১৯২১ সালের জুলাই মাস। রুশ সাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কির একটি ছোট্ট লেখা প্রকাশিত হল নিউ ইয়র্ক টাইমসে—
“অন্নদাত্রী স্তেপভূমি খরাগ্রস্ত। কোটি মানুষের রুশ জনপদ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। উপর্যুপরি যুদ্ধ ও বিপ্লবে জনগণ ক্লান্ত, রোগজরার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নেই। … দুনিয়ার সকল সৎ ও সংস্কৃতিবান ইউরোপীয় ও মার্কিন মানুষের নিকট আমার প্রার্থনাঃ তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, মেন্দেলেভ, পাভলভ, মুসর্গস্কি, হ্লিংকার দেশের মানুষকে দ্রুত রুটি আর ওষুধ দিয়ে সাহায্য করুন।…”
এই আকুল আবেদনটি আরো অনেকের মত নজর কাড়ে মার্কিন কমার্স সেক্রেটারি হার্বার্ট হুভারের। তিনি পরবর্তীতে হন যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম প্রেসিডেন্ট। গোর্কির এই আবেদনে সাড়া দেবার মত বিশ্বে আর কেউ সেসময় থেকে থাকলে ছিল আমেরিকা — আর হার্বার্ট হুভার।
গোটা ইউরোপ তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। গোর্কির আবেদনে সাড়া দেবার মত অবস্থায় নেই। ওদিকে হার্বার্ট হুভারের নেতৃত্বেই ইউরোপে বিপুল পরিমাণে খাদ্যবন্টন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তিনি বিভিন্ন মার্কিন ত্রাণকর্মের নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধ চলাকালে বেলজিয়ামে, যুদ্ধের পর অস্ট্রিয়া-পোল্যান্ড ও পূর্ব ইউরোপে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে রক্ষা করে তার বদান্যতা।
অবশ্য এসবের পেছনে গূঢ় একটা লক্ষ্য তো ছিলই। যুদ্ধে পরাজিত দেশগুলি এত দুর্বল যে নাগরিকদের দেখভালের যথেষ্ট সামর্থ তাদের নেই। উল্টো ভের্সাই চুক্তিতে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বিশাল ক্ষতিপূরণের বোঝা। এ ব্যাপারে উইলসনের সাথে দ্বিমত ছিল হুভারের। তিনি নিলেন অন্য পথ। এসব দেশের ন্যুব্জ অর্থনীতি থেকে যদি খাদ্যাভাব সাধারণ মানুষকে পীড়িত করে, তাহলে আর দেখতে হবে না! রুশ দেশের মত পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের প্রতিটি দেশ একে একে বলশেভিক ধাঁচের বিপ্লবের সম্মুখীন হবে। যেমনটা প্রায় হয়ে গেছিল হাঙেরিতে।
আমেরিকায় তখন চলছে “রেড স্কেয়ার।” মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগে সেখানেও আছে কম্যুনিস্ট ও লেবার পার্টি। রাশিয়ায় বলশেভিকদের বিজয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে কারখানা শ্রমিকরা এদের সাথে যোগসাজশে ধর্মঘট, রায়ট, ভাঙচুর শুরু করে। মার্কিন সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন এতে খুব বেশি ছিল না। তাদের আশা ছিল সরকার এ অরাজকতা বন্ধ করবে। তাই হয়।
সে কারণে গোর্কির এই আবেদন দেখার পর হুভার একটু সাবধানতার সাথে জবাব দেন। রুশদেশে বলশেভিকদের বন্দী মার্কিনদের মুক্তি দেয়া হলে ত্রাণকার্য পরিচালনা করবে তার সংস্থা। তিনি ছিলেন প্রাইভেট নন প্রফিট এ আর এ — আমেরিকান রিলীফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান।
তাছাড়া গোর্কির থেকে আনঅফিশাল এ চিঠিটি আসলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পালের গোদা লেনিনের থেকে তো কোন আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আসেনি। তবে নেগোসিয়েশনের পাল্টা প্রস্তাব আসল গোর্কির মধ্যস্থতাতেই — লেভ কামেনেভের কাছ থেকে। আগস্টে বন্দীমুক্তির পর শুরু হল সে আলাপ।<
হুভার প্রথম প্রথম দোনমনায় ছিলেন। তার চিন্তা ছিল কম্যুনিজমের মত আদর্শের দ্রুত পতন জরুরী। এসময় তাকে টিকিয়ে দেয়া ঠিক নয়। আবার উইলসনের সরকার যেমন বলশেভিকদের বিরুদ্ধে ১৩,০০০ মার্কিন সৈন্য পাঠিয়ে রাশিয়ায় গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার পশ্চিমা অভিযানে অংশ নিয়েছিল, সেটার পক্ষেও সম্পূর্ণরূপে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি ঠিক করেন, সোভিয়েতদের বিনাশ করতে হবে, তবে অস্ত্র দিয়ে নয়, ত্রাণ ও দয়াদাক্ষিণ্য দিয়ে।
প্রথম দিকে ত্রাণকার্যের লক্ষ্য ছিল কেবল সোভিয়েত শহরগুলির অনাথাশ্রম। যুদ্ধ ও বিপ্লবের ডামাডোলে যে সকল শিশু এতিম হয়েছে, নয়ত পরিত্যাজ্য হয়েছে, তাদের জন্য শুরু হল ফান্ড কালেকশন। শুরুতে বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতায়। পত্রিকা, সিনেমা হলে রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়ে সংগৃহীত হল বিশাল অংকের অনুদান। সামান্য কয়েক সেন্ট থেকে শুরু করে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত দান করেন বহু মার্কিন।
সে দানে কেনা খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ নিয়ে পেত্রোগ্রাদ — পরবর্তী লেনিনগ্রাদ — শহরে হাজির হল হুভারের প্রতিনিধিরা। সেখানে শিশুদের কংকালসার অবস্থা দেখে তাদের চক্ষু চড়কগাছ! শুধু যে দু্র্ভিক্ষপীড়িত এরা তা নয়, অনেক ভুগছে মরণব্যাধি টাইফাসে। এসকল শিশুদের দিয়েই ক্লান্ত গলার স্বাগতম গীতি গাওয়ালো আশ্রমের সরকারী কর্মচারীরা। ভেজা চোখে অন্যদিকে চাইলেন এআরএ কর্মকর্তা বিল শ্যাফ্রথ ও তার সহকর্মীরা।
শহরের এ করুণ অবস্থা দেখে গ্রামাঞ্চলের ব্যাপারে কৌতূহল হল শ্যাফ্রথের। যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভল্গা নদীর উপত্যকায় সামারা, কাজান, উরাল, উফা প্রভৃতি বিস্তীর্ণ দুর্গম অঞ্চলে স্কাউটিংয়ের জন্য পাড়ি জমালো তার দলের লোকজন। যেমনটা সন্দেহ ছিল তার থেকে খারাপ অবস্থা গ্রাম্য মানুষের। তাদের নিজেদের ফলানো যা শস্য ছিল তা রিকুইজিশন করে নিয়ে গেছে লালবাহিনী, নিয়ে গেছে পরের মৌসুমে ব্যবহারের জন্য বেছে রাখা গমের দানা।
এ অঞ্চলের অধিবাসী শুধু রুশ নয়, কাজাখ-বাশকির প্রভৃতি মুসলিমপ্রধান জনপদও। সকলে কমবেশি দুর্ভিক্ষগ্রস্ত। গাছের ছাল, গুঁড়োকরা হাঁড়, খড় প্রভৃতি কাঁদার সাথে মিশিয়ে স্যুপ বানিয়ে খাচ্ছে এরা। নোংরা বাসস্থানের উঁকুন আর অপুষ্টি থেকে টাইফাস রোগের প্রাদুর্ভাব। যত দিন যাচ্ছে, তত রিপোর্ট আসছে ক্যানিবালিজমের — কোন ক্ষেত্রে কবর খুঁড়ে টাইফয়েডে মারা যাওয়া মৃতদেহের অবশেষ খাচ্ছে দুর্ভিক্ষপীড়িতরা। যাদের বাড়িতে বাচ্চা আছে তারা সন্ধ্যার পর তালা মেরে দরজা লক করে রক্ষা করছে বাচ্চাদের। কারণ ক্যানিবালিজমের প্রথম শিকার এরা। দুয়েকটা এমন কেসও বেরিয়েছে যেখানে মা তার অন্য শিশুর খাদ্যসংস্থানের জন্য হত্যা করেছে বড় সন্তানকে। এসকল হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল আসলেই। প্রপাগান্ডা নয়। রুশ রিপোর্ট আবিষ্কৃত হয়েছে পরে।
এ রিপোর্ট যখন হুভারের কাছে গেল তখন তার আর বুঝতে বাকি রইল না যে শুধু শহরের শিশুদের সাহায্য করে খাদ্যের চাহিদা মিটবে না। খাওয়াতে হবে কয়েক কোটি জনগণকে, রোপন করতে হবে পরবর্তী মৌসুমের বীজ। কংগ্রেসে দ্রুত রাশান ফ্যামিন রিলীফ অ্যাক্ট পাশ হল ডিসেম্বর ১৯২১এ। প্রথম ধাঁপে অনুমোদন হল ২০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য। পরের বছরে সেটি বেড়ে হল ৬০ মিলিয়ন ডলার। এখনকার হিসাবে সব মিলিয়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।
প্রায় ৩০০ জন মার্কিন কর্মকর্তা আর ১,২০,০০০ ইংরেজীতে পারদর্শী স্থানীয় রুশ সহকারীদের নিয়ে মধ্য রাশিয়ার বিশাল এলাকাকে কয়েকটি ডিস্ট্রিক্টে ভাগ করে কাজ শুরু করল এআরএ। বাল্টিক সাগরে মার্কিন জাহাজে করে এল টনকে টন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বৃত্ত গম ও ভুট্টা। কৃষ্ণসাগরের বন্দরেও নোঙর করল খাদ্যবাহী জাহাজ। ট্রেনে করে ভল্গার উজানে যেতে শুরু করল ত্রাণ। প্রতিদিন প্রায় ১.১ কোটি মানুষের খাদ্যসংস্থান হল আট-নয় মাসব্যাপী। লঙ্গরখানা খোলা হল ১৯ হাজার।
হুভারের এই ত্রাণকার্য যে কোন প্রকার বাঁধা ব্যতিরেকে হয়েছে তা কিন্তু নয়। স্মরণ করুন যে গোর্কি স্বয়ং হাটে হাঁড়ি না ভেঙে দিলে এ খবর পশ্চিমে বেরুতও না। দুর্ভিক্ষের আভাষ পাওয়া সত্ত্বেও অহেতুক বিলম্ব করে সোভিয়েত কেন্দ্রীয় প্রশাসন। ততদিনে মানুষ মারা যেতে শুরু করেছে। তারপর ট্রেনে করে কৃষ্ণসাগর থেকে এআরএ’র খাদ্য আনতে গিয়ে দেখা গেল অনেকগুলি কার লাপাত্তা। রাস্তাতেই গায়েব করে দিয়েছে রেলশ্রমিকেরা। সে ব্যাপারে অভিযোগ তুলতে রেল ইউনিয়ন পুরো রেলব্যবস্থায় এমন একটা জ্যাম তৈরি করে রাখল যে কয়েক সপ্তাহ ত্রাণ যেতে পারল না ভল্গায়। ট্রেনে উল্টো রাস্তায় ইউক্রেনে আসতে শুরু করল ক্ষুধার্ত মানুষ। ভল্গায় খাবার না পেয়ে মারা গেল কয়েক লাখ।
এ অবস্থায় শ্যাফ্রথ হুভারকে একটি আনএনক্রিপটেড চিঠি পাঠান। এর বক্তব্য সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ঠিকমত সাহায্য করছে না, যতদিন সে সাহায্য না আসে ত্রাণ পাঠানোতে যেন বিরতি দেয়া হয়। এটি পাঠানোর পরপরই লেনিন তদকালীন রেল কমিসারকে পদচ্যুত করে তার জায়গায় আসীন করেন ফেলিক্স জেরঝিনস্কিকে। রেল ব্যবস্থা আয়রন ফেলিক্সের ভয়ে আবার ঠিকমত চালু হয়। পুরো দুর্ভিক্ষে এভাবে প্রায় ৬ থেকে ১০ মিলিয়ন প্রাণ হারায়, যদিও এআরএ তার থেকে বেশি প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়।
শুধু যে এ ধরনের লজিস্টিকাল সমস্যার সম্মুখীন হয় এআরএ, তা নয়। গোর্কির সুপারিশে তাদের রাশিয়ায় ঢুকতে দিলেও লেনিন এদের ব্যাপারে ভীষণ সন্দেহগ্রস্ত ছিলেন। ত্রাণ বিলানোর অন্তরালে এরা গুপ্তচরবৃত্তি করছে কিনা, সাধারণ মানুষকে “প্রতিবিপ্লবী” বানানোর ষড়যন্ত্র করছে কিনা — এসব চোখে চোখে রাখার জন্য গুপ্ত পুলিশ চেকা থেকে লোক এসে তদারকি শুরু করে।
অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় রুশদের সাথেই চেকার টক্কর লেগে যায়। যেহেতু এআরএ’এর দরকার ছিল ইংরেজীভাষী ফীল্ড এজেন্ট এবং একমাত্র ৎসারের আমলের শিক্ষিত অভিজাত মানুষদের মধ্যেই এদের সংখ্যা বেশি, সেহেতু চেকার সাথে একটা সংঘাত লেগে থাকত এআরএ’র। এ ধরনের রাজনীতির ফাঁকে গোপনে এআরএ’র একটি জেলার ত্রাণকার্যের নিয়ন্ত্রণ চেকা নিয়ে নেয়। এবং এআরএ’র পুরো ত্রাণপ্রচেষ্টাকে বলশেভিক সরকারের বদান্যতা হিসাবে প্রচার করে। এই অপপ্রচার হটাতে এআরএ’কে তৈরি করতে হয় প্রচারণা পোস্টার। যাতে সাধারণ মানুষ বোঝে এই ত্রাণ বলশেভিকদের কিংবা তথাকথিত “মার্কিন প্রলেতারিয়াতের” কাছ থেকে আসেনি।<
লেনিন শেষ পর্যন্ত এতটা ক্ষিপ্ত হন যে মলোতভকে চিঠি লিখে বলেন যে কোন মূল্যে হুভারকে শাস্তি দিতে হবে। গুপ্তচর বলে কোন কিছু এআরএ’র মধ্যে তো ছিলই না, বরং স্থানীয় রুশদের সাথে তাদের এত সখ্যতা ছিল যে খুব সহজে গুপ্তচরবৃত্তির বানোয়াট দোষ চাপিয়ে তাদের উৎপাটন সম্ভব নয়। তখন নতুন দোষারোপ করা হল এআরএ’র ওপর। তারা নাকি অর্থডক্স চার্চের সোনায় বাঁধানো আইকন ও অন্যান্য মূল্যবান বস্তু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, বিনিময়ে আনছে খাদ্য। চার্চগুলোর ওপর এই আক্রমণও আসলে বলশেভিকদের কাজ। কিন্তু ধার্মিক সাধারণ মানুষকে এআরএ বিমুখ করাটাই উদ্দেশ্য।
লেনিনের আশা ছিল যে এআরএ’এর সাথে এই “সহযোগিতার” বিনিময়ে মার্কিনদের থেকে তার সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে। ১৯২২এ এসে যখন পরিষ্কার হল সেটা হবে না, তখন এআরএ বিরোধিতা আরো তুঙ্গে উঠল। ততদিনে এআরএ ৩.৪ কোটি টন খাদ্যত্রাণ সরবরাহ করেছে। টাইফাস, প্যারাটাইফয়েডের বিরুদ্ধে টীকা দিয়েছে কয়েক মিলিয়ন শিশুকে। পরবর্তী মৌসুমের গমের বীজ বপন শেষ।
এর ওপর বেরুল যে সোভিয়েত সরকার ইউক্রেন থেকে গোপনে শস্য বিদেশে রপ্তানি শুরু করেছে। অর্থাৎ একদিকে করছে রপ্তানি, আরেকদিকে চলছে দুর্ভিক্ষ। এ পর্যায়ে এসে এআরএ মিশনের আর কোন অর্থ হয় না। ফেব্রুয়ারি ১৯২৩ সালে তারা অফিস গুঁটিয়ে ফিরে যায় মার্কিন দেশে। রেখে যায় দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচানো এক পুরো জেনারেশন, তাদের সাহায্য করতে এসে টাইফয়েডে মৃত্যুবরণ করা স্বেচ্ছাসেবকদের কবর, আর কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায় রুশ ভার্যা। সোভিয়েত সরকার তাদের পুরো কার্যক্রমকে ডিসক্রেডিট করে মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি অপারেশন হিসাবে।
তবে এআরএ’এর স্মৃতি রয়ে গেছিল রুশদের মাঝে। কর্নেল বেল নামে এক এআরএ কর্মকর্তা উরালের নিকটবর্তী রুশ, বাশকির ও কাজাখদের এতটাই স্নেহভাজন হন যে স্থানীয় মুসলিম ইমামরা তাকে অনুমতি দেন তাদের মসজিদে থাকা বহু শতকের পুরনো একটি কুরআনে চোখ বুলানোর। বহির্বিশ্বের আর কেউ, এমনকি কোন রুশও এ সম্মানের অংশীদার কখনো হয়নি। বহুদিন ভল্গা উপত্যকার মানুষ খাদ্যত্রাণের নাম মনে রেখেছে “আমেরিকা” নামে। কারণ ঐ লেবেলেই ত্রাণ আসত। খাদ্য মানে আমেরিকা, আমেরিকা মানে খাদ্য।
এভাবে মধ্যযুগের ব্ল্যাক প্লেগের পর ইউরোপের সবচেয়ে মরণঘাতী দুর্যোগ থেকে উত্তরণ ঘটে রাশিয়ার। হুভার ভেবেছিলেন, উই উইল কিল দ্য বলশিজ উইথ কাইন্ডনেস। তা কিন্তু হ্য়নি! পরবর্তীতে তিনি আক্ষেপ করেছিলেন যে, সোভিয়েতদের বরং দাঁড়া করে দিয়ে গেছে তার মানবিক ত্রাণকর্ম।
আরেকটা ব্যাপার মনে করুন। আজকের যুগে অনেকে ভাবেন যুক্তরাষ্ট্রের টাকার কি অভাব! যতখুশি সাহায্য করতে পারে! ডলার ফরেন রিজার্ভ কারেন্সি হবার কারণে যত খুশি তারা তো “টাকা ছাপাতেই” পারে! সত্য এত সোজাসাপ্টা নয়। বর্তমানে তো নয়ই, অতীতেও ছিল না। সে যুগে ইউএস ডলার ফরেন রিজার্ভ ছিল না, আর আমেরিকার জনগণ প্রবেশ করতে যাচ্ছে গ্রেট ডিপ্রেশনের অনিশ্চয়তার যুগে। তার মধ্যেও আজকের মানের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্য এবং স্বদেশী এক্সপার্টদের মার্কিনরা পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়নে। এভাবে সে যাত্রা মার্কিন বদান্যতায় বেঁচে যায় লেনিনের ইউটোপিয়ার স্বপ্ন আর পাকাপোক্ত হয় স্তালিনের স্বৈরাচারের ভবিষ্যৎ।