মানচিত্রে ক্যারিবিয়ান সাগরের দিকে নজর দিলে যে তিনটি বড় দ্বীপ প্রথমেই চোখে পড়বে, সেগুলি হলো কিউবা, জামেইকা আর হিস্পানিওলা। শেষটি অনন্য, কারণ একটি দ্বীপের মধ্যে দুটি রাষ্ট্র — পূর্ব ৫/৮ অংশে ডমিনিকান রিপাবলিক, আর পশ্চিম ৩/৮ অংশে হাইতি।
হাইতি অনেক দিক থেকেই বাকিদের থেকে আলাদা। দুনিয়ার মানুষ তাকে চেনে ভুডু ম্যাজিকের আখড়া হিসাবে। তাছাড়াও এ অঞ্চলের অল্প যে কটি দেশে ফরাসী ভাষা চলে, হাইতি তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। দোআঁশলা ক্রেওল ভাষাও এখন সরকারী স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
হাইতির যাত্রা শুরুও ব্যতিক্রমী। চিনি উৎপাদক ফরাসী উপনিবেশে ক্রীতদাসদের অভ্যুত্থান থেকে তার অভ্যুদয় অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে। যুক্তরাষ্ট্রের পর পরই আমেরিকা মহাদেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনকারী রাষ্ট্র হাইতি।
হাইতির জনসংখ্যার অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের বংশধর আর একটা বড় অংশ দোআঁশলা মুলাটো জাত। মূল আমেরিকান অধিবাসী উপজাতিগুলি কলোম্বাসের পদার্পণের কয়েক দশকের মধ্যে মহামারী আর যুদ্ধের কবলে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
১৭৯১এ শুরু স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে এখন পর্যন্ত হাইতি প্রচুর উত্থানপতন দেখেছে। দেখেছে জনসংগ্রাম আর যুদ্ধের মুখে দুজন সম্রাট আর ডজনখানেক রাষ্ট্রপতির অপসারণ। পার্শ্ববর্তী দেশ ডমিনিকান রিপাবলিককে দখল করে রেখেছে কয়েক বছর। আর নিজে দখলীকৃত হয়েছে দু’বার।
ক্যারিবিয়ানের অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গপ্রধান দ্বীপরাষ্ট্রের সাথে তুলনা করলে আজকের হাইতি বিফল রাষ্ট্র বলা চলে। হাইতি যে উচ্চাভিলাষ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, তার থেকে ক্রমাগত দূরে সরে গেছে। পশ্চিম গোলার্ধের দরিদ্রতম দেশ হাইতি। এমনকি পর্যটনের আকর্ষণ প্রতিবেশী দেশ ডমিনিকান রিপাবলিকের মানুষের মাথাপিছু আয় হাইতির পাঁচ-ছয় গুণ — যদিও দেশ দুটি প্রায় একই ধরনের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে গেছে।
পঞ্চাশের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত পাপাডক-বেবিডকের পরিবারতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের পরবর্তী অরাজকতা আর ২০১০এ ৭ রিখটারের সর্বনাশা ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাথে বাংলাদেশী সেনাদলও হাইতিতে গিয়েছিল। সেখানকার অভিজ্ঞতা যে খুব একটা সুখপ্রদ নয়, এটা শান্তিরক্ষীদের অসামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে। শ্রীলংকা সরকার একটি ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেয়।
অর্থাৎ দেশটা এমন হয়ে গেছে যেখানে অমানবিকতা প্রতিদিনকার ব্যাপার। সেখানে বিদেশীরা বেশিদিন থাকলে তাদেরও অধঃপতন অবশ্যম্ভাবী।
কিভাবে হাইতি এমন অবস্থায় এসে পড়লো, তাই নিয়ে পাঁচখন্ডের এবারের সিরিজ।
প্রথম পর্ব: স্বাধীনতাসংগ্রাম, ১৭৯০-১৮১০
দ্বিতীয় পর্ব: রাষ্ট্রনির্মাণ, ১৮১০-১৮৬০
তৃতীয় পর্ব: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, ১৮৬০-১৯১০
চতুর্থ পর্ব: দখলদার মার্কিন, ১৯১০-৫০
পঞ্চম পর্ব: রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, ১৯৫০-
হিস্পানিওলা নামের যে দ্বীপটিতে হাইতি অবস্থিত, ১৪৯২ সালে আমেরিকা অভিযানের শেষভাগে কলোম্বাস সেখানে অবতরণ করেন। কলোনিস্থাপনের প্রথম কয়েক দশকে আদিবাসীরা স্প্যানিশদের সাথে সংঘর্ষে, মহামারীতে আর দাসত্বশৃংখলের কঠোর পরিশ্রমে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ধীরে ধীরে স্প্যানিশদের মনোযোগ মূল ভূখন্ডের দিকে যত বেশি নিবিষ্ট হয়, হিস্পানিওলার সান্তো দোমিংগো কলোনির গুরুত্ব তত কমতে থাকে। সপ্তদশ শতকের শেষ নাগাদ দ্বীপটির পশ্চিমাংশ থেকে স্প্যানিশরা সরে যায়, তার জায়গা নেয় ফরাসী-ইংরেজ জলদস্যুরা। এই জলদস্যুদের রাস্তা ধরেই ফ্রান্স পশ্চিম হিস্পানিওলার পূর্ণ দখল নেয় ১৬২৫ সালে।
নতুন নামকৃত স্যাঁ-দোম্যাঙ্গ উপনিবেশটি ফরাসীদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তিতে পরিণত হয়। ক্যারিবিয়ানের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে আখ, তামাক, কফি ইত্যাদি অর্থকরী শস্যের চাষাবাদ ও ফলন ভালই হয়। স্যাঁ-দোম্যাঙ্গের খামারে খাঁটুনির কাজের জন্যে হাজারে হাজারে আফ্রিকান ক্রীতদাস আনা শুরু হয়।
ফরাসীরা ক্রীতদাসদের অমানবিকভাবে খাঁটাত। অন্যান্য ইউরোপীয় উপনিবেশগুলিতে ক্রীতদাসরা কিছুটা হলেও মূল্য পেত। কিন্তু ফরাসী রাজতন্ত্রের সেকেলে নিয়মে ক্রীতদাসরা বলতে গেলে ছিল একটিবার ব্যবহারের পণ্য। ফলে প্রতি বছর স্যাঁ-দোম্যাঙ্গে হাজার হাজার জওয়ান ক্রীতদাস মৃত্যুবরণ করত। ১৭৯০ সাল নাগাদ সেখানে ছিল প্রায় পাঁচ লাখ দাস আর হাজার পঞ্চাশেক ফরাসী শ্বেতাঙ্গ খামার মালিক।
আরো একটি ‘বর্ণ’ ছিল, যাদের নাম মুলাটো বা মিশ্রজাত। আর ছিল অল্প কিছু মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ। এরা মূলত কারিগর, খেতশ্রমিকের তদারককারী, পুলিশ, পেয়াদা, ইত্যাদি অবকাঠামোভিত্তিক পেশায় জড়িত ছিল।
ফ্রান্সে ১৭৮৯ সালে রক্তক্ষয়ী বিপ্লব শুরু হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাজা-রাজড়া আর অভিজাত বংশগুলির শোষণের প্রতিবাদে জেগে ওঠে পেশাজীবী মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্র কৃষক। বাস্তিল দুর্গের পতন হয়। রাজা ষোড়শ লুইকে প্রথমে গদি ছাড়তে হয়, তারপর তার আর রাণী মারি অঁতোয়ানেতের গর্দান যায় গিলোটিনে। দশ বছরব্যাপী অন্তর্ঘাতে নিমজ্জিত হয়ে যায় ইউরোপের শক্তিশালী দেশটি।
এই অরাজকতার সুযোগ নিয়ে স্যাঁ-দোম্যাঙ্গের অবস্থাপন্ন মুলাটো ও মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ যারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, তারা আরো রাজনৈতিক অধিকার দাবি করে বসে। প্রথমে তাদের লক্ষ্য স্বাধীন দেশ কিংবা দাসপ্রথার উচ্ছেদ ছিল না। এমনকি এদের অনেকে কালে খামার মালিক বনেছে, দাসদেরও মনিব হয়েছে, তুলা-নীল-কফি রপ্তানী করে বেশ সম্পদশালী হয়েছে। কিন্তু রক্ষণশীল রাজতন্ত্রবাদী ফরাসী খামারমালিকদের প্রশাসন তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করলে, এরা হাত মেলায় সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের সাথে।
এই দাসরা কিন্তু আফ্রিকার আবাসভূমিতে ছিল সশস্ত্র যোদ্ধা! আফ্রিকার গৃহযুদ্ধগুলিতে পরাজিত হবার পর শত্রুরা এদেরকে বেচে দিয়েছিল ইউরোপীয়দের কাছে। এসকল কৃষ্ণাঙ্গ যোদ্ধাদের সাহায্যে একটা শক্তিশালী সামরিকতন্ত্র দাঁড়া হয়ে যায় স্যাঁ-দোম্যাঙ্গে।
স্যাঁ-দোম্যাঙ্গে ত্রিমুখী গোলমাল চলে ১৭৯১ থেকে ১৮০৪ পর্যন্ত। প্রথমে কৃষ্ণাঙ্গসংগ্রামের একক কোন নেতা ছিল না। বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন দল একেক প্রদেশে স্বাধীন শাসন কায়েম করে বসেছিল। ক্রমে এদের নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন তুস্যাঁ লুভেরত্যুর নামে এক মুক্ত মুলাটো। বাল্যকালে দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবার পর কোচচালক পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। তারপর শিক্ষিত হয়ে নিজেই খামার দেন, দাস পালেন। বিপ্লবের সময় বিদ্রোহী সেনাপ্রধান হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। স্বাধীন হাইতির প্রতিষ্ঠাতা ধরা হয় লুভেরত্যুরকেই।
১৭৯৪ সালে ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্রবাদীরা ক্ষমতাদখল করে ফরাসীশাসিত সকল দেশে দাসপ্রথা রদ করে দেয়। বিদ্রোহী লুভেরত্যুর তখন পক্ষপরিবর্তন করে ফরাসী সরকারের গভর্নর হিসাবে নামেমাত্র ফরাসীঅধীন কলোনিটির শাসনভার দখল করেন। প্রজাতন্ত্রবিরোধী খামার মালিকদের প্রতিরোধযুদ্ধ তখনও চলছিল। তাদের আহ্বানে ব্রিটিশ নৌবাহিনী পাঁচ বছর স্যাঁ-দোম্যাঙ্গের অধিকাংশ এলাকা দখল করে রাখে।
কিছু দাসপ্রথাবিরোধী শ্বেতাঙ্গ অবশ্য লুভেরত্যুরের সাথে যোগ দেয়। লুভেরত্যুর ছিলেন সাদা-কালোর মধ্যে আপোষকামী, তাঁর অধীনে শ্বেতাঙ্গ সেনাপ্রধান ও সচিবও ছিল। সাদা বন্দীদের সাথে ভাল আচরণের উদাহরণও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
কিন্তু ফরাসী বিপ্লবের লাগাম টেনে ধরেন নাপোলেওঁ বোনাপার্ত স্বয়ং। ফ্রান্সে ১৭৯৯ সালে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে প্রথমে কনসাল ও পরে সম্রাট পদবী গ্রহণ করেন তিনি। স্যাঁ-দোম্যাঙ্গকে পুনরায় কব্জা করার জন্যে এক বিশাল নৌবাহিনী পাঠানো হয় ক্যারিবিয়ান সাগরে। তাদের সেনাপ্রধান লক্লের্কের চালাকির শিকার হয়ে লুভেরত্যুর ফ্রান্সে বন্দী হিসাবে প্রেরিত হন, সেখানেই মৃত্যু হয় তার। তার সহযোদ্ধা জঁ-জাক দেসালিন ও অন্যান্যরা উপায়ান্তর না দেখে নাপোলেওনের পক্ষে যোগ দেন আর লড়াই চালান স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে।
অবশ্য নাপোলেওনের দাসপ্রথা পুনর্বহাল করার গোপন পরিকল্পনা যখন ফাঁস হয়ে যায়, তখন আবার দেসালিন পক্ষপরিবর্তন করেন। স্পেন ও ব্রিটেন থেকে আমদানি করা অস্ত্রের সাহায্যে কঠিন গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে ফরাসীদের ১৮০৩ সালে তাঁড়াতে সক্ষম হয় দেসালিনের সেনাদল। সে যুদ্ধের খরচ ওঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লুইজিয়ানা টেরিটোরির বিশাল ভূখন্ড বিক্রি করে দেয় ফ্রান্স।
দেসালিন ১৮০৪ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্যাঁ-দোম্যাঙ্গকে নতুন নাম দেন হাইতি। এ ছিল লোককথা অনুযায়ী দ্বীপটির জন্যে আমেরিকান আদিবাসীদের ব্যবহৃত নাম। দেসালিন লুভেরত্যুরের মত আপোষকামী ছিলেন না, তার আমলে হাজার হাজার শ্বেতাঙ্গ খামারমালিককে সপরিবারে হ্ত্যা করা হয়। গর্ব করে হাইতিকে ফরাসীদের সমাধি ডাকনাম দেন দেসালিন। কিছু শ্বেতাঙ্গ মিত্রের প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা অবশ্য দেয়া হয়।
স্বাধীন হাইতির গঠনতন্ত্রে দাসপ্রথা রহিত করার পাশাপাশি দেশের সকল নাগরিককে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ ঘোষণা করা হয়, যদিও কিছু পোলিশ শ্বেতাঙ্গ সেনা অফিসারকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। আরো যে ধারাটি লেখা হয়, সেটি হাইতিকে অনেক দিন ভোগাবে। সেধারা হলো, হাইতিতে বহির্দেশীয়, বিশেষত শ্বেতাঙ্গ কারো সম্পত্তির মালিকানা নিষিদ্ধ।
দাসপ্রথা রহিত করা হলে কি হবে, লুভেরত্যুর-দেসালিন দু’জনই পূর্ববর্তী খামার ব্যবস্থাকে অটুট রাখেন! তাদের হিসাবে বড় প্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে চিনি রপ্তানি করে অর্থনীতিকে সচল রাখতে না পারলে আবার হাইতির স্বাধীনতা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। আর বাকি বিশ্বকে দেখাতে হবে না, কৃষ্ণাঙ্গরা রাষ্ট্রপরিচালনায় কোন অংশে শ্বেতাঙ্গদের থেকে কম নয়?
ফলশ্রুতিতে, সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গরা ক্রীতদাস থেকে এবার পরিণত হলো ভূমিদাসে! খামার ছেড়ে অন্য কোথাও যাবার ও বসবাস করার অনুমতি এদের ছিল না। শহরে যেতে হলে তাদের লাগত পাসপোর্ট। খামার থেকে পালালে দেসালিনের পুলিশবাহিনী খুঁজে এনে আবার খামারে সোপর্দ করত। বলা বাহুল্য, খামারগুলোর মালিক তখন দেসালিনের সেনাবাহিনীর অফিসার আর সৈন্যের দল। আর যেসকল চাষী তাদের ক্ষুদ্র জমিতে স্বাধীনভাবে চাষাবাদ করত, তাদেরও যাতায়াতের স্বাধীনতা ছিল না। উৎপন্ন ফসলের এক-চতুর্থাংশ কর হিসাবে সরকারকে দিয়ে দিতে হত।
অন্যদিকে প্রজাদের উন্নয়নের জন্যে যে শিক্ষা আর অবকাঠামো যেকোন নতুন রাষ্ট্রের প্রয়োজন, তার দিকে কোন নজর দেসালিন দেননি। সাধারণ হাইতিয়ানদের জন্যে দরকার ছিল ভূমিসংস্কার আর বড় খামারগুলো ভেঙে ছোট স্বাবলম্বী চাষাবাদযোগ্য জমি তৈরি। সেসব না করার কারণে প্রাক্তন দাসরা লুভেরত্যুর আর দেসালিন দুজনের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করেছিল। এগুলি কঠোর হাতে দমন করেন দুজনেই।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয় হাইতি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলির সাথে প্রাইভেট সেক্টরে বাণিজ্য চললেও ফ্রান্স স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দেয়ায় পাশ্চাত্যের বাকি সরকারগুলিও একই পথ অবলম্বন করে। বিশেষ করে ‘অগ্রজ’ যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণে সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ে হাইতির শাসকগোষ্ঠী। ‘স্লেভ লেবারের’ ব্যবহারে উৎপন্ন চিনি-কফির রপ্তানির পয়সায় দেসালিন বিপুল অস্ত্রশস্ত্র কিনেন, আর স্থানে স্থানে দুর্গ তৈরি করা হয় ভবিষ্যত কোন এক যুদ্ধের প্রতিরক্ষার জন্যে।
এভাবে হাইতির সামরিকতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী আর প্রাক্তন দাস প্রজাদের মধ্যে একটা বিশাল দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। সাধারণ হাইতিয়ানরাও সন্দেহবাতিকে ভুগতে শুরু করে, যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সকে নিয়ে নয়। নিজের স্বাধীন জীবনাচরণ নিয়ে, আর তাতে ক্রমাগত স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের নাকগলানো নিয়ে।
দেসালিনের ইচ্ছে ছিল দুনিয়াবাসীকে দেখিয়ে দেবেন যে কৃষ্ণাঙ্গরা রাজনীতি-অর্থনীতি ও কর্মক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের থেকে কোন অংশেই কম নয়। কিন্তু তার এই তত্ত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে জনসাধারণের যে স্বাধীনতাটা বিসর্জন দিতে হলো, তাই হাইতির অরিজিনাল সিন। আর সেই পাপের ভার আরেক দফা বাড়ালেন দেসালিন নিজেই — হাইতির স্বাধীনতার নয় মাসের মাথায় নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করে!