লাচো দ্রোমঃ যাত্রা হোক শুভ

জাত-বর্ণবিদ্বেষ, পরমতঅসহিষ্ণুতা পৃথিবীতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিতে, ধর্মে, ভাষায় আর দেশে বিভক্ত মানুষ অনেক বেশি ট্রাইব্যাল হয়ে যাচ্ছে। একে অন্যের উপর আস্থা রাখতে পারছে না, সন্দেহ আর ভয় পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে ঘৃণায়।

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে যখন ভয় হয়, তখন বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করি দেশ-বিদেশের সুরসঙ্গীত শুনে। মিউজিক সার্বজনীন মনুষ্যত্বের ভাষা। কথার মানে যে সবসময় বুঝতে লাগে তা না, সুরের মধ্যেই ভাবটা অর্ধেক প্রকাশিত হয়ে যায়। এভাবে শুনতে শুনতে দেশবিদেশের অনেক রকম এথনিক-ট্র্যাডিশন্যাল-ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের সাথে পরিচিত হয়েছি। সামনের দিনগুলিতে সেগুলির কয়েকটা ছোট ছোট বিশ্লেষণসহ শেয়ার করার আশা রাখি।

আজকের ভিডিওটা ‘লাচো দ্রোম’ নামের একটা ডকুমেন্টারি থেকে নেয়া। এতে রোমানিয়ার ‘তারাফুল হাইদুচিলর’ নামের একটা জিপসিদল ভায়োলিন, অ্যাকোর্ডিয়ন, বাঁশি, চিম্বালম নামে সন্তুরের মত একটা বাদ্যযন্ত্র — এসব দিয়ে একটা আনন্দঘন নাচের উপযোগী সঙ্গীত তুলেছে।

জিপসিদের ইতিহাসটা অবশ্য এরকম আনন্দময় ছিল না। প্রায় এক হাজার বছর আগে তারা পশ্চিম ভারত থেকে ইউরোপের দিকে যাত্রা শুরু করে — অনেকের হিসাবে আমাদের দেশের বেদেরা এদেরই একটা অফশুট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিবাহিনী আর তাদের হাঙ্গেরীয়, রোমানিয়ান, স্লোভাক, ইউক্রেনীয় কট্টর জাতীয়তাবাদী দোসররা ইহুদিদের সাথে সাথে পূর্ব ইউরোপের রোমা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক জনগণকে এক্সটারমিনেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে হত্যা করে। পরে রোমানিয়ার কম্যুনিস্ট ডিক্টেটর চওসেস্কুর সময়েও এরা অনেক নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। স্পেইনের ফ্রাংকো সরকারও সেখানকার ফ্লামেংকো নৃত্যসঙ্গীতের পুরোধা হিতানো জিপসিদের ওপর অনেক অত্যাচার চালিয়েছে



আরও পড়ুন বিজ্ঞাপনের পর...




ইউরোপের অনেক দেশে এখনো রোমানি বা জিপসিদের দেখা হয় অস্পৃশ্য পরদেশী হিসাবে (জিপসি শব্দটা তাদের পছন্দ না, রোমানি পলিটিক্যালি কারেক্ট)। যদিও তারা সেসব দেশে শ’ শ’ বছর ধরে বসবাস করছে, ঠিকানাবিহীন ভবঘুরে হবার কারণে তাদের অনেকের ভোটাধিকার বা সিটিজেনশিপের কাগজপত্র নেই। ইতালির নতুন অতিডানপন্থী সরকারের অভ্যন্তরীণবিষয়ক মন্ত্রী ও নর্দার্ন লীগের সেক্রেটারি মাত্তেও সালভিনি ক’দিন আগে বলেছেন যে রোমাদের শুমারি করে যাদের কাগজপত্র নেই তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়া দরকার। সব জাতির জনগণের শুমারি না করে শুধু রোমাদের টার্গেট করে এ মন্তব্য কেন করা হয়েছে, সেটা ভেবে অনেকে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণ করে ভীত।

এই ভিডিওটির সুরের মধ্যে তুর্কী ও ইহুদী ক্লেজমার ধাঁচের একটা প্রভাব আছে। পূর্ব ইউরোপে রোমানিরা এসেছিল তুরস্ক-মিশর হয়েই (জিপসি শব্দটার শব্দমূল ‘ঈজিপ্শীয়ান’)। আর পূর্ব ইউরোপের ইহুদীরা একসময় বলতে গেলে জিপসিদের মতই স্থাবরসম্পত্তিহীন ভবঘুরেই ছিল। অতএব ‘ফেলো ট্র্যাভেলার’ এই দুটো গ্রুপ পরস্পরের সঙ্গীত আর ভাষাকে প্রভাবিত করেছে।

 



আরও পড়ুন বিজ্ঞাপনের পর...




মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!