রোজাভা

ইরাকী কুর্দিস্তান যেমন মার্কিন কোয়ালিশনের যুদ্ধের কারণে উপকৃত হয়েছে, তেমনি আরেকটি দেশের কুর্দীরাও সেখানকার গৃহযুদ্ধ থেকে লাভবান হয়েছে। সে দেশটি সিরিয়া। সেখানে মার্কিনরা তেমন কোন বড় মাপের হস্তক্ষেপ করেনি। তারপরও কুর্দীরা নিজেদের একটা স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে।

সিরিয়ায় কুর্দী জনসংখ্যা খুব বেশি নয়। অধিকাংশ বিংশ শতকের শুরুতে তুরস্কের কুর্দীনিধন অভিযান থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসী। সিরিয়ার উত্তরের স্বল্প জনঘনত্বের পাহাড়ী এলাকাগুলিতে বসবাসের অনুমতি তারা পায় ফরাসী ম্যান্ডেট সরকারের কাছ থেকে। স্বাধীনতার পরিবর্তে ফরাসীদের অধীনে স্বায়ত্ত্বশাসনের আকাংক্ষা ছিল তাদের বেশি, আলাউয়ীদের মতই। কারণ সিরিয়ার স্বাধীনতা মানে সংখ্যাগুরু আরবদের লাথি-গুঁতো খাওয়া!

সিরিয়া স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দী অঞ্চল রোজাভার পতাকা ও প্রতীক
কুর্দী নারী মিলিশিয়া ওয়াই,পি,জের পতাকা হাতে কুর্দী মহিলা
২০১৯ সালে সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণের চিত্র

সিরিয়ায় কুর্দী ভাষা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি নেই। ১৯৬২ সালে বাথিস্ট ক্যুএর পর দেশটির কুর্দী জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় দেড় লাখ মানুষকে নাগরিকতাবঞ্চিত করা হয়। কারণ তারা নাকি তুরস্ক থেকে আগত “বিদেশী।” ফরাসী ঔপনিবেশিক প্রশাসনের দেয়া বৈধ কাগজ ছিল অগ্রহণযোগ্য। এর ফলে বহু রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়। শিক্ষা, রাজনীতি, সম্পত্তির মালিকানা, পাসপোর্টের আবেদন — ইত্যাদি সব কিছুই জটিল হয়ে যায় তাদের জন্যে। তাদের “পতিত জমি” বেহাত করে সুন্নী আরব ও অ্যাসিরীয় খ্রীষ্টানরা।

তুরস্কের সীমানা থেকেও কুর্দীদের উচ্ছেদ করে সেখানে একটি “আরব বেল্ট” তৈরির চেষ্টা করে বাথিস্ট সরকার। অজুহাত যে সীমান্তে শত্রুভাবাপন্ন “বিদেশী” থাকাটা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য ভাল নয়। বহু স্থানের নাম কুর্দী থেকে আরবী করা হয়। জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করা হয় সাধারণ কৃষকদেরকে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নিষেধাজ্ঞা আসে নবজাতকের কুর্দী নামকরণের ওপর। জনসমক্ষে কুর্দী ভাষা ব্যবহার আর প্রাইভেট স্কুল পরিচালনাও হয় নিষিদ্ধ।

২০১২ সালে সিরিয়ার কামিশলি শহরে কুর্দী সমাবেশ

আশির দশকেও সিরিয়ায় কুর্দী বই, ক্যাসেট ইত্যাদি প্রকাশ ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিয়ের অনুষ্ঠানে কুর্দী ঐতিহ্যবাহী পোশাকপরিধান বা গান গাওয়া ছিল নিষেধ। ১৯৮৬ সালে কুর্দী নববর্ষ নওরোজের জনসমাবেশে এমন নিষেধাজ্ঞা না মানার কারণে সিরীয় পুলিশ গুলি চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করে।

ইরাক যুদ্ধ শুরুর পরপরই ২০০৪ সালে কামিশলি শহরে কুর্দী ও আরবদের মধ্যে বুশ বনাম সাদ্দামকে সমর্থন নিয়ে দাঙ্গা বেঁধে যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে আবারও রক্ত দিয়ে অসম মূল্য দিতে হয় কুর্দী সাধারণ মানুষকে। ২০১১ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে কুর্দী নেতাদের শুরুতেই গুপ্তহত্যার মাধ্যমে নিকেশ করে আসাদবাহিনী। কিন্তু দেশের অন্যত্র আরো ভয়াবহ বিদ্রোহ ঠেকাতে কুর্দী অঞ্চল থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে আসতে হ্য় বাশার আসাদকে।

সেই শূন্যতার সুযোগেই উত্তর সিরিয়ার বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় কুর্দী ন্যাশনাল কাউন্সিল। আমুদা-কামিশলি-আফরিন-কোবানি প্রভৃতি শহরে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্থাপিত হয় তাদের নব্যপ্রতিষ্ঠিত সামরিক বাহিনী ওয়াই,পি,জি’র সহায়তায়। এই ডি ফ্যাক্টো স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দী অঞ্চলের নাম “রোজাভা।”

নিজের লেজিটিমেসি ধরে রাখার জন্যেই হয়ত বাশার আসাদ রোজাভায় শক্ত হাতে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেনি। ২০১১ সাল থেকে কুর্দীদের পাসর্পোট ও নাগরকিত্বের সনদও দিতে শুরু করে তার সরকার। অন্যান্য শত্রুর থেকে কুর্দীরা তার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। তাই রোজাভার বেশ কিছু শহরে আসাদ সরকারের সাথে সহাবস্থান করতে সংকোচ করছে না কুর্দী প্রশাসন।

২০১৪ সালে আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দী স্নাইপার, কোবানি
বিধ্বস্ত কোবানি শহরে ওয়াই পিজি ও ওয়াই পিজে মিলিশিয়া
কোবানি শহরে আইসিসের আক্রমণ চলাকালে সীমান্তের অপর পাশে তুরস্কে আশ্রয় নেয় কোবানির অধিকাংশ সাধারণ কুর্দী জনগণ

২০১৪ সালে কোবানি শহরের কুর্দী অবস্থানের চারদিকে অবরোধ বসায় আইসিস। শহরটির স্বল্পসংখ্যক ওয়াই,পি,জি সদস্য রিইনফোর্সমেন্ট না আসা পর্যন্ত তাদের অবস্থান ধরে রাখে। রক্ষা করে শহরটির সিভিলিয়ানদের। শেষ পর্যন্ত কুর্দী পাল্টা আক্রমণে আইসিস পিছু হটতে বাধ্য হয়। তাদের ধাওয়া দিয়ে রাক্কা পর্যন্ত দখল করে নেয় ওয়াই,পি,জি। এ কাজে তাদের সাথে শরিক ছিল ওয়াই,পি,জে নামে নারীযোদ্ধাদের মিলিশিয়াও। পুরো সিরিয়াতে যদি কোন প্রশিক্ষিত ডিসিপ্লিনড ফোর্স থেকে থাকে তো সে এই ওয়াই,পি,জি, এটা মার্কিন ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের মন্তব্য। এয়ারস্ট্রাইকের মাধ্যমে কোবানির অবরোধ ভাঙতে তাদের সহায়তা করে মার্কিন বিমানবাহিনী।

আইসিসের পতনের পর সিরিয়ার আরো বিশাল এলাকা আসে রোজাভার নিয়ন্ত্রণে। শুধু কুর্দী নয়, আরব, অ্যাসিরীয়, ইয়াজিদী প্রভৃতি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা করতে হয় তাদের। রোজাভার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় অটোনমাস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ নর্থ এন্ড ঈস্ট সিরিয়া (আনেস)।

বহুজাতিক এই স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলে লিবার্টারিয়ান সোশালিজম হচ্ছে আদর্শ। প্রতিটা শহরের স্থানীয় মানুষ স্থানীয় সরকারের নেতৃত্বে। আনেস কাগজেকলমে কুর্দী জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে না, আর সিরিয়ার মাঝেই ফেডারেল সিস্টেমে স্বায়ত্ত্বশাসন চায়। অর্থাৎ ইরাকি কুর্দিস্তানের মত। ইরাকী কুর্দীদের মত এরা রক্ষণশীল না হলেও দজলা নদের ওপারের বন্ধুদের থেকে রসদ সরবরাহ তারা পায়।

ইতালির বোলোনা শহরে কোবানিতে কুর্দী বাহিনীর সমর্থনে গ্রাফিটি
২০১৪ সালে কোবানিতে আইসিস আক্রমণের বিরুদ্ধে তুরস্কের সেনাবাহিনী কোন হস্তক্ষেপ না করায় তুরস্কের দিয়ারবাকির শহরে কুর্দীরা সহিংস বিক্ষোভ করে

ইরাকের মত সিরিয়াতে আরেকটি স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দিস্তান হয়ে যার বাড়া ভাতে ছাঁই ঢেলেছে সে হল তুরস্ক। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান স্বয়ং মার্কিনদের দোষারোপ করেন “ভুল ফরেন পলিসির” জন্য। এটা যতটা না ইরাক যুদ্ধের সাথে জড়িত, তার থেকে বেশি তুরস্কের কুর্দী সমস্যাটিকে বাড়িয়ে দেবার জন্য। ওদিকে সিরিয়ার কুর্দীরা আইসিস বা আসাদকে যতটা শত্রু ভাবে, তার থেকে অনেক বেশি ভাবে তুরস্ক ও “সুলতান” এরদোয়ানকে। কারণ ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত একাধিক তুর্কী সামরিক অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে অগণিত সাধারণ সিরিয়ান কুর্দী।

গত পোস্টে বলেছি ইরাকের বাথিস্ট সরকার কি পরিমাণ অত্যাচার কুর্দীদের ওপর করেছে। আরেকটি যে দেশে দশকের পর দশক এমন অত্যাচার চলেছে সেটি তুরস্ক। ১৯২৩ সালে ওসমানী খেলাফতের সমাপ্তি হয়। সে জায়গায় কামাল আতাতুর্ক যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক তুরস্কের গোড়াপত্তন করেন সেটা তুর্কী জাতীয়তাবাদ। তাতে তুর্কী ব্যতীত অন্য জাতিসত্তার পরিচয়ের স্থান ছিল না। আগে অন্তত যে মুসলিম পরিচয়ের কারণে “খলীফা” তার কুর্দী প্রজাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম ছিলেন, সেটি রাতারাতি বিলুপ্ত হল। যে মিল্লি সিস্টেমের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজাতি ও ধর্মের মানুষকে নিজেদের সমাজে নিজেদের অনুশাসন অনুযায়ী চলার স্বাধীনতা দেয়া ছিল, তার জায়গা নিল কেন্দ্রীয় সরকারের আরোপিত সেক্যুলার সিস্টেম।

কামালিস্ট তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন শেখ সাঈদ নামে এই সুফী নেতা, ফাঁসিতে ঝোলানোর আগের চিত্র
বিংশ শতকের শুরুর ভাগে স্বঘোষিত তিনটা কুর্দীপ্রধান রিপাবলিকের অবস্থান
দেরসিম গণহত্যার অভিযানের সময়ে কুর্দী শিশুদের “উদ্ধার” করেছে তুর্কী সেনাদল, পরে এদের অনেকে নিহত হয়, অনেকে তুর্কী বোর্ডিং স্কুলে গিয়ে কুর্দী পরিচয় হারিয়ে ফেলে, ১৯৩৭

কামাল আতাতুর্কের প্রগতিশীল কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে একের পর এক মাদ্রাসা, সুফী দরগা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কুর্দী সংবাদপত্র প্রভৃতি বন্ধ হতে শুরু করে। তার প্রতিক্রিয়ায় ১৯২৫এ সুফী ঘরানার একটি কুর্দী বিদ্রোহ হয়। সেটিকে কঠোর হাতে দমন করে তুর্কী বাহিনী। স্বল্প কয়েকটি উপজাতির বাইরে অবশ্য এ আন্দোলনের নেতার গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। যুদ্ধবিমান ও মেশিন গানের সাহায্যে তার মধ্যযুগীয় সৈন্যদের কচুকাটা করে তুর্কীরা। বিদ্রোহের পতনের পর হাজারে হাজারে কুর্দীদের বিচারের প্রহসনে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

১৯২৭ সালে আরো বিশাল আকারে বিদ্রোহের সূচনা করেন আরেক নেতা ইহসান নুরী, তার সমর্থনে ছিল খয়বুন নামে কুর্দী জাতীয়তাবাদী একটি দল। আগের ধর্মীয়-উপজাতীয় মোটিভটাকে ধর্ম ও জাতিনিরপেক্ষ রূপ দেয়ায় তাদের সমর্থন আরো জোরালো হয়। “রিপাবলিক অফ আরারাত” নামে একটি স্বঘোষিত কুর্দী দেশ তৈরি হয় দক্ষিণপূর্ব তুরস্কে। আগেরবারের থেকে বেশি প্রখরতায় এদের ওপর বিমানহামলা চালানো হয়। মোস্তাফা কামালের মেয়ে সাবিহা গুকচেন স্বয়ং ফাইটার থেকে বোমানিক্ষেপ করে এসকল “দস্যুর” ওপর। ১৯৩০ সালে এ বিদ্রোহের সমাপ্তি হয়।

রিপাবলিক অফ আরারাতের ওপর বোমাবর্ষণের আগে বৈমানিক দলসহ সাবিহা গুকচেন, ১৯৩০
তুরস্কের কুর্দীনিধন নীতির বিরুদ্ধে জওহরলাল নেহরুর বক্তব্য

এরপর ১৯৩৭এ দেরসিম (বর্তমান তুঞ্জেলি) প্রদেশের সীমান্তবাসী কুর্দীদের সিরিয়ার মত “তুর্কীকরণের” প্রচেষ্টা চলে। সেসব স্থানে কুর্দীদের সরিয়ে কসোভার আলবেনিয়ান ও বসনিয়ানদেরকে পুনর্বাসন করা হয়। কুর্দী শিশুদের বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে তাদের তুর্কী নাম দিয়ে তুর্কী শিখিয়ে কুর্দী পরিচয় বিলোপের চেষ্টা চলে। সেখানে যে পরিমাণ হত্যাযজ্ঞ চলে, তা আর্মেনি গণহত্যাকেও হার মানায়। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আর্মেনী গণহত্যা স্বীকার না করলেও ২০১১ সালে দেরসিম গণহত্যার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন।

ষাটের দশক পর্যন্ত দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক ছিল বিদেশীদের জন্য অফ লিমিট। কারণ সে অঞ্চলে সামরিক শাসন জারি ছিল। দমবন্ধকরা একটা পরিস্থিতি। ত্রিশের দশক থেকেই কুর্দী নামকরণ, ভাষা, উপকথা, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ। ডিকশনারি থেকেও কুর্দ-কুর্দিশ-কুর্দিস্তান শব্দগুলি এক্সপাঞ্জ! তুর্কী নেতারা কুর্দীদের সম্বোধন করত “মাউন্টেন টার্ক” অর্থাৎ পাহাড়ী তুর্কী নামে। সোজা কথায়, কুর্দী বলে কোন কিছু নেই, ছিল না — থাকবে না।

অধুনা তুরস্কে কুর্দী প্রদেশগুলির মাথাপিছু জিডিপি সবচে কম
দক্ষিণপূর্ব তুরস্কের একটি গ্রামে পিকেকে ও তুর্কী বাহিনীর সংঘর্ষে বিধ্বস্ত সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

এ ধরনের পরিস্থিতিতে নেটো সদস্য তুরস্কের মধ্যে গন্ডগোল পাকানোর মালমশলা হিসাবে কুর্দী জননেতৃত্ব সোভিয়েতের জন্য রেডি হয়ে বসে ছিল। সত্তরের দশকে তুরস্কে অতিবাম অতিডান দুই দলের মধ্যে ভয়াবহ রকমের সড়কযুদ্ধ চলত। এ পটভূমিতে আব্দুল্লাহ ওজালান নামে অর্ধ-কুর্দী এক ইউনিভার্সিটি ড্রপআউট শুরু করেন তার কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে দলটি। প্রথম প্রথম তাদের লক্ষ্য ছিল কুর্দীদের সমাধিকারের জন্য লড়াই। পরে সেটা হয়ে যায় সমাজতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা। বলা বাহুল্য, তার বামপন্থী রাজনীতি সকল কুর্দীকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়।

তবে ১৯৮০র তুর্কী সামরিক অভ্যুত্থানের পর পিকেকে’র সুযোগ আসে আবেদন বৃদ্ধির। সামরিক জান্তার ধরপাকড় থেকে বাঁচতে কুর্দী তো বটেই বহু তুর্কী লেখক-সাহিত্যিক-গায়কও ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমায়। এ শূন্যস্থানে পিকেকে সামরিক বাহিনীর ওপর চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলা করে নিজেদের নেতৃত্বের একটা স্থান তৈরি করে নেয়। এমন না যে তারা ধোয়া তুলসী পাতা, কুর্দী বহু ল্যান্ডওনার আর উপজাতীয় নেতারাও তাদের জিঘাংসার শিকার হয়। পিকেকের চোখে এরা ছিল রাজাকার, শ্রেণীশত্রু।

পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওজালানকে গ্রেপ্তার করে তুরস্কে নিয়ে যাবার সময়, ১৯৯৯
পিকেকের আক্রমণে নিহত তুর্কী সৈন্যের কফিনের সামনে তার বাবা, ২০১৭
২০২২এ ইস্তাম্বুলে বোমাহামলার বদলা নিতে তুর্কী বিমানবাহিনী সিরিয়ার কুর্দী এলাকায় হামলা চালালে শিশুসহ একাধিক সাধারণ কুর্দী নিহত হয়

১৯৮৪ সালে পিকেকের শুরু করা ইনসার্জেন্সিতে এ পর্যন্ত পয়ত্রিশ হাজারের মত তুর্কী মানুষ মারা গেছে যাদের সিংহভাগ কুর্দী সাধারণ নাগরিক। বহু সন্ত্রাসবাদী হামলা চলেছে তুরস্ক-ইস্তাম্বুলের ট্রেন-বাস টার্মিনাল, এয়ারপোর্ট, বাজার, ট্যুরিস্ট স্পটে। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত স্নায়ুযুদ্ধ ছিল পিকেকে বনাম তুরস্কের বিবাদের পটভূমি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তাই তখন থেকেই পিকেকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে স্বীকৃত। আয়রন কার্টেন ধ্বসে পড়তে শুরু করলে তুরস্ক ধীরে ধীরে কুর্দী ভাষা-সংস্কৃতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে। রাষ্ট্রপতি তুরগুত ওজালের সাথে একটা শান্তি আলোচনা শুরু হলেও তার অকালমৃত্যুতে আবার ছক উল্টে যায়।

১৯৯৯ সালে মোসাদ স্টাইলে কেনিয়া থেকে আব্দু্ল্লাহ ওজালানকে ধরে নিয়ে আসে তুর্কী গোয়েন্দাবাহিনী এম,আই,টি। তখন প্রথম যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে পিকেকে। তারপরও থেমে থেমে এখনো সংঘাত চলছে। পিকেকে পালিয়ে ইরাকী কুর্দিস্তানের দুর্গম কান্দিল পর্বতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে প্রায়শই ইরাকী কুর্দিস্তানের সরকার পিকেকে উচ্ছেদে তুর্কীদের সহায়তা করে।

পিকেকে তুরস্কের কুর্দী সংগ্রামের হেডলাইন কেড়ে নিলেও আসলে বহু ঘরানার রাজনীতি প্রচলিত আছে সেখানের কুর্দীদের মাঝে। তবে ১৯৯০ পর্যন্ত কুর্দী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি সেখানে ছিল নিষিদ্ধ। প্রায়ই কোন না কোন কুর্দীপ্রধান দলকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দায়ে তুরস্কের সুপ্রীম কোর্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জনপ্রিয় নেতা সালাউদ্দিন দেমিরতাশ সেই অভিযোগে দশ বছর ধরে জেলে। আরেক সংসদসদস্য লেলা জানা শপথ গ্রহণের শেষে তুর্কী-কুর্দী ভ্রাতৃত্বের আকাংক্ষা প্রকাশ করেন। ফলঃ দশ বছরের জেল।

২০১৭ সালে আঙ্কারায় সন্ত্রাসী বোমাহামলা
সিরিয়ার রোজাভার সমাবেশগুলিতে ওজালানের মুখচ্ছবি অংকিত ব্যানার ও পতাকা শোভা পায়
উত্তর সিরিয়ায় পরিচালিত তুর্কী গ্রাউন্ড অপারেশন, ২০১৯

তাই ২০০৪ সালে প্রথম কুর্দী টি,আর,টি টিভি চ্যানেল যাত্রা শুরু করলেও তাতে প্রচারিত ইরানী দল রাস্তাকের সঙ্গীতের কথায় “কুর্দিস্তান” শব্দটি প্রতিস্থাপন করতে হয় “হাউরামান” প্রদেশের নাম দিয়ে। মোটে সে বছরই নবজাতকদের কুর্দী নামকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়।

আয়রনিক ব্যাপার হল, ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর এরদোয়ানই এমন উদারপন্থা অবলম্বন শুরু করেন। মার্কেট রিফর্মের পাশাপাশি কুর্দী-তুর্কী সম্পর্ক নর্মালাইজেশনের একটা চেষ্টা চলে। সেসব ওলট পালট হয়ে যায় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে। অতীতে সিরিয়ার সরকার পিকেকে দলটিকে নানা সময় আশ্রয় দিয়েছে। রোজাভার কুর্দীরাও ওজালানের অনুসারী বামপন্থী আদর্শে অনুপ্রাণিত। গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের সাথে স্বাধীনতাকামী সন্ত্রাসবাদীরাও তুরস্কে ঢুকে পড়েছে। অন্তত এমনটাই এরদোয়ানের দাবি।

তুরস্কে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিরিশটির মত সন্ত্রাসী বোমা হামলায় মারা গেছে সাড়ে পাঁচশর বেশি মানুষ। আক্রমণের দাবিদারদের মধ্যে ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসবাদী আছে যেমন, তেমন বিভিন্ন ক্ষুদ্র অপরিচিত কুর্দী জাতীয়তাবাদী দলও আছে। তবে তুরস্কের সরকার প্রায়ই ঢালাওভাবে পিকেকে’কে এসবে মূল হোতা হিসাবে দাবি করে। আর যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সিরিয়ার ওয়াই,পি,জি নাকি পিকেকেরই একটা শাখা, এটা তাদের দাবি।

এ কিছুটা সত্য। ওয়াই,পি,জির সমাবেশের ব্যানারে-পোস্টারে ওজালানের ছবি শোভা পায়। এ সকল কারণে ট্রাম্প প্রশাসন আইসিস উৎপাটন অভিযান সফল হবার পরপর সিরিয়ান কুর্দিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যদের আংশিক প্রত্যাহার করে নেয়। তবে এখনো একটা ভাল মার্কিন উপস্থিতি সেখানে রয়েছে।

উত্তর সিরিয়ায় তুর্কী দখলদারিত্বের চিত্র
ইস্তাম্বুলের ইস্তিকলাল সড়কে বোমা বিস্ফোরণের ঠিক আগ মুহূর্তের দৃশ্য সিক্যুরিটি ক্যামেরায় ধারণকৃত

মার্কিনরা সরে আসার পরপরই তুর্কীরা তিনটি বড় সামরিক অভিযান চালিয়ে সিরিয়ার উত্তরাংশ দখল করে রেখেছে। কুর্দী সন্ত্রাসবাদী দল যাতে তুরস্কে ঢুকতে না পারে সে কারণে বর্ডারের দশ-পনেরো কিলোমিটারে তারা সেফ জোন বানাচ্ছে। হয়তবা ভবিষ্যতে সিরিয়ান রেফ্যুজিদের সেখানে ফেরত পাঠাবে। আবার এক দফা কুর্দীদের সম্পত্তি বেদখল হবে।

এসব কারণে সিরিয়ার রোজাভার জনমানসে আইসিস নয়, বরং তুর্কীবিদ্বেষ। সীমানার অপর পারে তুর্কী কুর্দীরাও অসন্তুষ্ট। এদের সকলের ধারণা কুর্দীবিরোধী অভিযানে তুর্কী সেনাবাহিনীর সাথে আইসিস শরীক রয়েছে। ২০১৪ সালে কোবানি অবরোধের সময় যুক্তরাষ্ট্রই তাদের সাহায্য করে, আইসিসবিরোধী জজবা তুলেও এরদোয়ান কোন সাহায্য করেনি।

এই রোববার বোঝা যাবে এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ কি, আর রোজাভার অধিকৃত এলাকার ভবিষ্যতও। তার বিরুদ্ধে যে প্রার্থী জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন তার নাম কামাল ক্রিচদারোউলু। একাধিক কুর্দী রাজনৈতিক দলও তাকে সমর্থন দিচ্ছে।

এরদোয়ানের বিরুদ্ধে মে ২০২৩এ নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ কামাল ক্লিচদারোউলু
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কুর্দী ডায়াস্পোরার চিত্র
সুইডেনে তুরস্কের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করছে কুর্দী জনতা, ২০১৯

এরদোয়ান যে সুইডেন-ফিনল্যান্ডের নেটো সদস্যপদ ঝুলিয়ে রেখেছেন, তার মূলেও এ কুর্দী সংঘাত। কুর্দীদের একটা বড় জনসংখ্যা ইউরোপে অভিবাসী। এরা সেসব দেশ থেকে অর্থ সাহায্য পাঠায় ইরাক-সিরিয়া-তুরস্ক-ইরানের কুর্দীদের। অনেক বিরোধী মতের কুর্দী নেতারাও রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে রয়েছে সেসব দেশে। সুইডেনে-ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়প্রদানের অভিযোগের মূল সেটাই। ওদিকে তুরস্কের বহু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ, বিশেষ করে বিচারব্যবস্থার। সে কারণে তুরস্কের কোর্ট কাউকে “সন্ত্রাসবাদী” তকমা দিলেও সুইডেন-ফিনল্যান্ডের মত দেশ সাথে সাথে সেটা বিশ্বাস করবে না।

এই একই কারণে তুরস্ক সহজে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হতে পারবে না। প্রথম পোস্টে আমি বলেছিলাম কেন কিভাবে মাইনরিটি রাইটস এর ব্যাপারটা ইউরোপীয় রাষ্ট্রসংজ্ঞার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গেছে। তার মূলে রয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তস্নাত ইতিহাস। ইইউএর সদস্যপদ লাভের জন্য একটি দেশকে অবশ্যই স্বদেশের জাতিগত, ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ঐ লেঠা না চুকিয়ে ইইউতে ঢুকলে আবারও সে পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা। তাই যতদিন না কুর্দী প্রশ্নের একটা যথাযথ উত্তর তুরস্ক বের করতে না পারছে ততদিন ইউরোপীয় দেশ তারা নয়।

আর এ প্রসঙ্গে আমার মত যারা পশ্চিমা দেশে আরামে শান্তিতে বসবাস করছেন, তাদেরও মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমরা কিন্তু ঐ মাইনরিটি রাইটসের সংজ্ঞাটির সুবিধাভোগী হয়েই উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি পাচ্ছি! যদি ভাবেন স্বদেশে বাঙালী বা মুসলমানরাই হবে সব ক্ষমতার মালিক, কিংবা ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী নস্টালজিয়াই সকল সমস্যার উত্তর, তো সেটা হবে চরম হিপোক্রেসি!

ইউরোপ-আমেরিকা উন্নতি করেছে শুধু টেকনোলজির বদৌলতে নয়, তারা স্বদেশের মানুষকে, আই মীন আপামর সকল মানুষকে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধিকার দেয়। স্বদেশের অর্থনৈতিক-সামরিক সকল প্রকার নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্য সে ডাইভার্সিটিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যতদিন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এটা সঠিকভাবে স্বীকৃত না হবে, ততদিন জনগোষ্ঠীর একটা বড় পটেনশিয়াল থেকে বঞ্চিত হবে দেশ ও জাতি। সোভিয়েতের পতন হয়েছে, কিন্তু এখানে এখনও একটা বিশাল মানসিক ডিভাইড রয়ে গেছে ঈস্ট আর ওয়েস্টের মধ্যে। এই আয়রন কার্টেনের পতন না ঘটলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কোথাও নেই।

ইরাকী কুর্দিস্তান

“ইরাক ওয়ার ওয়াজ এ গুড থিং!” ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আপনি নিশ্চয় এমন উত্তর দেবেন না? কিন্তু ইরাকের কেউ না কেউ এমন উত্তর আপনাকে দেবেই। এবং নব্বই শতাংশ সম্ভাবনা সে একজন কুর্দী!

ইরাকের বাথিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ রেজোল্যুশন ১৪৪১ লংঘনের অভিযোগে যে যুদ্ধটি ২০০৩এ শুরু হয়, তার সবচেয়ে বড় বেনেফিশিয়ারি ইরাকী কুর্দিস্তান আর তার পলিটিকাল ক্লাস। সাদ্দামের আমলে যে আরবিল ছিল মফস্বলের অনুন্নত প্রাদেশিক একটি শহর, সেটি আজ তেলের পয়সায় সম্পদশালী। বাকি ইরাকের তুলনায় কুর্দিস্তান রিজিওন তুলনামূলক নিরাপদ এলাকা। কুর্দী যে সকল নেতারা ইরাক-ইরানের সীমান্ত বরাবর ‌অতীতে পালিয়ে বেড়াত, তারা আজ বাগদাদে শক্তিমান পাওয়ার ব্রোকার। যে ইরাকে কখনো সুন্নি আরব ছাড়া রাজা বা রাষ্ট্রপতি কেউ হয়নি, সেখানে এখন অলিখিত আইন যে রাষ্ট্রপতি হবেন একজন কুর্দী। আর একজন নয় চারজন রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে সে নিয়ম ‌অনুসরণ করা হয়েছে।

প্রতিবেশী দেশের কুর্দীদের জন্যে ইরাকী কুর্দিস্তান আশার আলোকবর্তিকা, কিন্তু তাদের সরকারগুলির জন্যে একটা গাত্রদাহের ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরাকী কুর্দীদের সমর্থন পেয়েছে ও দিয়েছে, সেটা আশপাশের দেশগুলিকে, বিশেষ করে তুরস্ককে, মার্কিন মিত্রতা নতুন করে মূল্যায়ন করতে বাধ্য করেছে।

আরবিল শহর, ইরাকী কুর্দীস্তান, ২০২১

ইরাকী কুর্দিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি যে উপজাতির নেতা, সেটিই বহু দশক ইরাকে কুর্দী স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিল। ত্রিশের দশকে মাসুদের চাচা আহমেদ বারজানি রাজতন্ত্রী সরকারের কেন্দ্রীকরণ আর উপজাতীয় অধিকার হরণ নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিফল হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাসুদের বাবা মুস্তাফা নতুন করে আরেকটি বিদ্রোহের সূচনা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পালিয়ে সীমান্তের অপর পারে ইরানী কুর্দীদের সাথে হাত মেলান।

গত পোস্টে বলা সোভিয়েত পাপেট রাষ্ট্র রিপাবলিক অফ মাহাবাদকে মু্স্তাফা বারজানির উপজাতীয় সৈন্যদল সামরিক সহায়তা দেয়। কিন্তু সোভিয়েতরা কেটে পড়লে তাদের সাথে সাঙ্গপাঙ্গসহ আজারবাইজানে চলে যান মু্স্তাফা। কম্যুনিস্ট পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজতন্ত্রে দীক্ষা নেন তিনি ও তার অনুগতরা। তাঁর লক্ষ্য স্বাধীন কুর্দিস্তান। আর সোভিয়েতের লক্ষ্য, যদি স্বাধীন কুর্দিস্তান হয়ই তো তা হবে সমাজতান্ত্রিক রুশঅনুগত কুর্দিস্তান।

বারজানি পরিবার, সামনে আহমেদ, পেছনে মুস্তাফা ও ভাইয়েরা
বারজানি ক্ল্যান

বিভিন্ন রুশ নেতাদের সাথে মোলাকাত করলেও দ্রুত বারজানির সাথে পৃষ্ঠপোষকদের বিরোধ দেখা দেয়। উজবেকিস্তানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একরকম নির্বাসনে পাঠানো হয় স্বাধীনতাযোদ্ধাদের। সোভিয়েতরা এরপর বারজানির উপযোগিতা পায় ১৯৫৮ সালে ইরাকে আরব জাতীয়তাবাদী সামরিক অভ্যুত্থান ও রাজতন্ত্রের রক্তক্ষয়ী পতনের পর।

নতুন প্রধানমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার আব্দুল করিম কাসিমের আশ্বাসে বারজানি নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন। কুর্দিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যাপারে কাসিমের সাথে সমঝোতাও হয়। কুর্দিস্তান ডেমোক্রাটিক পার্টিকে বৈধতা দেয়া হয়। কিন্তু কাসিম বারজানির ক্রমবর্ধমান শক্তিতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে শুরু করেন। বারজানি শুধু সোভিয়েত নয়, মার্কিন, ইরানী, ইসরায়েলী যে কোন উৎস থেকে সহায়তা গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। অপরদিকে বারজানিবিরোধী সোভিয়েতসমর্থিত কুর্দী নেতাদেরকে ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়। ফলে ১৯৬১ সালে ইরাকী-কুর্দী যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কুর্দী মিলিশিয়া গেরিলা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে কাসিমের সেনাবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। তারা সমর্থন পায় ইরান ও ইসরায়েল থেকে। বহু সাধারণ কুর্দী এ সংঘাতে ইরাকী সেনাবাহিনীর কনভেনশনাল অস্ত্রের ব্যবহারে মারা যায়।

ইরাকী প্রধানমন্ত্রী আব্দুল করিম কাসিমের সাথে মুস্তাফা বারজানি
প্রথম ইরাকী-কুর্দী যুদ্ধ, ১৯৬১-৭০

কিন্তু এই কুর্দী অভিযান নিয়েই কাসিমের সাথে তার সেনানায়কদের বিরোধ দেখা দেয়। ক্যুতে তিনি নিহত হন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কর্নেল আব্দুস সালাম আরিফ আর তার ভাই লেফটেনেন্ট জেনারেল আব্দুর রহমান আরিফ কেউই কুর্দী পেশমের্গা গেরিলার বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে ১৯৬৬ সালে একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে নতুন করে স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়ে বারজানিকে।

কিন্তু তাতে বাদ সাধে ১৯৬৮ সালে ইরাকে বাথ পার্টির ক্যু। আরব জাতীয়তাবাদীদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসে বাথ সমাজতন্ত্রী জাতীয়তাবাদীরা। এ পার্টির আদর্শ নাৎসি পার্টির থেকে এমন কিছু ভিন্ন নয়। সাদ্দাম হোসেন তখন বড় মাপের বাথিস্ট নেতা না হলেও তাকে ১৯৭০এ পাঠানো হয় কুর্দীদের সাথে নতুন করে শান্তিস্থাপনের জন্যে। স্বায়ত্ত্বশাসন আর কুর্দীকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মর্যাদার দেবার প্রস্তাবে ইরাক রাজি হয়।

কিন্তু সে চুক্তি বাস্তবায়নেও কেন্দ্রীয় সরকার নানা টালবাহানা করে। ততদিনে কুর্দী এলাকার মসুল ও কিরকুক শহরের আশপাশে তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। সেসবের ওপর শক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকার এলাকাটির “আরবীকরণ” শুরু করে। এর অর্থ হল, আদি অধিবাসী কুর্দী, অ্যাসিরীয়, ইয়াজিদী এদেরকে সরিয়ে সে জায়গায় আরব বেদুইন উপজাতিগুলিকে প্রতিস্থাপন করা। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটি বাথ পার্টির একদলীয় নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দ্বিতীয় ইরাকি-কুর্দী যুদ্ধ, ১৯৭৪-৭৫
সাদ্দামসহ মুস্তাফা বারজানি

বারজানি এ নীতির বহু প্রতিবাদ করেও ফল পাননি। তার ওপর একটি ব্যর্থ আততায়ী হামলা হয় বারজানির ওপর, যার পেছনে সাদ্দামের হাত ছিল। দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় কুর্দিস্তানে। বারজানিকে ইরান ভারি অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। কিন্তু গেরিলা যুদ্ধে অভ্যস্ত পেশমের্গা কনভেনশনাল অস্ত্র দিয়ে ইরাকের সুপেরিয়র সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কিছু করতে পারেনি। ওদিকে ১৯৭৫এ ইরাক-ইরানের শাত-ইল-আরব ভূমিবিরোধ আলজিয়ার্স চুক্তির মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে যায়। ইরানের শাহ তখন সহায়তা বন্ধ করে দিলে বারজানিকে আবার পালাতে হয়ে সীমান্তের ওপারে।

এ সময় বারজানির অবর্তমানে কেডিপির প্রগতিশীল সদস্যদের নিয়ে নতুন পার্টি পেট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তান পি,ইউ,কে সংগঠিত করেন তারই সহযোদ্ধা জালাল তালাবানি। ১৯৭৬এ লো-লেভেল ইনসার্জেন্সি চালু রাখে তারা। কিন্তু শীঘ্রি কেডিপির সাথে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন সাদ্দাম হোসেন। উত্তর ইরাকের বড় শহরগুলিতে সামরিক শক্তিবলে পুরোদমে চলে আরবীকরণ অভিযান।

১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের পর পরই মৃত্যুবরণ করেন মুস্তাফা বারজানি। তার স্থান নেন ছেলে মাসুদ। পরের বছরই শাত-আল আরবের পুরনো বিবাদের দোহাই দিয়ে ইরান আক্রমণ করে বসেন সাদ্দাম। সুযোগ পেয়ে কেডিপি ও পিইউকে উভয়েই উত্তর ইরাকে আবার বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল বারজানির দল সরাসরি ইরান থেকে সাহায্য পায়। আর তালাবানির দল সাহায্য পায় বাথিস্ট সিরিয়া আর লিবিয়ার থেকে।

কিন্তু ইরানের সাথে যুদ্ধরত অবস্থাতেও ইরাকের কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীর যথেষ্ট অস্ত্রবল ছিল উত্তরের বিদ্রোহ সামাল দেবার। ১৯৮৩ সালে বিশাল অভিযান চালিয়ে আরবিল প্রদেশে মাসুদের উপজাতি বারজানিদেরকে প্রায় নিঃশেষ করে দেয়া হয়। তার পরিবারের বহু সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইরাকী বাহিনী। পরবর্তীতে সেসময়ে নিহত পাঁচশর ওপর মানুষের গণকবর খুঁজে পায় কুর্দীরা।

হালাবজায় রাসায়নিক আক্রমণে নিহত বাবা-শিশু, ১৯৮৮
ইরান ইরাক ফ্রন্টলাইনে গ্যাসমাস্কপরা ইরানী সৈন্য
কেমিকাল আলি

১৯৮৮ সালে ইরানঅধিকৃত হালাবজা শহরে গোলানিক্ষেপ করে সাদ্দামের বাহিনী। আন্তর্জাতিক আইনের থোড়াই কেয়ার করে মার্চে সে শহরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে তারা। স্থানীয় ইরাকী কুর্দী বৃদ্ধ-নারী-শিশু হাজারে হাজারে কঠিন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। “কেমিকাল আলি” ডাকনাম দেয়া হয় সে ঘটনার নেতৃত্বে থাকা সাদ্দামের তুতোভাইকে। মানব ইতিহাসে এই প্রথম ঘটনা যেখানে স্বদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে উইপন অফ মাস ডিস্ট্রাকশন ব্যবহার করল কোন একটি দেশ। বৃহত্তর “আল-আনফাল” অভিযানের ‌অংশ ছিল এ আক্রমণ। কুরআনের একটি সূরার নামে অভিযানটির নামকরণ। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ কুর্দী মানুষের মৃত্যু হয় এ অভিযানে, যাকে এখন অনেকে কুর্দী জেনোসাইড নামে অভিহিত করে। একই কারণে ইসরাইলের সাথে কুর্দীরা একটা ঐতিহাসিক সংযোগ বোধ করে।

দাবার ছক পাল্টাতে শুরু করে ১৯৯১ সালে। সাদ্দামের কুয়েত দখলের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশাল কোয়ালিশন নিয়ে ইরাকে আক্রমন চালায়। উত্তর ইরাকে ঘোষিত হয় নো ফ্লাই জোন। নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে তালাবানি ও বারজানিরা সেখানে ডি ফ্যাক্টো স্বায়ত্ত্বশাসন শুরু করেন। বুশের আহ্বানে দক্ষিণে শিয়া-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাতেও সাদ্দামবিরোধী গণআন্দোলন শুরু হয়ে যায়। দু জায়গাতেই নিষ্ঠুরভাবে সামরিক বাহিনীর সাহায্যে বিদ্রোহ মোকাবেলা করে নিজের গদি রক্ষা করেন সাদ্দাম। কিরকুক থেকে হটে পাহাড়ী এলাকায় আশ্রয় নেয় কুর্দী স্বায়ত্ত্বশাসিত কাউন্সিল।

হালাবজা মেমোরিয়াল, ইরাকী কুর্দিস্তান
কুর্দী বিদ্রোহ, ১৯৯১

একতাবদ্ধ ইরাকী কুর্দিস্তান নিজেদের অধিকৃত এলাকায় সংসদ নির্বাচন করে ১৯৯২ সালে। উত্তরে বারজানির কেডিপি আর দক্ষিণে তালাবানির পিইউকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ইরাকী সরকার এদের ওপর অবরোধ আরোপ করে। পিকেকে নির্মূলের লক্ষ্যে তুরস্কের সেনাবাহিনীও পশ্চিমে একটি অভিযান চালায়। কঠিন এ সময়টিতে কুর্দীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধ চলে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ইরাক সরকার ও ইরান যথারীতি উভয় পক্ষকে নিজের সুবিধার জন্যে ব্যবহার করে। ১৯৯৭এ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সহিংসতা বন্ধ করে দুই কুর্দী পক্ষ।

২০০৩এ বুশ দুই’য়ের ইরাক আক্রমণে শরিক হয় কুর্দী সৈন্যরাও। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র আগের বারের মত মিত্র দেশগুলির সহায়তা পায়নি। বিশেষত তুরস্ক তাদের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। এ কারণেই উত্তর ইরাকে কুর্দীদের ওপর নির্ভর করতে হয় মার্কিনদের। আয়রনিকালি তুরস্ক এভাবেই “শত্রু” জাতিটিকে সাহায্য করে বসে, যেখানে একটা সুযোগ ছিল “ক্লীনাপ অপারেশন” চালানোর। সাদ্দামসমর্থিত বাহিনীগুলির ওপর কুর্দী পেশমের্গা সহজেই বিজয় পায়। কিরকুক ও ‌অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর ফিরে আসে তাদের হাতে।

আরবিল শহরে ইরাকী কুর্দী ও অ্যাসিরীয়দের সমাবেশ
বিভিন্ন দেশের মাঝে কুর্দী জাতিগোষ্ঠীর বিভাজন

২০০৬এ দখলদার মার্কিনদের বিরুদ্ধে যখন ইরাকের বাকি সকল ‌‌অংশে ইনসারজেন্সি চলেছে, তখন কুর্দিস্তান ও দক্ষিণের শিয়া-অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত। নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত হয় গৃহযুদ্ধচলাকালীন সময়েই। তাতে ইরাকী প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন কুর্দী নেতা জালাল তালাবানি স্বয়ং। ২০১১-১২র দ্বিতীয় সুন্নি ইনসারজেন্সি আর ২০১৩-১৭র আইসিস যুদ্ধ ইরাকি কুর্দিস্তানের একাংশে হলেও নিজেদের শহরগুলির নিয়ন্ত্রণ হারায়নি কুর্দিস্তান রিজওনাল সরকার।

তবে কেন্দ্রের সাথে তেল-উত্তোলন ও পরিবহন নিয়ে পরবর্তীতে নানা বিবাদে জড়িয়েছে কুর্দীরা। সে নিয়ে সংঘাত হয়েছে উভয় পক্ষের মধ্যে। কেন্দ্রের শাসানি আর মার্কিনসহ অন্যান্য মিত্রদের সাবধানবাণী সত্ত্বেও ২০১৭ সালে স্বাধীনতা নিয়ে গণভোট করেন বারজানি। ৯২ শতাংশ ভোট পড়ে স্বাধীনতার পক্ষে। তবে এটা কোন বাইন্ডিং রেফারেন্ডাম ছিল না। স্বাধীনতা দূরে থাক, উল্টো কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী কুর্দিস্তানের অধিকৃত এলাকার ২০ শতাংশের পুনর্দখল নেয়। এ ছিল বারজানির আদর্শিক কিন্তু ভুল একটি পদক্ষেপ।

ইরাকী কুর্দিস্তানে তেলগ্যাসের চিত্র
আর্বিল, ইরাকী কুর্দিস্তান, বর্তমানকাল
কুর্দিস্তান স্বাধীনতা রেফারেন্ডামের প্রাক্কালে সমাবেশ, ২০১৭
কুর্দিস্তান স্বাধীনতা রেফারেন্ডামের প্রাক্কালে সমাবেশ, ২০১৭

সাদ্দাম বা কাসিমের সময়কার থেকে ইরাকী কুর্দীদের বর্তমান চিত্র বেশ উন্নত। কিন্তু এখনো সেই পুরনো কেন্দ্রবিরোধী সংঘাতের বীজ রয়ে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারে তাদের যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব আছে। কুর্দিশ পাইপলাইনের তেলগ্যাস থেকে ভাল আয় আছে। আর স্বায়ত্ত্বশাসন এখন সরকারীভাবে স্বীকৃত। যতদিন এমন একটা পাওয়ার ব্যালান্স টিকিয়ে রাখতে পারবে কুর্দীরা, ততদিন ভবিষ্যতের একটা আশা আছে স্বাধীন রাষ্ট্রের।

আশা করি এখন বুঝতে পারছেন, কেন একজন ইরাকী জাতীয়তাবাদী কুর্দী আপনাকে বলবে ইরাক ওয়ার ওয়াজ এ গুড থিং! আরও বুঝেছেন, আশপাশের দেশগুলির কেন কুর্দী ইস্যু নিয়ে গাত্রদাহ বেড়েছে।

কিংডম অফ গড

Featured Video Play Icon

বড়দিনের শুভেচ্ছা সবাইকে!

মার্কিন দেশের মানুষ আজকাল মেরি ক্রিসমাস না বলে অনেক সময় হ্যাপি হলিডেজ বলে সম্ভাষণ করে। উদ্দেশ্য, যারা খ্রীষ্টান নয়, তাদের অনুভূতিতে আঘাত না দেয়া। আর মেরি ক্রিসমাস বললে উল্টো যদি কথা শুনতে হয়, ‘আমি তো খ্রীষ্টান নই’? ভিনদেশী চেহারার হলে তো কথাই নেই। আর কিছু মুসলিম ও ইহুদী আসলেই এ ব্যাপারে একটু স্পর্শকাতর। যাই হোক, মার্কিনরা আপনাকে জোর করে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধ্য করবে না।

আমার অবশ্য মেরি ক্রিসমাস সম্ভাষণ শুনতে ও ফিরিয়ে দিতে খারাপ লাগে না। ক্রিসমাসের উপলক্ষ্যে ছুটি তো আর যেনতেন হলিডে না। সমঝদারদের কাছে সেক্যুলার ছুটি আর স্পিরিচুয়াল ব্রেক একরকম নয়। রিল্যাক্স করার সুযোগ যখন একটু পেয়েছি, স্পিরিচুয়াল একটা ব্রেক হোক সানন্দে।

ডিসেম্বরের ২৫শে যীশুখ্রীষ্টের জন্ম আসলে সম্ভবত হয়নি। কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ডিসেম্বরের ২৫ দক্ষিণায়ণের দিন, উত্তর গোলার্ধ সূর্য হতে তার সবচে দূরপ্রান্তে গিয়ে আবার ফিরে আসা শুরু করে। অর্থাৎ দীর্ঘরাত্রির পালা শেষ, দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ে, উষ্ণতা ফিরে আসা শুরু করে ‘পৃথিবীতে’। সাথে আসে বসন্ত ও প্রকৃতির প্রাচুর্য। খ্রীষ্টের জন্মের আগ থেকেই এ দিনটি তাই অনেক প্যাগান ধর্মানুসারীদের, বিশেষ করে রোমানদের কাছে ছিল পবিত্র। এ হলো প্রকৃতির পুনর্জন্ম।

ভার্জিন মেরীর থেকে যীশুর সতীজন্ম ব্যাপারটাও পুরনো আইডিয়া। বিশেষ করে গ্রীক মিথে জিউসের জন্ম একই রকম। এমনকি গৌতমবুদ্ধের জন্মও মায়াদেবীর বুকের পাশ থেকে, অর্থাৎ হৃদয় হতে। তাঁর জন্মও সাধারণভাবে হয়নি।

প্রাচীন মিশরের দেবী আইসিস, অনিষ্টের দেব সেথের ষড়যন্ত্রে নিহত স্বামী অসাইরিসের মৃতদেহের টুকরো টুকরো অংশ নিয়ে লেবাননের রাজপ্রাসাদ থেকে ফেরার পথে দুঃখের আতিশয্যে তাঁকে আলিঙ্গন করেন। আর তার ফলে ‘সতীজন্ম’ হয় দেবতা হোরাসের। মাতা মেরীর কোলে বসা শিশু যীশু যেমন নতরদামসহ নানা গীর্জায় মূর্তিআকারে শোভা পাচ্ছে, আইসিসের ক্রোড়ে মাতৃদুগ্ধপানরত হোরাসের একইরকম ভাস্কর্য বিশ্বের সকল জাদুঘরের প্রাচীনমিশরীয় সেকশনে ভূরি ভূরি রয়েছে। তার কোনকোনটিতে আবার অসাইরিস এসে যুক্ত হয়ে হোলি ট্রিনিটি সম্পূর্ণ করেছেন।

ডায়োনাইসাস বলে এক গূঢ়দেবের উপাসনাও প্রচলিত ছিল যীশুর আগে একই এলাকায়। তাঁর জন্মও ভার্জিন বার্থ। ডায়োনাইসাসের উপাসকরা যেধরনের মিস্টিসিজম বা গূঢ়তত্ত্বের চর্চা করত, তা সুফীবাদ বা বাউলদর্শনের আদিমরূপ ধরলে ভুল করা হবে না। তাদের সেসব মিস্টিক ব্যাপারস্যাপার গ্নস্টিক নামক আদি খ্রীষ্টানদের মাধ্যমে আর্লি ক্রিস্টিয়ানিটিতে এসেছিল, যার অনেক কিছুর ছায়া বর্তমানেও রয়ে গেছে। তার একটা হল কম্যুনিয়ন, যেখানে ক্যাথলিকরা রুটি ও ওয়াইন খায় যীশুর রক্ত-মাংসের প্রতীক হিসাবে, কারণ তা ভক্ষণের মাধ্যমে যীশুর আত্মিক গুণ প্রবেশ করে তাদের আত্মায়, অথচ বলা হয় উল্টো যে তারা প্রবেশ করছে কিংডম অফ গডে। মিশরের নাগ হাম্মাদিতে আবিষ্কৃত গস্পেল অফ টমাসের পান্ডুলিপিতে অনেক কিছু ম্যাথু-মার্ক-ল্যুক-জনের থেকে আলাদা এবং গূঢ়তাত্ত্বিক, কারণ তা ছিল গ্নস্টিকদের মিস্টিক বাইবেল।

অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের দৈব উপায়ে জন্মসহ অন্যান্য অনেক ব্যাপারস্যাপার সে যুগের মানুষের কাছে নতুন কিছু ছিল না। তেমন কোন নতুন আইডিয়া না নিয়ে এসেও খ্রীষ্টধর্ম এতকিছুর মধ্যে কিভাবে নিজের আলাদা একটা জায়গা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল? অনেকে রোমসম্রাট কনস্ট্যানটিনের দিকে আঙুল তুলে দেখাবেন, কারণ তিনি খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করাতেই সে ধর্মবিশ্বাসের রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা পায়।

আমার হিসাবে তা শুধু একটিমাত্র কারণ। কনস্ট্যানটিন খ্রীষ্টান হয়েছেন, সেও যীশুর জন্মের তিনশ’ বছর পর। এত শতাব্দী ধরে নানা বিশ্বাস আর ধর্ম আর রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়রানির মধ্যে খ্রীষ্টানরা তো হারিয়ে যেতে পারত। তা তো হয়নি।

খ্রীষ্টানরা তাদের ধর্ম আঁকড়ে ধরে রেখেছিল কারণ ক্রিস্টিয়ানিটির বিশ্বাস এমন একটা মানবিক গুণের পরিপূর্ণ অর্থবহতা তাদেরকে দিয়েছিল, যেটা অন্যান্য সমসাময়িক ধর্মে গতানুগতিকভাবে শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় আচারপালনের মাঝে হারিয়ে গেছিল। সে মানবিক গুণটা হলো কমপ্যাশন — করুণা, পরদুঃখকাতরতা যেই শব্দ দিয়েই বলুন না কেন, মনে মনে বোধ না করলে অর্থ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।

লাভ ইয়র এনেমিজ, ডু গুড টু দোজ হু হেইট ইউ, ব্লেস দোজ হু কার্স ইউ, প্রে ফর দোজ হু মিসট্রীট ইউ — এ কথাগুলো শুধু যীশু বলেননি। একই বাণী যুগে যুগে গৌতমবুদ্ধসহ আরো অনেকে দিয়ে গেছেন। এসকল স্ববিরোধী উপদেশের কারণ কি? কারণ, মানবস্বত্ত্বা একক, যখন এক মানুষ আরেককে আঘাত করে, সে তা করে নিজেকেই। এটা কেবল একটি মাত্রা। এসবের অর্থ যে আবার ওম শান্তি বলে দুনিয়া থেকে পলায়নপর হওয়া, তাও নয়। এসবের ‌অর্থ শত দুর্দশা-বিপত্তি-দুঃখ-জরায় জর্জরিত হওয়া স্বত্ত্বেও নিজের মনের নৈতিক দ্বন্দ্বগুলোকে সামঞ্জস্যে আনা। নিজেকে হারমোনাইজ করা, চক্রের আবর্তে ঘুরপাক না খেয়ে চক্রের মাঝে স্থির থাকা। মিডল পাথ ইজ দ্য বেস্ট পাথ।

সুতরাং যীশুর সতীজন্ম আসলে কমপ্যাশনের জন্ম — সাধারণ জন্ম নয়। ঈশ্বরের উচ্চারিত দৈব প্রেরণার মাধ্যমে স্পিরিচুয়াল রিবার্থ। পশুপ্রকৃতিকে বশ করে শুচি মানবরূপে পুনরায় জন্মগ্রহণ। খ্রীষ্ট-বুদ্ধসহ যুগে যুগে যত ‘নবী’, ‘দেবদেবী’, পুরাণের বীরপুরুষদেরকে মানুষ রাজাসনে বসিয়েছে, সবাই আধ্যাত্মিক পুনর্জন্মের মাধ্যমে সে আসনের যোগ্যতা লাভ করেছেন। খ্রীষ্টানদের আত্মিক মুক্তির পথে যীশু ভেহিকল বা যান মাত্র। আবার বৌদ্ধধর্মে যে কোন সাধারণ মানুষও নিজ পথে বুদ্ধ হবার আর নির্বাণপ্রাপ্তির যোগ্যতা রাখে। অর্থাৎ যেকোন সাধারণ মানুষের পক্ষেও সম্ভব আধ্যাত্মিক ‘পুনর্জন্মলাভ’।

ইসলামধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ীও ঈসানবীর সতীজন্ম। আর হযরত মুহাম্মদের(সা) এরকম একটা স্পিরিচুয়াল রিবার্থ হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে সেটার উপরে খুব বেশি গুরুত্ব খুব একটা দেয়া হয়না, যদিও কোন কোন সুফী তরিকায় সে ঘটনা বেশ অর্থপূর্ণ। সেটা হল ফেরেশতা জিবরাইলকর্তৃক চারবার মুহাম্মদের বক্ষবিদারণ আর হৃদয় প্রক্ষালন

যীশুর ‘সতীজন্মের’ কারণে তিনিই সেই ব্যক্তি হলেন যিনি নিঃস্বার্থভাবে আত্মত্যাগ করলেন, ক্রুসিফিকশনের মাধ্যমে আত্মার আরেক সমতলে পৌঁছে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন দুঃখজরা থেকে মুক্তির উপায়। সে সমতলে তিনিই রাজা, কিং অফ কিংস, লর্ড অফ লর্ডস। শুধু ইহুদীদের নয়, সকল চৈতন্যময় উপলব্ধির রাজা, কিং অফ অল কনশাসনেস। সাথে দেয়া ভিডিওতে জর্জ হেন্ডেলের মেসিয়া ওরাটোরিওর হালেলুইয়া কোরাসে সেই ‘রাজার’ মহিমাকীর্তন করা হচ্ছে — ২৭৭ বছর পরেও ক্রীসমাসে এটা এখনও বেশ জনপ্রিয় ক্লাসিকাল সংগীত।

আপনার-আমার-সবার স্পিরিচুয়াল রিবার্থ হোক, মনের চোখ খুলুক, হৃদয় নিষ্কলঙ্ক হোক — নিজ অন্তরকে জয় করে যেন সকলে হতে পারি মনের ‘রাজা’! মেরি ক্রীসমাস!

ইথিওপিয়ার রাজা আবরাহার ৩৩৫ থেকে ৩৪০ খ্রীষ্টাব্দে তৈরি মেকেল্লে শহরের আব্রাহা গীর্জার ম্যুরালে শিশু যীশুকে স্তন্যদানরত মাতা মেরীর ছবি। ইসলামের ইতিহাসে একই নামের আরেক ইথিওপীয় রাজা আছেন যার আরব উপদ্বীপে আক্রমণের নেপথ্যে সূরা ফীল নাযিল হয়!
পুত্র দেবতা হোরাস মাতা আইসিসের কোলে বসে স্তন্যপান করছেন। ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এই স্ট্যাচুয়েটটি ৬৬৪ থেকে ৩৩৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রাচীন মিশরে তৈরি।
দেবী আইসিস ডানে, বামে হোরাস, মাঝে অসাইরিস। এরকম ট্রিনিটি বা ত্রিমূর্তির কনসেপ্ট হিন্দুধর্মেও রয়েছে। ফাদার-সান-হোলিগোস্ট্র খ্রীষ্টান ট্রিনিটি এই ত্রিমূর্তির অ্যাবস্ট্রাক্ট ইন্টারপ্রেটেশন।
মিউনিখের গ্লিপ্টোতেক মিউজিয়ামে শিশু ডায়োনাইসাসকে কোলে নিয়ে তাঁর রক্ষক ও উপদেষ্টা সাইলেনাসের মূর্তি। ভাস্কর্যটি চতুর্থ খ্রীষ্টপূর্ব শতকে ক্লাসিকাল গ্রীক যুগের শিল্পী লিসিপাসের তৈরি।
তৃতীয় শতকে তৈরি কন্সট্যান্টিন দ্য গ্রেটের প্রস্তরমূর্তি। কন্সট্যান্টিনের মা হেলেনা ছিলেন ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান। কন্সট্যান্টিন তাই ছোটবেলা থেকে সেধর্মের বিভিন্ন ব্যাপারস্যাপার দেখে আসছিলেন। কিন্তু তিনি খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেন মৃত্যুশয্যায় এসে। তার আগ থেকেই অবশ্য হেলেনা ও কন্সট্যান্টিন নানাভাবে খ্রীষ্টধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তার বিপরীতে তাঁর উত্তরসূরী রোমসম্রাটরা ছিলেন খ্রীষ্টানদের প্রতি যারপরনাই নির্মম। নিরোর সময় হাজারে হাজারে খ্রীষ্টানদেরকে জনতার বিনোদনের উদ্দেশ্যে ‘সার্কাসের’ ময়দানে হিংস্র জানোয়ারদের খাওয়ানো হয়। কনস্ট্যান্টিন খ্রীষ্টান হবার বারো বছর আগেই খ্রীষ্টান ধর্মগুরুদের আদেশ দেন কাউন্সিল অফ নিকায়ার মাধ্যমে ধর্মটিকে যথার্থ সাংগঠনিক রূপ দিতে। ক্যাথলিক ও অর্থডক্স ধর্মের যাত্রা শুরু হবে, কিন্তু এর ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খ্রীষ্টান গোষ্ঠীর নিজস্ব আচার ও ধর্মবিশ্বাস অবদমিত হয়।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা যীশু খ্রীষ্টের লাস্ট সাপারের দৃশ্য যেখানে তিনি তাঁর বারো শিষ্যকে তাঁর নিজ শরীরের রক্ত-মাংস ভক্ষণ করার নিমন্ত্রণ দিচ্ছেন, যদিও তাঁরা খাচ্ছেন রুটি ও ওয়াইন। এর থেকেই হোলি কম্যুনিয়ন বা ইউক্যারিস্ট রিচুয়ালের উৎপত্তি।
প্যাপিরাসের উপরে কপ্টিক ভাষায় লেখা গস্পেল অফ টমাসের একটা কপি কাকতালীয়ভাবে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা একটি জারে খুঁজে পায় মিশরীয় এক কৃষক, ১৯৪৫ সালে। টমাস ছিলেন যীশুর বারো শিষ্যের একজন। প্রধান চার শিষ্যের যে গস্পেলগুলি নিয়ে নিউ টেস্টামেন্ট, তাদের থেকে এটির বিবরণী একটু ভিন্ন। কিছু স্কলার আবার কোরানের কোন কোন অনুচ্ছেদের সাথে এর অংশবিশেষের মিল খুঁজে পেয়েছেন। ধারণা করা হয়, চতুর্থ খ্রীষ্টীয় শতকে আলেকজান্দ্রিয়ার প্রধান পুরোহিত আথানাসিওসের নির্দেশে এ গস্পেল মাটিচাঁপা দেয়া হয়। আথানাসিওস সম্রাট কনস্ট্যান্টিনের খ্রীষ্টধর্মগ্রহণের পরে সে ধর্মকে ইন্সটিটিউশনাল রূপ দিতে বহু কঠোর সংস্কারসাধন করেন। ট্রিনিটির আইডিয়াটিকে গ্রহণ করা হয়, আর যেসব তত্ত্বে যীশুকে স্বয়ং ঈশ্বর স্বীকার করা হত না, তাদেরকে অ্যাপোস্টেট বা কাফের আখ্যা দেয়া হয়। এই দলের মধ্যে ছিল বিশপ আরিয়ানাসের আরিয়ান স্কুল। বেশিরভাগ গথ ও অন্যান্য ‘বর্বর’ জাত আরিয়ান চিন্তাধারার খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিল।
হালেলুইয়া টাইবেরিয়ান হিব্রু শব্দ যার শব্দমূল দুটি। হিল্লেল মানে প্রশংসা, ‘ইয়া’ খোদা ইয়াৰের আরেক নাম। অর্থাৎ প্রেইজ বি টু গড, সকল প্রশংসা খোদার, আলহামদুলিল্লাহ। হিব্রু বাইবেলের বুক অফ সামসে কয়েকবার এ শব্দ এসেছে। বুক অফ সামসের গানগুলি ডেভিড বা দাউদের নামের সাথে জড়িত। অর্থাৎ হয়তবা দাউদের ওপর নাযিল হওয়া যবুর কেতাবের অংশ। যদিও প্রাচীন মিশরে সামসের গানগুলির প্রায় হুবহু একই গীতি ফারাও আখেনাতেনের শাসনামলে একেশ্বর আতেনের উদ্দেশ্যে রচিত হয়।
ষোড়শ শতকের তুর্কী মিনিয়েচার শিল্পীরা ইসরা বা মিরাজ কল্পনা থেকে এঁকেছেন এভাবে। মিরাজ হলো হযরত মুহাম্মদের অলৌকিকভাবে বুরাকের পিঠে প্রথমে জেরুজালেমযাত্রা, তারপর সাত আসমান পাড়ি দিয়ে স্বর্গ-নরক পরিভ্রমণ, খোদা ও অন্যান্য পয়গম্বরদের সাথে মোলাকাত। সেযাত্রায় আল্লাহ তাঁকে দেন তাঁর প্রাপ্য কমান্ডমেন্টস, ঈমান-নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব-জাকাত ইত্যাদির নির্দেশ। যাত্রাশুরুর আগে ফেরেশতা জিবরাঈল চতুর্থ ও শেষবারের মত তাঁর বুক চিরে হৃদয়ের পরিশুদ্ধি করেন। ডানের দৃশ্যে তাই চিত্রিত হয়েছে। যথারীতি মুহম্মদের মুখমন্ডল দেখানো হয়নি, যাতে তাঁর চিত্র পূজোর বস্তুতে পরিণত না হয়ে যায়। কারণ ঈশ্বরই একমাত্র সকল উপাসনার উদ্দেশ্য।
ল্যুক ৬:২৭। ষষ্ঠ চ্যাপ্টারে সারমনস অন দ্য প্লেইনসে যীশু তাঁর জীবনাদর্শগুলি পরিপূর্ণরূপে তুলে ধরেছিলেন শিষ্যদের কাছে। ‘লাভ দাই এনেমিজ’এর সাথে আরো রয়েছে ‘জাজ নট, অ্যান্ড ইউ শ্যাল নট বি জাজড’ আর ‘ফরগিভ অ্যান্ড ইউ উইল বি ফরগিভেন’।

 

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!