনার নামক এক সুইস প্রকৃতিবিজ্ঞানী ১৫৫১ সালে তাঁর প্রকাশিত ইস্তোরিঈ আনিমালিয়ুম গ্রন্থে ইউনিকর্নকে কল্পনা করেছেন এভাবে।ফ্রান্সের রুফিন্যাক গুহায় পাওয়া ‘ইউনিকর্নের’ স্কেচ, ১০ থেকে ৫০,০০০ হাজার বছরের পুরনো।মহেঞ্জোদারোতে পাওয়া চার হাজার বছরের পুরনো ‘ইউনিকর্নের’ ছাপমারা সীল। এরকম বহু পাওয়া গেছে মহেঞ্জোদারো-হরপ্পাতে। অবশ্য পাশ থেকে দেখা জ়েবু নামক বৃহদাকার গবাদিপশুও হতে পারে।দীনেশচন্দ্র সেনের জন্ম ঢাকা জেলায়, ১৮৬৬ সালে; মৃত্যু ১৯৩৯এ কলকাতায়। ঢাকা কলেজ আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া স্কুলের (বর্তমানে কলেজ) প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মৈমনসিংহ গীতিকায় ২১টি গাঁথা সংকলন করেন, চন্দ্রকুমার দে’র সহযোগিতায়। ১৯২৩এ মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশের পরে দেশী-বিদেশী সাহিত্যবোদ্ধামহলে বেশ সাড়া পড়ে যায়। হিন্দু-মুসলিম দুই ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকেই এ গানগুলো সংগৃহীত। মৈমনসিংহ গীতিকার সাফল্যের পরে পূর্ববঙ্গগীতিকা বলে আরেকটি সংকলন ১৯২৬এ প্রকাশিত হয়। এতে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর পালাগানের নমুনা সংরক্ষিত হয়েছে।নারহয়াল তিমি, ঠান্ডা উত্তর সাগরে এর বাস। এর ‘শিং ’ আসলে তার লম্বা প্যাঁচানো একটি দাঁত।ব্ল্যাক রাইনো, সারা দুনিয়াতে পাঁচ হাজারেরও কম আছে এখন। পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তৃত অঞ্চলে নিরামিশাষী এই প্রাণীর আবাস ছিল।নিউ ইয়র্কের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত নিয়ানডারটালের কংকাল। দেড় লাখ বছর আগে আদি মানুষ হোমো ইরেক্টাসের একটি ধারা আফ্রিকা থেকে ইউরোপে আসে এবং বিবর্তিত হয় হোমো নিয়ান্ডারটালেন্সিসে। ইউরোপ থেকে মধ্য এশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় এরা টিকে ছিল ৪২,০০০ বছর আগ পর্যন্ত। ৪৫,০০০ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্স, যে কিনা আফ্রিকায় ইরেক্টাস থেকে আলাদাভাবে বিবর্তিত হয়, ইউরোপে এসে পৌঁছায়। অর্থাৎ তিন থেকে চার হাজার বছর মানুষের দুটো আলাদা জাত একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করেছে। সন্দেহ নেই যথেষ্ট মারামারি তারা করেছে খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদার জন্যে। তাদের মধ্যে যে ব্রীডিংও হয়েছিল সেটার প্রমাণও আমাদের জেনেটিক ম্যাপে পাওয়া গেছে।মোঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতীকে তাদের উপকথার উড়ন্ত অশ্ব তুলপারকে দেখানো হয়েছে এভাবে।সপ্তদশ শতাব্দীতে আঁকা তেয়্যেরিয়ানো-রেমেনসিস কোডেক্সে মধ্য আমেরিকার অ্যাজটেক সভ্যতার দেবতা কেৎসালকোয়াতলকে দেখানো হয়েছে পালকওয়ালা সর্প হিসাবে। মায়াদের কাছে একই দেব পরিচিত কুকুলকান হিসাবে। মেক্সিকোর বিখ্যাত তেওতিওয়াকানে এই সর্পদেবের উপাসনার প্রমাণ পাওয়া যায়, ২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৭০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত এই শহর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ফেদারড সারপেন্টের উপাসনা আরো আদিম ওলমেক সভ্যতাতেও ছিল, তাদের বয়স কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার বছর। পূর্ব এশীয় সভ্যতাগুলিতেও ড্রাগন একইরকম সম্মানের আসনে অধিষ্ট।ইংরেজ চিত্রশিল্পী অশ্বারোহী ভালক্যুরিদের কল্পনা করেছেন এভাবে। নর্স মিথোলজিতে আরেকটা উড়ন্ত ঘোড়া আছে যার নাম হোফৰার্পনির আর আরোহী বার্তাবাহক দেবী গ্না। দেবপিতা ওডিনের আটপেয়ে ঘোড়ার নাম স্লীপনির। কোরিয়ার প্রাচীন রাজাদের সমাধিতেও আটপেয়ে পাখাওয়ালা ঘোড়ার চিত্র পাওয়া গেছে।ল্যুভরে প্রদর্শিত অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের আমলে তৈরি বীর গিলগামেশের মূর্তি। গিলগামেশের কাহিনীতে তিনি অমরত্বের সন্ধানে গিয়ে হাজির হন দিলমুন বলে দূরের এক দেশে (বর্তমান বাহরাইন এলাকার সুমেরীয় নাম)। সেখানে উতনাপিশতিম বলে এক সাধুর কাছে আছে অমরত্বের গুপ্তরহস্যের উত্তর। এই উতনাপিশতিম নিজে অমর, দেবতাদের আশীর্বাদে। আর দেবতাদের নির্দেশে নূহনবীর মত বজরা বানিয়ে মহাপ্লাবন থেকে নিজ পরিবারকে রক্ষা করেন, সাথে বিভিন্ন প্রাণী। Link৭৮-৮০ খ্রীষ্টাব্দে রোমসম্রাট ডোমিশানের এই মুদ্রার এক পিঠে গ্রীক পুরাণের পেগাসাসের ছবি। হিরো বেলেরোফোন তাকে ধরে পোষ মানায়, তারপর তার সাহায্যে কাইমিরা নামক এক দানবকে হত্যা করে।সাইবেরিয়ার ডেনিসোভার গুহায় দুয়েকটা দাঁত আর অল্পকিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে বেশিদিন হয়নি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছেন যে, এগুলি নিয়ান্ডারটাল আর হোমোসেপিয়েন্স থেকে ভিন্ন আরেকটি মনুষ্যপ্রজাতির, যার নাম দেয়া হয়েছে ডেনিসোভান। এগুহায় অন্যান্য সময়ে নিয়ান্ডারটাল আর হোমোসেপিয়েন্সেরও বসতি ছিল। ১৫০,০০০ থেকে ৪৮,০০০ বছর আগ পর্যন্ত এই গুহায় ডেনিসভানদের বসবাস ছিল। নিয়ান্ডারটাল আর ডেনিসভান সংকর এক কিশোরীর হাড়ের অংশও এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে। মেলানেশিয়ান আর অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের ৩% থেকে ৫% জীন তারা পেয়েছে ডেনিসভানদের থেকে।This tale is the oldest known instance of a story of a castaway on a fabulous island, who returns home laden with riches. The Sinbad, the Sailor stories [1] from One Thousand and One Nights belong to the same tradition and share many of its characteristics. Linkমিশরের লুক্সরের কারনাক মন্দিরে খোদাই করা ফারাও থুতমোসের যুদ্ধংদেহী কায়া। তিনি একাধিক যুদ্ধবন্দীর চুল মুঠো করে ধরে মুগুর দিয়ে তাদের মাথা গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। একই সাথে লেখা আছে প্যালেস্টাইনের ১১৯টি শহরের নাম, আর লেবানন থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ২৪০টি শহরের নাম, যেগুলিকে তিনি মিশরের বশ্যতাস্বীকারে বাধ্য করেন। এ এলাকার লোকজন সবসময়ই সুযোগে থাকত কখন আশপাশের বড় বড় রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে নিজেদের সার্বভৌমত্ব জাহির করবে। কোন ফারাওয়ের মৃত্যুবরণের পরে যদি কমবয়েসী যুবরাজ সিংহাসনে আসীন হত, তখন তারা মোক্ষম সুযোগ ভেবে অন্য বড় সাম্রাজ্যের সহায়তায় বিদ্রোহ করে বসত।