ইরাকী কুর্দিস্তান

“ইরাক ওয়ার ওয়াজ এ গুড থিং!” ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আপনি নিশ্চয় এমন উত্তর দেবেন না? কিন্তু ইরাকের কেউ না কেউ এমন উত্তর আপনাকে দেবেই। এবং নব্বই শতাংশ সম্ভাবনা সে একজন কুর্দী!

ইরাকের বাথিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ রেজোল্যুশন ১৪৪১ লংঘনের অভিযোগে যে যুদ্ধটি ২০০৩এ শুরু হয়, তার সবচেয়ে বড় বেনেফিশিয়ারি ইরাকী কুর্দিস্তান আর তার পলিটিকাল ক্লাস। সাদ্দামের আমলে যে আরবিল ছিল মফস্বলের অনুন্নত প্রাদেশিক একটি শহর, সেটি আজ তেলের পয়সায় সম্পদশালী। বাকি ইরাকের তুলনায় কুর্দিস্তান রিজিওন তুলনামূলক নিরাপদ এলাকা। কুর্দী যে সকল নেতারা ইরাক-ইরানের সীমান্ত বরাবর ‌অতীতে পালিয়ে বেড়াত, তারা আজ বাগদাদে শক্তিমান পাওয়ার ব্রোকার। যে ইরাকে কখনো সুন্নি আরব ছাড়া রাজা বা রাষ্ট্রপতি কেউ হয়নি, সেখানে এখন অলিখিত আইন যে রাষ্ট্রপতি হবেন একজন কুর্দী। আর একজন নয় চারজন রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে সে নিয়ম ‌অনুসরণ করা হয়েছে।

প্রতিবেশী দেশের কুর্দীদের জন্যে ইরাকী কুর্দিস্তান আশার আলোকবর্তিকা, কিন্তু তাদের সরকারগুলির জন্যে একটা গাত্রদাহের ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরাকী কুর্দীদের সমর্থন পেয়েছে ও দিয়েছে, সেটা আশপাশের দেশগুলিকে, বিশেষ করে তুরস্ককে, মার্কিন মিত্রতা নতুন করে মূল্যায়ন করতে বাধ্য করেছে।

আরবিল শহর, ইরাকী কুর্দীস্তান, ২০২১

ইরাকী কুর্দিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি যে উপজাতির নেতা, সেটিই বহু দশক ইরাকে কুর্দী স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিল। ত্রিশের দশকে মাসুদের চাচা আহমেদ বারজানি রাজতন্ত্রী সরকারের কেন্দ্রীকরণ আর উপজাতীয় অধিকার হরণ নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিফল হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাসুদের বাবা মুস্তাফা নতুন করে আরেকটি বিদ্রোহের সূচনা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পালিয়ে সীমান্তের অপর পারে ইরানী কুর্দীদের সাথে হাত মেলান।

গত পোস্টে বলা সোভিয়েত পাপেট রাষ্ট্র রিপাবলিক অফ মাহাবাদকে মু্স্তাফা বারজানির উপজাতীয় সৈন্যদল সামরিক সহায়তা দেয়। কিন্তু সোভিয়েতরা কেটে পড়লে তাদের সাথে সাঙ্গপাঙ্গসহ আজারবাইজানে চলে যান মু্স্তাফা। কম্যুনিস্ট পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজতন্ত্রে দীক্ষা নেন তিনি ও তার অনুগতরা। তাঁর লক্ষ্য স্বাধীন কুর্দিস্তান। আর সোভিয়েতের লক্ষ্য, যদি স্বাধীন কুর্দিস্তান হয়ই তো তা হবে সমাজতান্ত্রিক রুশঅনুগত কুর্দিস্তান।

বারজানি পরিবার, সামনে আহমেদ, পেছনে মুস্তাফা ও ভাইয়েরা
বারজানি ক্ল্যান

বিভিন্ন রুশ নেতাদের সাথে মোলাকাত করলেও দ্রুত বারজানির সাথে পৃষ্ঠপোষকদের বিরোধ দেখা দেয়। উজবেকিস্তানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একরকম নির্বাসনে পাঠানো হয় স্বাধীনতাযোদ্ধাদের। সোভিয়েতরা এরপর বারজানির উপযোগিতা পায় ১৯৫৮ সালে ইরাকে আরব জাতীয়তাবাদী সামরিক অভ্যুত্থান ও রাজতন্ত্রের রক্তক্ষয়ী পতনের পর।

নতুন প্রধানমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার আব্দুল করিম কাসিমের আশ্বাসে বারজানি নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন। কুর্দিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যাপারে কাসিমের সাথে সমঝোতাও হয়। কুর্দিস্তান ডেমোক্রাটিক পার্টিকে বৈধতা দেয়া হয়। কিন্তু কাসিম বারজানির ক্রমবর্ধমান শক্তিতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে শুরু করেন। বারজানি শুধু সোভিয়েত নয়, মার্কিন, ইরানী, ইসরায়েলী যে কোন উৎস থেকে সহায়তা গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। অপরদিকে বারজানিবিরোধী সোভিয়েতসমর্থিত কুর্দী নেতাদেরকে ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়। ফলে ১৯৬১ সালে ইরাকী-কুর্দী যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কুর্দী মিলিশিয়া গেরিলা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে কাসিমের সেনাবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। তারা সমর্থন পায় ইরান ও ইসরায়েল থেকে। বহু সাধারণ কুর্দী এ সংঘাতে ইরাকী সেনাবাহিনীর কনভেনশনাল অস্ত্রের ব্যবহারে মারা যায়।

ইরাকী প্রধানমন্ত্রী আব্দুল করিম কাসিমের সাথে মুস্তাফা বারজানি
প্রথম ইরাকী-কুর্দী যুদ্ধ, ১৯৬১-৭০

কিন্তু এই কুর্দী অভিযান নিয়েই কাসিমের সাথে তার সেনানায়কদের বিরোধ দেখা দেয়। ক্যুতে তিনি নিহত হন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কর্নেল আব্দুস সালাম আরিফ আর তার ভাই লেফটেনেন্ট জেনারেল আব্দুর রহমান আরিফ কেউই কুর্দী পেশমের্গা গেরিলার বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে ১৯৬৬ সালে একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে নতুন করে স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়ে বারজানিকে।

কিন্তু তাতে বাদ সাধে ১৯৬৮ সালে ইরাকে বাথ পার্টির ক্যু। আরব জাতীয়তাবাদীদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসে বাথ সমাজতন্ত্রী জাতীয়তাবাদীরা। এ পার্টির আদর্শ নাৎসি পার্টির থেকে এমন কিছু ভিন্ন নয়। সাদ্দাম হোসেন তখন বড় মাপের বাথিস্ট নেতা না হলেও তাকে ১৯৭০এ পাঠানো হয় কুর্দীদের সাথে নতুন করে শান্তিস্থাপনের জন্যে। স্বায়ত্ত্বশাসন আর কুর্দীকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মর্যাদার দেবার প্রস্তাবে ইরাক রাজি হয়।

কিন্তু সে চুক্তি বাস্তবায়নেও কেন্দ্রীয় সরকার নানা টালবাহানা করে। ততদিনে কুর্দী এলাকার মসুল ও কিরকুক শহরের আশপাশে তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। সেসবের ওপর শক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকার এলাকাটির “আরবীকরণ” শুরু করে। এর অর্থ হল, আদি অধিবাসী কুর্দী, অ্যাসিরীয়, ইয়াজিদী এদেরকে সরিয়ে সে জায়গায় আরব বেদুইন উপজাতিগুলিকে প্রতিস্থাপন করা। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটি বাথ পার্টির একদলীয় নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দ্বিতীয় ইরাকি-কুর্দী যুদ্ধ, ১৯৭৪-৭৫
সাদ্দামসহ মুস্তাফা বারজানি

বারজানি এ নীতির বহু প্রতিবাদ করেও ফল পাননি। তার ওপর একটি ব্যর্থ আততায়ী হামলা হয় বারজানির ওপর, যার পেছনে সাদ্দামের হাত ছিল। দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় কুর্দিস্তানে। বারজানিকে ইরান ভারি অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। কিন্তু গেরিলা যুদ্ধে অভ্যস্ত পেশমের্গা কনভেনশনাল অস্ত্র দিয়ে ইরাকের সুপেরিয়র সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কিছু করতে পারেনি। ওদিকে ১৯৭৫এ ইরাক-ইরানের শাত-ইল-আরব ভূমিবিরোধ আলজিয়ার্স চুক্তির মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে যায়। ইরানের শাহ তখন সহায়তা বন্ধ করে দিলে বারজানিকে আবার পালাতে হয়ে সীমান্তের ওপারে।

এ সময় বারজানির অবর্তমানে কেডিপির প্রগতিশীল সদস্যদের নিয়ে নতুন পার্টি পেট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তান পি,ইউ,কে সংগঠিত করেন তারই সহযোদ্ধা জালাল তালাবানি। ১৯৭৬এ লো-লেভেল ইনসার্জেন্সি চালু রাখে তারা। কিন্তু শীঘ্রি কেডিপির সাথে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন সাদ্দাম হোসেন। উত্তর ইরাকের বড় শহরগুলিতে সামরিক শক্তিবলে পুরোদমে চলে আরবীকরণ অভিযান।

১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের পর পরই মৃত্যুবরণ করেন মুস্তাফা বারজানি। তার স্থান নেন ছেলে মাসুদ। পরের বছরই শাত-আল আরবের পুরনো বিবাদের দোহাই দিয়ে ইরান আক্রমণ করে বসেন সাদ্দাম। সুযোগ পেয়ে কেডিপি ও পিইউকে উভয়েই উত্তর ইরাকে আবার বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল বারজানির দল সরাসরি ইরান থেকে সাহায্য পায়। আর তালাবানির দল সাহায্য পায় বাথিস্ট সিরিয়া আর লিবিয়ার থেকে।

কিন্তু ইরানের সাথে যুদ্ধরত অবস্থাতেও ইরাকের কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীর যথেষ্ট অস্ত্রবল ছিল উত্তরের বিদ্রোহ সামাল দেবার। ১৯৮৩ সালে বিশাল অভিযান চালিয়ে আরবিল প্রদেশে মাসুদের উপজাতি বারজানিদেরকে প্রায় নিঃশেষ করে দেয়া হয়। তার পরিবারের বহু সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইরাকী বাহিনী। পরবর্তীতে সেসময়ে নিহত পাঁচশর ওপর মানুষের গণকবর খুঁজে পায় কুর্দীরা।

হালাবজায় রাসায়নিক আক্রমণে নিহত বাবা-শিশু, ১৯৮৮
ইরান ইরাক ফ্রন্টলাইনে গ্যাসমাস্কপরা ইরানী সৈন্য
কেমিকাল আলি

১৯৮৮ সালে ইরানঅধিকৃত হালাবজা শহরে গোলানিক্ষেপ করে সাদ্দামের বাহিনী। আন্তর্জাতিক আইনের থোড়াই কেয়ার করে মার্চে সে শহরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে তারা। স্থানীয় ইরাকী কুর্দী বৃদ্ধ-নারী-শিশু হাজারে হাজারে কঠিন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। “কেমিকাল আলি” ডাকনাম দেয়া হয় সে ঘটনার নেতৃত্বে থাকা সাদ্দামের তুতোভাইকে। মানব ইতিহাসে এই প্রথম ঘটনা যেখানে স্বদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে উইপন অফ মাস ডিস্ট্রাকশন ব্যবহার করল কোন একটি দেশ। বৃহত্তর “আল-আনফাল” অভিযানের ‌অংশ ছিল এ আক্রমণ। কুরআনের একটি সূরার নামে অভিযানটির নামকরণ। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ কুর্দী মানুষের মৃত্যু হয় এ অভিযানে, যাকে এখন অনেকে কুর্দী জেনোসাইড নামে অভিহিত করে। একই কারণে ইসরাইলের সাথে কুর্দীরা একটা ঐতিহাসিক সংযোগ বোধ করে।

দাবার ছক পাল্টাতে শুরু করে ১৯৯১ সালে। সাদ্দামের কুয়েত দখলের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশাল কোয়ালিশন নিয়ে ইরাকে আক্রমন চালায়। উত্তর ইরাকে ঘোষিত হয় নো ফ্লাই জোন। নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে তালাবানি ও বারজানিরা সেখানে ডি ফ্যাক্টো স্বায়ত্ত্বশাসন শুরু করেন। বুশের আহ্বানে দক্ষিণে শিয়া-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাতেও সাদ্দামবিরোধী গণআন্দোলন শুরু হয়ে যায়। দু জায়গাতেই নিষ্ঠুরভাবে সামরিক বাহিনীর সাহায্যে বিদ্রোহ মোকাবেলা করে নিজের গদি রক্ষা করেন সাদ্দাম। কিরকুক থেকে হটে পাহাড়ী এলাকায় আশ্রয় নেয় কুর্দী স্বায়ত্ত্বশাসিত কাউন্সিল।

হালাবজা মেমোরিয়াল, ইরাকী কুর্দিস্তান
কুর্দী বিদ্রোহ, ১৯৯১

একতাবদ্ধ ইরাকী কুর্দিস্তান নিজেদের অধিকৃত এলাকায় সংসদ নির্বাচন করে ১৯৯২ সালে। উত্তরে বারজানির কেডিপি আর দক্ষিণে তালাবানির পিইউকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ইরাকী সরকার এদের ওপর অবরোধ আরোপ করে। পিকেকে নির্মূলের লক্ষ্যে তুরস্কের সেনাবাহিনীও পশ্চিমে একটি অভিযান চালায়। কঠিন এ সময়টিতে কুর্দীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধ চলে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ইরাক সরকার ও ইরান যথারীতি উভয় পক্ষকে নিজের সুবিধার জন্যে ব্যবহার করে। ১৯৯৭এ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সহিংসতা বন্ধ করে দুই কুর্দী পক্ষ।

২০০৩এ বুশ দুই’য়ের ইরাক আক্রমণে শরিক হয় কুর্দী সৈন্যরাও। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র আগের বারের মত মিত্র দেশগুলির সহায়তা পায়নি। বিশেষত তুরস্ক তাদের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। এ কারণেই উত্তর ইরাকে কুর্দীদের ওপর নির্ভর করতে হয় মার্কিনদের। আয়রনিকালি তুরস্ক এভাবেই “শত্রু” জাতিটিকে সাহায্য করে বসে, যেখানে একটা সুযোগ ছিল “ক্লীনাপ অপারেশন” চালানোর। সাদ্দামসমর্থিত বাহিনীগুলির ওপর কুর্দী পেশমের্গা সহজেই বিজয় পায়। কিরকুক ও ‌অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর ফিরে আসে তাদের হাতে।

আরবিল শহরে ইরাকী কুর্দী ও অ্যাসিরীয়দের সমাবেশ
বিভিন্ন দেশের মাঝে কুর্দী জাতিগোষ্ঠীর বিভাজন

২০০৬এ দখলদার মার্কিনদের বিরুদ্ধে যখন ইরাকের বাকি সকল ‌‌অংশে ইনসারজেন্সি চলেছে, তখন কুর্দিস্তান ও দক্ষিণের শিয়া-অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত। নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত হয় গৃহযুদ্ধচলাকালীন সময়েই। তাতে ইরাকী প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন কুর্দী নেতা জালাল তালাবানি স্বয়ং। ২০১১-১২র দ্বিতীয় সুন্নি ইনসারজেন্সি আর ২০১৩-১৭র আইসিস যুদ্ধ ইরাকি কুর্দিস্তানের একাংশে হলেও নিজেদের শহরগুলির নিয়ন্ত্রণ হারায়নি কুর্দিস্তান রিজওনাল সরকার।

তবে কেন্দ্রের সাথে তেল-উত্তোলন ও পরিবহন নিয়ে পরবর্তীতে নানা বিবাদে জড়িয়েছে কুর্দীরা। সে নিয়ে সংঘাত হয়েছে উভয় পক্ষের মধ্যে। কেন্দ্রের শাসানি আর মার্কিনসহ অন্যান্য মিত্রদের সাবধানবাণী সত্ত্বেও ২০১৭ সালে স্বাধীনতা নিয়ে গণভোট করেন বারজানি। ৯২ শতাংশ ভোট পড়ে স্বাধীনতার পক্ষে। তবে এটা কোন বাইন্ডিং রেফারেন্ডাম ছিল না। স্বাধীনতা দূরে থাক, উল্টো কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী কুর্দিস্তানের অধিকৃত এলাকার ২০ শতাংশের পুনর্দখল নেয়। এ ছিল বারজানির আদর্শিক কিন্তু ভুল একটি পদক্ষেপ।

ইরাকী কুর্দিস্তানে তেলগ্যাসের চিত্র
আর্বিল, ইরাকী কুর্দিস্তান, বর্তমানকাল
কুর্দিস্তান স্বাধীনতা রেফারেন্ডামের প্রাক্কালে সমাবেশ, ২০১৭
কুর্দিস্তান স্বাধীনতা রেফারেন্ডামের প্রাক্কালে সমাবেশ, ২০১৭

সাদ্দাম বা কাসিমের সময়কার থেকে ইরাকী কুর্দীদের বর্তমান চিত্র বেশ উন্নত। কিন্তু এখনো সেই পুরনো কেন্দ্রবিরোধী সংঘাতের বীজ রয়ে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারে তাদের যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব আছে। কুর্দিশ পাইপলাইনের তেলগ্যাস থেকে ভাল আয় আছে। আর স্বায়ত্ত্বশাসন এখন সরকারীভাবে স্বীকৃত। যতদিন এমন একটা পাওয়ার ব্যালান্স টিকিয়ে রাখতে পারবে কুর্দীরা, ততদিন ভবিষ্যতের একটা আশা আছে স্বাধীন রাষ্ট্রের।

আশা করি এখন বুঝতে পারছেন, কেন একজন ইরাকী জাতীয়তাবাদী কুর্দী আপনাকে বলবে ইরাক ওয়ার ওয়াজ এ গুড থিং! আরও বুঝেছেন, আশপাশের দেশগুলির কেন কুর্দী ইস্যু নিয়ে গাত্রদাহ বেড়েছে।

জিন-জিয়ান-আজাদী

আমাদের স্থানীয় মিডল ঈস্টার্ন গ্রসারি স্টোরের প্রতিটি চেক আউট কাউন্টারে রাখা এই ছবিটি। উইমেন-লাইফ-ফ্রীডম স্লোগানলেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদী মিছিল। প্ল্যাকার্ডে মাহসা আমিনির ছবি। ২২ বছর বয়েসী মেয়েটি ইরানে নৈতিকতা পুলিশের হাতে প্রাণ হারানোর পর থেকে সারা বিশ্বে পরিচিত মুখ।

সান ডিয়েগোর মধ্যপ্রাচ্যীয় দোকানের চেকআউট কাউন্টারে মাহসা আমিনির ছবি

মাহসাকে নিয়ে সারা ইরান বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও কতজন জানেন যে মেয়েটির জন্ম কুর্দী পরিবারে? তার আবাস যে শহরটিতে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়, সেই সানান্দাজ কিন্তু ইরানী কুর্দিস্তান প্রদেশের রাজধানী। আমি আরেকটু পরে এ‌ প্রতিবাদী আন্দোলনের গভীর কুর্দী যোগাযোগটা তুলে ধরব। যদিও মাহসা বা তার মত অনেক কুর্দীই হয়ত রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল না।

গ্রাজুয়েট স্কুলে ইরানী-আমেরিকান অধ্যাপকের সাথে কাজ করতাম। তাঁর স্ত্রী মার্কিন হলেও অধ্যাপকের আত্মার সংযোগ ইরানী সংস্কৃতির সাথে। ফার্সীতে কবিতা লেখেন বেনামে। কিন্তু ইরানের সাথে সে যোগাযোগটা নেই। ইসলামী বিপ্লবের ঠিক আগ দিয়ে ইরান ছেড়ে এদেশে আসেন। তাঁর ল্যাবে আমি যে কয়েক বছর কাটিয়েছি, সে সময়টা অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের ‌বাকিরা ছিল ইরানী। কিন্তু এদের মধ্যে দু’জন ছিল একটু ব্যতিক্রমী।

একজনের প্রথম নাম খোলাখুলিরকম তুর্কী, আর পারিবারিক নামেই বোঝা যায় তার জাতিপরিচয় আজেরি। অর্থাৎ সে ইরানের উত্তর পশ্চিমে ককেশাসের নিকটবর্তী এলাকার মানুষ। তাব্রিজ সেখানকার মূল শহর। বাকি ইরানীদের মত এদের মাতৃভাষা ফার্সী বা ‌অন্য কোন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা নয়। বরং তু্র্কী গোষ্ঠীর আজেরি ভাষা।

আরেকজনের নাম দেখে ধারণা হয়েছিল সে বুঝি বাকিদের মতই ফার্সীভাষী। কিন্তু কোন এক স্ট্রেসফুল সময়ে ডিপার্টমেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে স্বীকার করেছিল, সে আসলে কুর্দী। ঐ প্রথম, ঐ শেষ। এরপর নিজের জাতিগত পরিচয়ের ব্যাপারে আর কোন টুঁ শব্দটিও সে করেনি। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি যে ইরানী অন্যান্য যে মেয়েরা ল্যাবে ছিল বা যাওয়া-আসা করত তারা হেজাব পড়ুক বা না পড়ুক একটু মাথা ঢাকত, কিন্তু এ ছেলেটির বউ তেমন ছিল না।

ইরানের মাথাপিছু জিডিপি, উত্তর-পশ্চিমের কুর্দী প্রদেশগুলিতে সর্বনিম্ন

নিজের কুর্দী পরিচয়টা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলতে না চাওয়াটাই হয়ত স্বাভাবিক। ইরানী মূলধারার সমাজে কুর্দীদের নিজস্ব পরিচয় বিলিয়ে দেয়াটা সহজ। ফার্সী ও কুর্দী একই ভাষা পরিবারের। কুর্দী অনেকের নামও ফার্সীপ্রভাবিত। কুর্দী সঙ্গীত-সংস্কৃতিও ইরানী অন্যান্য উপজাতির কাছাকাছি। বাংলার প্রভাবে যেমন বাংলাদেশের ইন্দো-আর্য নিকটাত্মীয় ভাষাগুলি (যেমন রাজবংশী) দুর্গতির সম্মুখীন, তেমন কুর্দী ভাষাও ফার্সীর অসম প্রভাবের কারণে কোণঠাঁষা। শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মই বেয়ে ওপরে উঠতে চাইলে কুর্দী যে কেউই ফার্সীকে গ্রহণ করে নেবে। সহজে কুর্দীতে মুখ খুলবে না। ইরানী কু্র্দিস্তান ভৌগলিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত হলেও সেখানকার মাথা পিছু আয় দেশের সবচে কম (মানচিত্র দেখুন)।

অতীতের পারস্য সাম্রাজ্য আসলে বহুজাতিক ইন্দো-আর্য গোষ্ঠীর সমন্বয়ে সংগঠিত ছিল। এখনো প্রকারান্তরে তাই। মাজান্দারানী, কেরমানী, খোরাসানী প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষা স্থানীয়ভাবে প্রচলিত। কুর্দীরা সে সাম্রাজ্যে তুলনামূলক নতুন সংযোজন। এদের সকল উপজাতি শিয়াও নয়। আর প্রাচীনকালে তাদের নিজেদেরই সাম্রাজ্য ছিল, যার নাম মিডিয়া।

ইরানে প্রচলিত বিভিন্ন ভাষার বিস্তৃতি
প্রাচীন মিডিয়ান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি, ৬৭৮-৫৪৯ খ্রীষ্টপূর্ব

আধুনিক ইরানে কাজার রাজবংশের আমলে বিভিন্ন অঞ্চলে উপজাতীয় স্বায়ত্ত্বশাসন প্রচলিত ছিল। তার পরিবর্তন হতে শুরু করে বিংশ শতকে। ১৯০৭ সালের ক্যু পরবর্তী রাষ্ট্রতন্ত্রে ফার্সীকে দেয়া হয় একমাত্র রাষ্ট্রভাষার স্থান। কুর্দীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দুর্বল রাজতন্ত্রকে হটিয়ে নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন রেজা শাহ পাহলভী (শেষ শাহের বাবা)। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপজাতীয় বিদ্রোহগুলি শক্ত হাতে দমন করে তার সেনাবাহিনী। কুর্দীরাও তার শিকার হয়। রেজা শাহ ছিলেন একনিষ্ঠ পারসিক জাতীয়তাবাদী। তুরস্কের মুস্তাফা কামালের ইরানী সমকক্ষ ধরা যেতে পারে তাকে। তুরস্কের মত ইরানেও প্রচলিত হয় সংখ্যাগুরু জাতীয়তার একনায়কতান্ত্রিক শাসন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ও সোভিয়েতরা ইরানের দক্ষিণ ও উত্তর অংশ দখল করে রাখে। তার একটা কারণ জার্মানদের সাথে রেজা শাহের সখ্যতা। দেশটির তেল সম্পদ আরেকটা কারণ। তবে মূল কারণ ব্রিটিশ ভারত থেকে নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুধ্যমান রুশদেরকে রসদ সরবরাহের একটা নিরাপদ রাস্তা খোলা রাখা। কথা ছিল যে, যুদ্ধের পর রুশ ও ব্রিটিশ উভয়েই তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে।

আধুনিক ইরানের জাতীয়তাবাদী আদর্শে একীভূত হবার পেছনে ছিল রেজা শাহ পাহলভীর নিরলস প্রচেষ্টা

১৯৪৬এ সে সময়টা চলে এলেও সোভিয়েতরা প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করে। এ ছিল স্নায়ুযুদ্ধের প্রাক্কালে প্রথম বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের শাসানির কারণেই শেষ পর্যন্ত ইরান ছাড়তে বাধ্য হয় সোভিয়েতরা। নিজেদের দখলদারিত্বকে বৈধতা দেবার জন্যে তারা দুটি পাপেট রাজ্য তৈরি করেছিল ইরানের উত্তর পশ্চিমে। একটি আজারবাইজান পীপলস গভার্নমেন্ট। আরেকটি রিপাবলিক অফ মাহাবাদ। দ্বিতীয়টি ছিল মূলে কুর্দী রাষ্ট্র। তাদের সাহায্য করতে ইরাকী কুর্দিস্তান থেকে উপজাতীয় সৈন্যসহ এসে হাজির হন মুস্তাফা বারজানি।

তবে সোভিয়েত সেনাদল ইরান ছাড়ার সাথে সাথে এ সকল পাপেট রাষ্ট্র অস্তিত্বসংকটে পড়ে যায়। তাদের নবজাত “স্বাধীনতা” মুখ থুবড়ে পড়ে রেজা শাহের সেনাদলের সামনে। তবে ইতিমধ্যেই অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ট্রাইবাল লয়াল্টি ছাঁপিয়ে জাতীয়তাবাদী আদর্শ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আরেকটি যে আদর্শ সেটি সোভিয়েত সমর্থনের কারণে। কেডিপি বা কুর্দিস্তান ডেমোক্রাটিক পার্টি আর কোমালা পার্টি (কোমালা=কামলা!) তাদের আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে সাম্যবাদ, সমাজতন্ত্র।

তাদের বিদ্রোহ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ষাটের দশকে। সীমানার ওপারে তখন চলছিল ইরাকী-কুর্দী যুদ্ধ। পাহাড়ী সীমান্ত জুড়ে বহু সহযোগিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটে। তবে ইরানে কুর্দী বিচ্ছিন্নতাবাদের আপাতত সমাপ্তি ঘটায় ইরানী সামরিক অভিযান।

১৯৭৯র সফল বিপ্লবের পর শাহবিরোধী কুর্দীদের আশা ছিল যে এবার তারা ইরানে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। কিন্তু সে বিপ্লব দ্রুত ছিনতাই করে নেয় খোমেনী গং। শাহের মত তাদের কাছেও মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন জাতিপরিচয় ছিল অবান্তর। সেটা বোঝার সাথে সাথে আরো কড়া বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায় ইরানী কুর্দিস্তানে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বিশ হাজারের ওপর মানুষ প্রাণ হারায় সেখানে। কেডিপি ও কোমালা ছিল এ সকল বামঘেঁষা সংগ্রামের নেতৃত্বে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত নানা প্রখরতায় এ সংগ্রাম চলে। শেষ হয় সংস্কারপন্থী নমনীয় রাষ্ট্রপতি খাতামির আমলে। ১৯৮০ থেকে ৮৯ ইরান-ইরাক যুদ্ধের মধ্যেও বিভিন্ন কুর্দী দল একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা আব্দুল্লাহ ওজালানের ভাষ্যে প্রকৃত মুক্তির জন্য লিঙ্গবৈষম্যের বিলুপ্তিসাধন অবশ্যকরণীয়

২০১১ থেকে ইরানী কুর্দিস্তানে নতুন করে সংঘাতের সূচনা হয়। কুর্দিস্তান ফ্রী লাইফ পার্টি (জিয়ানা আজাদ পার্টি) নামে নতুন একটি দল এর পুরোভাগে। আগের দলগুলির মত এটিও পুরোমাত্রায় বামপন্থী প্রগতিশীল। তুরস্কের পিকেকে বা কুর্দিশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে এদের যোগাযোগ রয়েছে।

এখানেই ঐ উইমেন-লাইফ-লিবার্টি শ্লোগানটির উৎপত্তি। তুরস্কের কুর্দী স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা আব্দুল্লাহ ওজালানও বামপন্থী আদর্শের অনুসারী। বহু বামপন্থী তাত্ত্বিক লেখালেখিও আছে তার। তার তত্ত্ব অনুযায়ী কুর্দী সমাজ ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক তাদের মেয়েরাই। নিজেদের সমাজে ছেলে ও মেয়ের সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের উত্তরণ। চলমান ইরানী বিপ্লবের জান-জিন্দেগী-আজাদী শ্লোগানটি ফার্সী, কিন্তু শ্লোগানটি মূলে কুর্দী — জিন, জিয়ান, আজাদী। বিচ্ছিন্নতাবাদী জিয়ান-এ আজাদী পার্টির নামের সাথেও এর মিল। ওজালানের লেখা বইয়েও এ শ্লোগানের উৎস পাওয়া যায়।

নারী-জীবন-মুক্তি আন্দোলন কখনো সহিংসতার পর্যায়ে চলে যায়, তেহরান, অক্টোবর ২০২২
জিন-জিয়ান-আযাদি — নারী-জীবন-মুক্তিঃ কুর্দী ভাষায় লেখা শ্লোগান

২০১৫-১৬ সালে সিরিয়া-ইরাকে আইসিসের বিরুদ্ধে মার্কিন মিত্র কুর্দী পেশমের্গা মিলিশিয়ার যুদ্ধের ক্লিপ যদি টিভিতে দেখে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় পেশমের্গার মহিলা সদস্যরা আপনার চোখ এড়িয়ে যায়নি। তাদের এমন অবস্থানের কারণ কু্র্দীদের প্রগতিশীল বিপ্লব। আর সীমানার ওপারে সিরিয়া-তুরস্ক-ইরাকে কুর্দী মেয়েদের শক্তিমত্তায় অনুপ্রেরণা পেয়েই হয়তবা ইরানী কুর্দিস্তানে শোর উঠেছে জিন-জিয়ান-আজাদী। আর এর জোয়ারে এখনো ভেসে যাচ্ছে পুরো ইরান।

ইরানে কুর্দীদের ওপর তুরস্কের মত অত্যাচার করা হয়নি এটা ঠিক। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ আসে নানা খোলসে। ইরানের ক্ষেত্রে সেটা সংখ্যাগুরু ভাষা ও সংস্কৃতি আর কেন্দ্রের জবরদস্তির প্রশাসন। ওদিকে এদের বিরুদ্ধে অসন্তোষের প্রকাশটাও যখন কুর্দী ভাষার মধ্য দিয়ে হচ্ছে, তখন ফার্সীতেও সেটা সংক্রমিত হতে সময় লাগেনি। কারণ দুটো নিকটাত্মীয় ভাষা। তুরস্ক-ইরাকে কুর্দীদের যে ইতিহাস, ইরানে সেরকমটা না হলেও, স্বাধীনতার দাবি বেশ শক্তিশালী না হলেও, পুরো সমাজটাকে নাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা যে তারা রাখে, বর্তমান ঘটনাবলী তারই চাক্ষুষ প্রমাণ।

(শেষ ছবিটির মার্সিডিজ সান ডিয়েগোতে আমাদের নেইবারহুডে মাসখানেক আগে দেখা)

নারী-জীবন-মুক্তি আন্দোলনের সপক্ষে এ গাড়িটির ওপর শ্লোগান লেখা হয়েছে, সান ডিয়েগো, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্চ ২০২৩
close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!