কাতিউশার বিশ্বযুদ্ধ

Featured Video Play Icon

রাশিয়া আর পুতিন নানা কারণে আজকাল হেডলাইন নিউজ। রুশ ইতিহাস-সাহিত্য-সংক্রান্ত বইপত্র পড়ে আর ডকুমেন্টারি দেখে যেটা বুঝি, সেটা হল রুশ জনগণের একটা সামগ্রিক কালচারাল ম্যাসোকিস্ট সাবকনশাস সেন্টিমেন্ট আছে, যেটা তাদেরকে শ্বেত-লোহিত সকল প্রকার ৎসারদের দাসত্বশৃংখল মেনে নিতে প্রবৃত্ত করে (শ্বেত=রোমানভ সম্রাট, লোহিত=কমিউনিস্ট ডিক্টেটর)। রুশবিপ্লব সত্যিকারের অর্থে জনবিপ্লব ছিল না, ছিল মূলত পাওয়ার ভ্যাকুয়ামের সুযোগ নেয়া ক্যু!


আমার মনে হয়, সাধারণ রুশরা একটু সাদাসিধা টাইপ। তাদের দুর্ভাগ্য তাদের ঘাড়ে কেবল চতুর-ধূর্ত ডিক্টেটররাই চাপে। অথবা খারাপ সময়ে খারাপের এত চরম সীমায় তারা পৌঁছায়, যেখানে তাদের মনে হয় বিশৃংখলার চেয়ে অত্যাচারী শক্ত হাতও ভাল।


নিচের গানটার সাথে আমার পরিচয় ছোটবেলার এমন একটা সময়ে, যখন সমাজতন্ত্র আর সাম্যবাদ আমাকে টানত। মার্ক্স-এঙ্গেলসের দুর্বোধ্য পুস্তক পড়ে তখন ধনতন্ত্র খারাপ, এই সরল কথাটাই খালি বুঝতাম। পরে অর্থনীতি-সমাজবিজ্ঞান-ইতিহাসের আরো সুবোধ্য বই-পুস্তক পড়ে বুঝেছি যে, সেই দুর্বোধ্যতার উদ্দেশ্য অনেকাংশে মার্ক্সের মেডিয়োক্রিটিকে ঢাকা। যেমনটা ছাইপাঁশ টেকনিক্যাল পেপারের জার্গন!


কাতিউশা নামের এই গানটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে লেখা-গাওয়া, এখনো পপুলার। দেশাত্মবোধক এ গণসঙ্গীতের সুর বিপ্লবী ধাঁচের মনে হলেও, এতে বিপ্লবের ব-ও নেই, সুরটাও ফোক্। এতে কাব্যিক ভাষায় বর্ণিত হয়েছে সুদূর যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধরত প্রেমিকের জন্যে কাতিউশা নামের এক তরুণীর ভালবাসার স্বীকারোক্তি।


বিশ্বযুদ্ধের আগের রুশ দেশাত্মবোধক গানগুলি বিপ্লবী হোয়াইটওয়াশে সয়লাব থাকলেও, যু্দ্ধের সময় স্তালিনগোষ্ঠীকে নিজেদের চামড়া বাঁচাতে জনগণের চেতনানিয়ন্ত্রণে কিছুটা ছাড় দিতে হয়েছিল — আমার মনে হয় এ গানটা তার একটা নমুনা, তাই এখনো জনপ্রিয়। যুদ্ধপূর্বযুগে স্তালিনের বিভিন্ন জোর করে চাপিয়ে দেয়া নিয়মের ফলে দুর্ভিক্ষে-লেবার ক্যাম্পে দু’কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তিরিশের দশকের ইউক্রেনে সোভিয়েত সরকারের তৈরি দুর্ভিক্ষের দিনগুলিকে হলোকস্টের মত বলে হলোদোমোর (যে কারণে ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীরা নাৎসিদের হাতে হাত মিলিয়ে রাজাকারি করেছিল)।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন নাৎসি আগ্রাসনের ফলেও বিপুল প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, তার অনেকটা তাদের পোড়ামাটি স্ট্র্যাটেজির কারণে। সোভিয়েত সাধারণ জনগণও প্রাণ বাঁচাতে আর প্রতিশোধ নিতে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ইউরোপীয় যুদ্ধের ম্যানু্য়ালের প্রথম নিয়মটা ভেঙ্গে হিটলার নাপোলেওনের মত ভালমত ফেঁসে গেছিলেন — নিয়মটা হলো, নেভার এভার মার্চ অন মস্কো! অপরদিকে, জার্মানি দখলের সময় প্রতিশোধপরায়ণ রুশ সেনারাও সমানে সাধারণ জার্মানদের ওপর হত্যা-ধর্ষণ-লুটতরাজ চালায়।


গানের সাথে যে ভিডিওটা জোড়া লাগানো, সেটা একটা সোভিয়েত প্রোপাগান্ডা ফিল্ম থেকে নেয়া। শুরুর ফ্রেমের তিন সেনার মাঝখানের জন সম্ভবত ফিল্ড মার্শাল ঝ়ুকভ — টি-৩৪ ট্যাংক আর ‘কাতিউশা’ নামেরই ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল ব্যবহার করে জার্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের অন্যতম মহানায়ক। স্তালিনের বিরুদ্ধমতে অন্য কেউ কথা বলার সাহস না পেলেও ঝ়ুকভ বলতেন। জার্মানিবিজয়ের সময় রুশ সৈন্যদের প্রতি তিনি বলেছিলেন, নাৎসিবাদকে ঘৃণা করো, কিন্তু জার্মান জনতাকে নয়। পশ্চিমা সেনানায়ক মন্টগোমারি-আইজেনহাওয়ারের সাথেও তাঁর বহুদিন বন্ধুত্ব ছিল। যুদ্ধের পরে স্তালিন নিজের গদি অটুট রাখার জন্যে ঝ়ুকভকে সুদূর উরালে পাঠিয়ে দেন, যাতে রাজনীতিতে অংশ নিতে না পারেন। কমিউনিজমের পতনের পরে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির মানুষ লেনিন-স্তালিনের মূর্তি ভূপাতিত করলেও ঝ়ুকভকে সরায়নি।


ভিডিওটিতে আরো দেখবেন যে ফ্যাক্টরিতে বাচ্চারা-মেয়েরা কাজ করছে। সোভিয়েতসহ পশ্চিমা দেশগুলিতে ছেলেরা সবাই যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার ফলে মেয়েদের ঘরকন্নাসহ চাকরিবাকরিও করতে হয়েছে। পশ্চিমাদেশে নারীস্বাধীনতা আন্দোলন এ সময়েই হালে পানি পাওয়া শুরু করে। রুশদেশে ততটা নয়।


ভিডিওর শেষে কাতিউশা নামের রকেট লঞ্চার থেকে রকেট উৎক্ষেপণের দৃশ্য শব্দসহ দেখানো হয়েছে। আর্টিলারি হিসেবে এই অস্ত্র ছিল খুবই কার্যকর, কারণ খুব দ্রুত অনেকগুলি রকেট ছুঁড়ে শত্রুর মনে ত্রাস সৃষ্টি করতো এটা। যদিও এদের টিপসই নির্ভুল ছিল না।


গানটা গেয়েছে আলেক্সান্দ্রভ রেড আর্মি কয়ের বলে একটা দল। ১৯২৯ সালে কমিউনিস্ট শাসনামলে দলটির যাত্রা শুরু, মূল লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক মুখপাত্র হিসাবে কাজ করা। পূর্ব জার্মানিতে যুদ্ধের পরে একটা পীস কনসার্ট করেও বেশ জনপ্রিয় হয়। ৯০এর দশকে কমিউনিজমের পতনের পরেও টিকে ছিল। ২০১৬র ২৫শে ডিসেম্বরে সিরিয়ায় একটা ক্রিসমাস পারফরম্যান্স করে ফেরার পথে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিমান দুর্ঘটনায় দলটির ৬৪জন সদস্য প্রাণ হারায়।

(এখানে গানটির কথা ও মানে।)

সাহারার তুয়ারেগ

Featured Video Play Icon

উত্তর আফ্রিকার লিবিয়া, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরোক্কো — এই দেশগুলিকে আমরা জানি আরব-অধ্যুষিত হিসাবে। কিন্তু এই এলাকার আদিবাসীরা আরব নয়, কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানও নয়। গ্রীক-রোমান-যুগ থেকে তাদেরকে ভিনদেশীরা চেনে ‘বেরবের’ নামে; যদিও তারা নিজেদের বলে ‘আমাজ়িগ’ — যার অর্থ মুক্ত মানুষ। এখন মূলত আরবী বা ফরাসীতে কথা বললেও উপরের দেশগুলির একটা বড় জনসংখ্যা বেরবের।


জ়িনেদিন জ়িদানের বাবা-মা আলজেরিয়ার কাবিল উপজাতির আমাজ়িগ। মরোক্কোর পরিব্রাজক ইবনে বতুতাও ছিলেন আমাজ়িগ বংশোদ্ভূত। খ্রীষ্টান সেন্ট অগাস্টিনও তাই। রোমসম্রাট সেপ্টিমিয়াস সেভেরাসের ধমনীতেও ছিল বেরবের বংশধারার রক্ত। রোমের সৈন্যদলের একটা অংশও একসময় ছিল বেরবের মাউরি যোদ্ধাদের দিয়ে তৈরি, যাদের নাম থেকে পরে মুর বা মোরো শব্দটা এসেছে।


তারিক ইবনে জ়িয়াদ ছিলেন আরব-বিজিত ইফ্রিক্বিয়া (এখনকার তিউনিসিয়ায়) প্রদেশের গভর্নর মুসা ইবনে নুসাইরের ক্রীতদাস। জ়ানাতি বেরবের বংশে তার জন্ম, তাঁকে মুক্তিদানের পরে অষ্টম শতকে আরব-বেরবের সৈন্যদল নিয়ে উমাইয়্যা খলিফাদের হয়ে স্পেনবিজয় করেন। তার নামেই জিব্রাল্টার (জাবাল-আল-তারিক)।


স্পেনের দ্বাদশ শতাব্দীর রাজবংশ আলমোহাদ-আলমুরাবিতরা ছিল আরবীকৃত বেরবের। এসময় স্পেনের জামিয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইউরোপীয়রা দর্শন-বিজ্ঞানের শিক্ষা পেয়েছে মাইমোনিডিস-ইবনেসিনা-ইবনেরুশদের মত মনীষীদের লেখা পড়ে। আলহামরা প্রাসাদের মুরিশ শিল্পশৈলী বেরবের-আরবদের যৌথ অবদান। আরব-বেরবের রান্নাও বিশ্বখ্যাত, যেকোন মরোক্কান রেঁস্তোরাতে সেটা আস্বাদন করতে পারবেন।


উমাইয়্যা আরব শাসনের সময় এই মুক্ত জনগোষ্ঠীর ওপর জোর করে আরবী কৃষ্টি আর অনারব দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকত্ব ও কর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঊনবিংশ শতকে ফরাসী-ইতালীয় ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী চাপিয়েছে ইউরোপীয় ভাষা-সংস্কৃতি। প্রতিবারই তারা বিদ্রোহ করেছে।


নিচের গানটা তু্য়ারেগ নামে আমাজ়িগদের একটা বড় উপজাতির শিল্পীদের গাওয়া, সাথে মার্কিন ব্লুজ মিশানো, মালির কৃষ্ণাঙ্গ ঘরানারও প্রভাব আছে। দলটার নাম তিনারিওয়েন, গানের ভাষা তামাশেক। তুয়ারেগদের বাস আলজেরিয়া, লিবিয়া, মরিতানিয়া, মালি, নিঝ়ের, বুরকিনা ফাসোর দেশসীমাবিহীন সাহেল নামে সাহারা মরুভূমির পশ্চিমাংশে। যাযাবর এই গোত্রের অন্নসংস্থানের উপায় গোচারণ আর ‘সাবসিস্টেন্স ফার্মিং’।


তিনারিওয়েনের সদস্যরা উত্তর মালির সাহারার বাসিন্দা। ষাটের দশকে মালি স্বাধীন হবার সময়ে তামাশেকরা চেয়েছিল নিজেদের জন্যে আলাদা দেশ — আজ়াওয়াদ। তার পরিবর্তে সোভিয়েত-সমর্থিত মালির কৃষ্ণাঙ্গপ্রধান একদলীয় শাসকরা তুয়ারেগদের অধিকার পদদলিত করার ফলে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়, তাতে প্রাণ হারায় অনেক নির্দোষ তুয়ারেগ, গৃহহারা হয় আরো অনেক।


এই গানটার ভোক্যাল ইব্রাহিম আগ্ আলহাবিবের চার বছর বয়সে তার বাবা সেই বিদ্রোহে প্রাণ হারায়। পরিবারের নারী সদস্যদের সাথে এই এতিমরা ঘুরে বেড়ায় আলজেরিয়া-লিবিয়ার এক রেফ্যুজি ক্যাম্প থেকে আরেকে। গীটার শিখে পশ্চিমাগানের সাথে তুয়ারেগ সঙ্গীত মিলিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার সাথে সাথে হাতে অস্ত্রও তুলে নেয় নব্বইয়ের দশকের আরেক বিদ্রোহে। ২০০০এর দশকেও আরেকটা বিদ্রোহ হয়। এরপরে একটা শান্তিচুক্তির ফলে তুয়ারেগদের অধিকার মালিতে মোটামুটি স্বীকৃত এখন। এই শান্তিচুক্তির পিছনে তিনারিওয়েনের মত দলের সাংস্কৃতিক গ্লোবাল আউটরীচের অবদান অনেক বড়।


তারপরেও ইউরেনিয়ামের মত খনিজ পদার্থ সংগ্রহ আর খরা-মরুকরণের ফলে চাষের সামান্যতম জমি ধ্বংস হওয়ায়, আর অন্যান্য অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবে, দরিদ্র সুন্নি সুফীমতানুসারী তুয়ারেগদের জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক অভিযোগ আর কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে ফেরত সালাফী ইসলামী জিহাদীরা গাদ্দাফীর ক্যাম্পে প্রশিক্ষিত-অস্ত্রসজ্জিত স্বাধীনতাকামী তুয়ারেগদের সাথে যোগ দিয়ে ২০১২ সালে আরেকটা বিদ্রোহ করে, যার ফলে ঘরবাড়ি ছাড়া হয় ৬ লাখ মূলত তুয়ারেগই।


সেসময় ইসলামী কট্টরপন্থীরা মালির ঐতিহাসিক তিমবাক্তু শহর দখল করে নেয়, ‘শরিয়া আইন’ চাপিয়ে দেয় আর শহরটির ইউনেস্কোচিহ্নিত ঐতিহ্যবাহী মসজিদ-মিনার-মাজার এগুলোর ধ্বংসসাধন করে। ২০১০এ দক্ষিণ আফ্রিকার ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গানপরিবেশনকারী তিনারিওয়েনের এক সদস্যকেও তারা গ্রেফতার করে নির্যাতন করে আর গানবাজনা বন্ধ করে দেয়। ফরাসী সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মালির সরকার অবশেষে এদের হটাতে সমর্থ হয়। আর আজ়াওয়াদপন্থী স্বাধীনতাকামীরাও দল বদলে মালির সেনাবাহিনীকে সাহায্য করে। এখনো মালিতে ফরাসী আর নিঝ়েরে মার্কিন সৈন্য আছে এসব দুর্গম অঞ্চলে জঙ্গিদের ঠেকিয়ে রাখার জন্যে।


এই গানটিতে দেখবেন মুসলিম তুয়ারেগ পুরুষদের মুখ ঢাকা, কারণ তাদের আদি ঐতিহ্যে নারী নয়, পুরুষরাই মুখ ঢাকে! তুয়ারেগ নারীরা মাথায় কাপড় দিলেও সাধারণত পুরো মুখমন্ডল আবৃত করে না, আর সকল ধরনের কর্মকান্ডে সমান অংশগ্রহণ করে। অতীতের কোন এক সময় তুয়ারেগ পরিবারব্যবস্থা মাতৃকুলভিত্তিক ছিল বলেই নৃতত্ত্ববিদদের ধারণা। এই গানে তেনেরে বলে সাহারার এক এলাকার অপার্থিব সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে। একইসাথে মরুবাসী তুয়ারেগের অসহায়ত্ব বর্ণিত হয়েছে দুই শব্দে — আমান ইমান, পানিই জীবন।

গানের কথা আর অর্থ এখানে পাবেন।

ঐ তারকাখচিত আচ্ছাদনের ঊর্ধ্বে এক স্নেহময় পিতা অবশ্যই আছেন!

Featured Video Play Icon

আস্তিক হোন কিংবা নাস্তিকই হোন, একথা অস্বীকার করা খুবই কঠিন যে, মানুষের মস্তিষ্কের জৈবরাসায়নিক কম্পোজিশনের মধ্যে মহান অবিনশ্বর কোন শক্তিতে বিশ্বাস আর ‘স্বর্গীয়’ অনুভবের ক্ষমতা মজ্জাগতভাবে প্রোথিত।


অর্গানাইজড রিলিজিয়ন মানুষের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহের জন্ম দিলেও ধর্ম অতীতের একেকটা সভ্যতাকে দিয়েছিল একক অবিভক্ত পরিচয়। আর সেসব ধর্মের লক্ষ্য ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে প্রথমত সমসত্ত্ব গোষ্ঠীদের নিজেদের মধ্যে নৈতিকতা আর ন্যায়পরায়ণতার প্রতিষ্ঠায়। তারপর তাদের মূল্যবোধের সম্প্রসারণ হয়েছে অন্য জাত-ধর্মের মানুষকে নৈতিকতার ছত্রতলে এনে, এক ধর্মের বিশ্বাস প্রভাবিত করেছে অন্য ধর্মকেও।


রেনেসাঁস-পরবর্তী যুগের ইউরোপের মনীষীরা অন্যান্য জাতি, ভাষা আর ধর্ম — বিশেষত প্রাচ্যের ইসলাম, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্ম — সম্পর্কে খুবই কৌতূহলী ছিলেন। তাঁদের জ্ঞান যত বাড়তে থাকলো, তত তাঁদের বোধোদয় হলো যে, একমাত্র খ্রীষ্টধর্মই যে মানুষের আত্মিক সকল চাওয়া-পাওয়ার একমাত্র উত্তর, এধরনের প্রাক-রেনেসাঁস ও রেনেসাঁসযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি খুবই সংকীর্ণ ও দাম্ভিকতাপূর্ণ


ফলশ্রুতিতে ভলতেয়ার-মঁতেস্কিউ-পেইনের মত চিন্তাবিদরা যীশুখৃষ্টের আধ্যাত্মিকতাবাদের সাথে প্রাচীন গ্রীস আর মধ্যযুগীয় ইসলামী মনীষীদের যুক্তিবাদী ধ্যানধারণার মিশ্রণের বীজ থেকে উৎপন্ন যে চারায় পানি ঢালা শুরু করলেন, সেটা হলো সার্বজনীন মানবতাধর্মের মতবাদ বা হিউম্যানিজম। আমেরিকার স্থপতিরা টমাস পেইনেরই চিন্তাশিষ্য ছিলেন। মার্কিন সংবিধানের প্রণেতা জেফারসন আর ‌অ্যাডামসের সংগ্রহে বাইবেলের পাশাপাশি তানাখ, কুরান আর গীতা ছিল।


এরকম এনলাইটেনমেন্টের যুগে জন্ম বীটোফেন আর শিলারের। নিচের ভিডিওতে প্রখ্যাত বার্লিন ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রা প্রয়াত কন্ডাক্টর হার্বার্ট ফন কারায়ানের পরিচালনায় পরিবেশন করছে বীটোফেনের নবম সিম্ফনির শেষ ‘কোরাল’ অংশটা। সাধারণত শুধুমাত্র বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সিম্ফনি কম্পোজ করা হতো। বীটোফেনের নবম হলো সিম্ফনির জগতে কোরাল বা গণসঙ্গীতের প্রথম সফল সূচনা। কোরাল অংশে যে গানটা গাইছে বাস-তেনর-আলতো-সোপ্রানোরা, সেটা শিলারের লেখা কবিতা ‘আন ডি ফ্রয়ডা’ — ‘আনন্দের উদ্দেশ্যে’।


আমার কাছে এই সিম্ফনিটা প্রার্থনাসম! ২৪ মিনিটের হলেও একটু সময় করে শুনে দেখুন! ডাবল বাস্ আর হর্ন সেকশনের গম্ভীর মিউজিক দিয়ে শুরু। এ যেন পুরনো ঘুনেধরা সংকীর্ণ মনোভাবের হতোদ্যম নাভিশ্বাস। অথবা ধরতে পারেন নাপোলেওনের ধ্বংসযজ্ঞে বিধ্বস্ত ইউরোপের নানাজাতের মানুষের ক্লান্তি। তার পরে ক্লারিনেট-ভায়োলিন-ওবো এসে যোগ দিলো সেযুদ্ধে বিজয়ী বীরদের গাঁথা গাইতে, সেও সনাতন সাম্রাজ্যের শৌর্যিক মূল্যবোধেরই নমুনা। এমন সময় বাস সোলোয়িস্ট এসে ভেঙ্গেচুড়ে দিলেন সব: “ও ফ্রয়ন্ডা, নিশ্ট ডিজা ট্যোনা…” — বন্ধু, এ লহরী আর নয়, এসো আজ উৎফুল্লতার গান গাই!


তারপরে শিলারের কাব্য থেকে একে একে উচ্চারিত হলো সকল মানুষের ভ্রাতৃত্ব আর স্বর্গীয়তার ঘোষণা! সেখানে জাতপাত আর ধর্মের বিভাজন নেই, আছে কেবল মনুষ্যত্ব! প্রকৃতিমাতার স্তন্যপানে ভাল-মন্দ সকল জীবের সমাধিকার! বন্ধুত্বের প্রমাণ সেখানে মৃত্যু দিয়ে হলেও তা আনন্দের উচ্চতম শিখর! মানুষ ভাগ্যের কাছে হতদরিদ্র জিম্মি নয়, তার আছে ললাটলিখনকে খন্ডানোর অপরিসীম ইচ্ছাশক্তি! আর আছেন স্রষ্টা! “জাইড উম্শ্লুঙেন, মিলিওনেন! ডিজেন কুস ডের গানৎসেন ভেল্ট!” — কোটি জনতা আলিঙ্গনাবদ্ধ, এই চুম্বন সমগ্র বিশ্বের! ব্র্যুডের, উ্যবার্ম শ্টের্নেনৎসেল্ট, মুস আইন লিবের ফাটার ভো’নেন!” — ভাইয়েরা, ঐ তারকাখচিত আচ্ছাদনের ঊর্ধ্বে এক স্নেহময় পিতা অবশ্যই আছেন!


১৮২২এ এই সিম্ফনি লেখার আগে ১৮০০ সালের দিকে ত্রিশবছরবয়সী বীটোফেন বধির হতে শুরু করেন, আর সেই বেদনায় তাঁর মনে এসেছিল আত্মহননের চিন্তা। হয়ত তিনি সেই ললাটলিখনকে জয় করেই আরো সাতাশ বছর বেঁচে ছিলেন নবম সিম্ফনিসহ অনেক কালজয়ী স্বর্গীয় সুরলহরীর জন্ম দিতে!

কসাক নৃত্য ও তেভিয়ে

Featured Video Play Icon

১৮৮১ সালের কথা। রাশিয়ার ৎসার তখন দ্বিতীয় আলেকজান্ডার। এই সম্রাট ১৮৬১তে রুশদেশে ভূমিদাসপ্রথা বিলুপ্ত করার আদেশ জারি করেছিলেন। এ ছিল আমেরিকায় ক্রীতদাসপ্রথা উচ্ছেদের মত যুগান্তকারী ঘটনা, যদিও এই সংস্কার ছিল ‘উপর থেকে চাপানো’। গ্রামের চাষারা জমির আর সম্পত্তির মালিকানার অধিকার পেলো ঠিকই, কিন্তু সেই সাথে কপালে জুটলো করপ্রদানের দায়িত্ব। অনেকে মুক্তি পেয়ে গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমালো শহরের দিকে। রুশ শৈল্পিক বিপ্লবের হাওয়ায় তারা বনে গেল শ্রমিক-মজুর। নব্য শিল্পপতিরা তাদের যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ নেয়া শুরু করলো। ফলপ্রসূ চাষাদের পরবর্তী প্রজন্মের নব্যশিক্ষিত মধ্যবিত্ত ছাত্ররা গোপন বিপ্লবী সংগঠনে অংশ নেয়া শুরু করলো। আলেকজান্ডার প্রথমদিকে কিছুটা সংস্কার করলেও সাধারণ জনগণকে সাংবিধানিক ক্ষমতা দিতে ছিলেন চরম নারাজ। ১৮৮১ সালে তাঁকে তার মাসুল দিতে হলো নারোদনায়া ভোলিয়া (জনতার সংকল্প) নামের গুপ্ত সংগঠনের আততায়ীর বোমায় নিহত হয়ে।

প্রতিশোধস্বরূপ গুপ্ত সংস্থাগুলির নেতাদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো, এদের একজনমাত্র ছিল ইহুদী। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো, বাদবাকি জনগণের মনোযোগ আততায়ীদের ন্যায্য দাবিদাওয়া থেকে দূরে সরিয়ে সংখ্যালঘু ইহুদিদের বিরুদ্ধে জনমনে ঘৃণা আর সন্দেহ ছড়ানো শুরু হলো। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে গ্রামছাড়া করলো তাদেরই শতবছরের পড়শী রাশিয়ার সংখ্যাগুরু অর্থডক্স খ্রীষ্টান স্লাভ জাতির মানুষেরা। অনেকে রুশদেশ ছেড়ে মার্কিনে পাড়ি জমায়, আর একটা ছোট অংশ — যারা হয়ত একটু বেশি ধার্মিক — তারা এসে হাজির হয়ে যায় তুর্কী ওসমানলি সাম্রাজ্যের অন্তর্গত প্যালেস্টাইন প্রদেশে। প্যালেস্টাইনে তখন সেফার্দী মাজহাবের যে ইহুদীরা ছিল তারা আরবীতেই কথা বলতো, পোশাক-আশাকও ছিল তুর্কীদের মতই। রাশিয়া আর পূর্ব ইউরোপের আশকেনাজি মাজহাবের ইহুদীরা তুরস্কের সেকেলে অভিবাসন আইনের সুযোগ নিয়ে জমিজমা কিনে থিতু হয়ে বসল। ইহুদিদের সংখ্যা এইভাবে রাতারাতি দ্বিগুণ হওয়া সত্ত্বেও সেসময় তারা তাদের আরব বেদুঈন পড়শীদের সাথে মোটামুটি শান্তিতেই বসবাস করত।

যাই হোক, তার পরে আরো অনেক জল গড়িয়ে গেছে, সে সবারই জানা। আমার উদ্দেশ্য ছিল নিচের ভিডিওটির একটা যথোপযুক্ত ভূমিকা দেয়া। এটি নেয়া হয়েছে ১৯৭১ সালের হিট মিউজিক্যাল ‘ফিডলার অন দ্য রুফ’ থেকে। কাহিনীর মূলচরিত্র তেভিয়ে ১৮৮০এর সময়কার রুশদেশের একটা ছোট গ্রাম আনাতিয়েফকার ইহুদী বাসিন্দা। তাদের পাশাপাশি স্লাভ রুশ অর্থডক্স খ্রীষ্টানদেরও বসবাস। তেভিয়ে একটা পানশালায় গেছে লেজার উল্ফ নামে এক বুড়ো কসাইয়ের সাথে। তেভিয়ে তার বড় মেয়ে ৎসাইতেলের মতামত না নিয়েই লেজার উল্ফের বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করে ফেলেছে, এই ভেবে যে পাত্র বয়স্ক হলেও কসাইব্যবসার পয়সায় কন্যা সুখে থাকবে। (আসলে কি হয়েছিল শেষ পর্যন্ত, সেটাও মজার কাহিনী! জানতে হলে মুভিটা দেখুন — ইউটিউবে আছে।)

লেজার উল্ফ আনন্দের আতিশয্যে পানশালার সবাইকে শ্ন্যাপস খাওয়াচ্ছে, আর সবাই মিলে গান ধরেছে ল্যখাইম — যার অর্থ ‘জীবনের উদ্দেশ্যে’, জীবনে সুখ-দুঃখ যাই আসুক না কেন সবই জলীয়পান করে আনন্দ-উদযাপনের উপযুক্ত। ইহুদীদের নাচগানে বাগড়া দিলো পানশালার উল্টোপ্রান্তে জটলাবাধা রুশ কৃষকের দল। তারা নতুন যুগলের শুভকামনায় বালালাইকার সুরে গান আর কসাক নৃত্য শুরু করে দিল। নাচতে নাচতে দু’দলে ঠোকাঠুকি! সেই দৃশ্যের সন্দেহ আর সাবধানতা ভারি করে তুলেছে পানশালার বাতাস। রুশ চাষা বাউ করে তেভিয়েকে নিমন্ত্রণ করলো একত্রে নাচার জন্যে। কিন্তু ইহুদীদের যে খোদা ছাড়া কারো সামনে মাথানত করা নিষেধ! তেভিয়ে পাল্টা বাউ করলো ঠিকই, কিন্তু একটু তেরচা করে, যেন রুশী তার সরাসরি সামনে না পড়ে। অতঃপর বাড়ানো হাতটা লুফে নিলো, আর দু’দলে মিলে একাত্ম হয়ে গেল নাচতে নাচতে!

পুরো মিউজিক্যালটা দেখার মতো! তেভিয়েদের ট্র্যাডিশন্যাল সামাজিক-পারিবারিক আচার আর তাদের রাজনৈতিক অবস্থা কত দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে, সেটি আমাদের দেশ-সমাজ-ধর্মীয় পরিচয়ের বিবর্তনেরই যেন একটা প্রতিচ্ছবি। আর তার মধ্যে এই গানটা আমার প্রিয় সঙ্গত কারণেই!

গানের লিরিকস এখানে

লাচো দ্রোমঃ যাত্রা হোক শুভ

Featured Video Play Icon

জাত-বর্ণবিদ্বেষ, পরমতঅসহিষ্ণুতা পৃথিবীতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিতে, ধর্মে, ভাষায় আর দেশে বিভক্ত মানুষ অনেক বেশি ট্রাইব্যাল হয়ে যাচ্ছে। একে অন্যের উপর আস্থা রাখতে পারছে না, সন্দেহ আর ভয় পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে ঘৃণায়।

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে যখন ভয় হয়, তখন বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করি দেশ-বিদেশের সুরসঙ্গীত শুনে। মিউজিক সার্বজনীন মনুষ্যত্বের ভাষা। কথার মানে যে সবসময় বুঝতে লাগে তা না, সুরের মধ্যেই ভাবটা অর্ধেক প্রকাশিত হয়ে যায়। এভাবে শুনতে শুনতে দেশবিদেশের অনেক রকম এথনিক-ট্র্যাডিশন্যাল-ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের সাথে পরিচিত হয়েছি। সামনের দিনগুলিতে সেগুলির কয়েকটা ছোট ছোট বিশ্লেষণসহ শেয়ার করার আশা রাখি।

আজকের ভিডিওটা ‘লাচো দ্রোম’ নামের একটা ডকুমেন্টারি থেকে নেয়া। এতে রোমানিয়ার ‘তারাফুল হাইদুচিলর’ নামের একটা জিপসিদল ভায়োলিন, অ্যাকোর্ডিয়ন, বাঁশি, চিম্বালম নামে সন্তুরের মত একটা বাদ্যযন্ত্র — এসব দিয়ে একটা আনন্দঘন নাচের উপযোগী সঙ্গীত তুলেছে।

জিপসিদের ইতিহাসটা অবশ্য এরকম আনন্দময় ছিল না। প্রায় এক হাজার বছর আগে তারা পশ্চিম ভারত থেকে ইউরোপের দিকে যাত্রা শুরু করে — অনেকের হিসাবে আমাদের দেশের বেদেরা এদেরই একটা অফশুট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিবাহিনী আর তাদের হাঙ্গেরীয়, রোমানিয়ান, স্লোভাক, ইউক্রেনীয় কট্টর জাতীয়তাবাদী দোসররা ইহুদিদের সাথে সাথে পূর্ব ইউরোপের রোমা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক জনগণকে এক্সটারমিনেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে হত্যা করে। পরে রোমানিয়ার কম্যুনিস্ট ডিক্টেটর চওসেস্কুর সময়েও এরা অনেক নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। স্পেইনের ফ্রাংকো সরকারও সেখানকার ফ্লামেংকো নৃত্যসঙ্গীতের পুরোধা হিতানো জিপসিদের ওপর অনেক অত্যাচার চালিয়েছে

ইউরোপের অনেক দেশে এখনো রোমানি বা জিপসিদের দেখা হয় অস্পৃশ্য পরদেশী হিসাবে (জিপসি শব্দটা তাদের পছন্দ না, রোমানি পলিটিক্যালি কারেক্ট)। যদিও তারা সেসব দেশে শ’ শ’ বছর ধরে বসবাস করছে, ঠিকানাবিহীন ভবঘুরে হবার কারণে তাদের অনেকের ভোটাধিকার বা সিটিজেনশিপের কাগজপত্র নেই। ইতালির নতুন অতিডানপন্থী সরকারের অভ্যন্তরীণবিষয়ক মন্ত্রী ও নর্দার্ন লীগের সেক্রেটারি মাত্তেও সালভিনি ক’দিন আগে বলেছেন যে রোমাদের শুমারি করে যাদের কাগজপত্র নেই তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়া দরকার। সব জাতির জনগণের শুমারি না করে শুধু রোমাদের টার্গেট করে এ মন্তব্য কেন করা হয়েছে, সেটা ভেবে অনেকে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণ করে ভীত।

এই ভিডিওটির সুরের মধ্যে তুর্কী ও ইহুদী ক্লেজমার ধাঁচের একটা প্রভাব আছে। পূর্ব ইউরোপে রোমানিরা এসেছিল তুরস্ক-মিশর হয়েই (জিপসি শব্দটার শব্দমূল ‘ঈজিপ্শীয়ান’)। আর পূর্ব ইউরোপের ইহুদীরা একসময় বলতে গেলে জিপসিদের মতই স্থাবরসম্পত্তিহীন ভবঘুরেই ছিল। অতএব ‘ফেলো ট্র্যাভেলার’ এই দুটো গ্রুপ পরস্পরের সঙ্গীত আর ভাষাকে প্রভাবিত করেছে।

 

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!