শুভ নববর্ষ ১৪২৫

শুভ বাংলা নববর্ষ!

পহেলা বৈশাখ যারা মনে করেন ‘হিন্দুয়ানি অপসংস্কৃতি’, আশা করি তাদের জন্যে এই পোস্টটি কিছুটা শিক্ষামূলক হবে।

অনেকে বলেন রাজা শশাংকের সময়ে, সপ্তম শতকে, নাকি বঙ্গাব্দের যাত্রা শুরু। তা হতে পারে, কিন্তু সনাতনী হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে সে সময়কার সব ভারতীয় রাজত্বের হিসাবই ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, সম্ভবত আলাদা করে বঙ্গাব্দ ব্যাপারটা ছিল না। এই অব্দের প্রচলনের মূল তাই অনেকে ধরেন আমাদের দেশের হিন্দু রাজ-রাজড়াদের ইতিহাসে প্রথিত।

কিন্তু সেটা প্রমাণ করা কষ্টসাপেক্ষ, আর রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।

যেটুকু আমরা প্রমাণসহ বলতে পারি, সেটা হলো সম্রাট আকবরের সময় যখন দেখা গেল আরবী চান্দ্র হিজরী সন ধরে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল প্রজাদের কর আদায় করা কঠিন (কারণ তাতে ঋতু ওলটপালট হয়ে যায়), তখন সম্রাটের নির্দেশে পুরনো মাসগুলি রেখেই সৌর সন তৈরি করা হয়। তাতে কৃষকদের সুবিধা হয় সময়মত কর দিতে, আর বাংলা সেসময় ভারতের অন্যতম কৃষিপ্রধান অঞ্চল ছিল।

অনেকে বলেন মঙ্গল শোভাযাত্রা এসব হিন্দু ঐতিহ্য। পুরোপুরি সত্য নয়, এর সাথে জড়িত বাংলার নবাব মুর্শিদকুলী খানের সময় প্রচলন করা রাজপুন্যাহের পহেলা বৈশাখের ‘করপ্রদানযাত্রা’। সকল প্রজারা তাদের যা যা বাৎসরিক কর দেয়ার মত আছে, তাই নিয়ে রাজা বা রাজকীয় প্রতিনিধির কাছে যেত, এরই জাতিস্মৃতি আমি মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যে দেখতে পাই। এখনো চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলে এরকম রাজপুন্যাহ উৎসব হয়।

রাজপ্রতিনিধিরাও এসময় প্রজাদের আদর করে দু’বেলা আপ্যায়ন করতেন। এই আপ্যায়নের ঐতিহ্যটা মুর্শিদকুলী খান করতেন ইসলামী বা আরবী ঐতিহ্যের অতিথিপরায়ণতার খাতিরেই। এর জাতিস্মৃতি আমাদের রমনার বটমূল আর পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মাঝে।

হিন্দুধর্মাবলম্বীরা অনেকে ধর্মীয়ভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন, কিন্তু সেটা পরে এসেছে, কারণ যারা বণিক, তারা নতুন হালখাতা খুলতেন লক্ষ্মী-গণেশের আশীর্বাদ নিয়ে। অর্থাৎ নতুন বছরটা আগে এসেছে, পরে তার ধর্মীয় যোগাযোগ।

যারা চৈত্রসংক্রান্তির সাথে পহেলা বৈশাখকে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন, তাদের জন্যে বলি যে এটা চৈত্রের শেষ দিনে পালন করা হলেও, এর সাথে স্প্রিঙ ইকুইনক্স বলে বহু প্রাচীনকাল থেকে পালিত আরেক পরব জড়িত। সেটার আসল তারিখ মার্চের ২০ হলেও সেটা কিভাবে চৈত্রের শেষে চলে আসল সে এক ঐতিহাসিক গবেষণার বিষয়।

আরো বলি যে এখনকার ইরান, যেটা কিনা ইসলামী গণপ্রজাতন্ত্র, তাদের নববর্ষ বা নওরোজ পালন হয় ঠিকঠাক মার্চের ২০ তারিখ। অর্থাৎ খাস চৈত্রসংক্রান্তিতে। এ তাদের প্রাক-ইসলামী ঐতিহ্য, কিন্তু কেউ সেটার ‘বিধর্মী’ শিকড় ঘাঁটাতে যায় না।

আপনার নববর্ষ আনন্দময় আর প্রাচুর্যপূর্ণ হোক!

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!