মধ্যযুগীয় কারবার

Featured Video Play Icon

“সত্য অবদমিত, বিভ্রান্ত, আর বিক্রিত;
ন্যায়বিচারও আজ বেশ্যার ন্যায় বিক্রির পণ্য।
বিচারপ্রার্থী দৌড়ে ফেরে কোর্ট-কাচারিতে,
কোন ফলই মেলে না, যতক্ষণ না হয় সে কপর্দকশূন্য!”

(ভেরিতাস সুপ্রিমিতুর, দিসত্রা’ইতুর এত্ ভ়েন্দিতুর;
য়্যুস্তিৎসিয়া প্রস্তান্তে, ইতুর এত্ রেকুর্রিতুর
আদ্ কুরিয়াম, নেক আন্তে, কুইদ কনসেকিতুর,
কোয়াম এক্সুইতুর কুয়াদ্রান্তে!)

কথাগুলি একালের নয়! কমপক্ষে নয়শ’ বছর আগের মধ্যযুগীয় ইউরোপে একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে এই লাতিন গান-সুর বাঁধা। জার্মানির বেনেডিক্টবয়ার্ন মঠে ১৮০৩ সালে আবিষ্কৃত ‘কার্মিনা বুরানা’ নামে পরিচিত পান্ডুলিপির একটি গান এটি। গানের সুরসঙ্গতও লিপির সাথে ছিল। এই সংগ্রহের আরেকটা বিখ্যাত গান ‘ও ফরতুনা’র কার্ল ওর্ফকৃত কম্পোজিশন অনেক পপ কালচারে ব্যবহৃত হয়েছে।

একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীকে পশ্চিম ইউরোপের মধ্যযুগ ধরলেও এসময়ের সমাজ ছিল মোটামুটি স্থিতিশীল। নবম-দশম শতকের নর্ম্যান-ভাইকিংদের আক্রমণ বন্ধ হয়, স্পেনের মুসলিম রাজ্যগুলির সাথেও একটা শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়ায় আসে শার্লম্যানের ক্যাথলিক ফ্রাংক সাম্রাজ্য। রোম সাম্রাজ্যের পতনের জন্যে দায়ী ভ্যান্ডাল-গথিক জার্মান গোত্রগুলিও নিজেদের রাজত্ব গুছিয়ে থিতু হয়ে বসেছে। ফলে জ্ঞান-প্রযুক্তির আদানপ্রদান কিছুটা হলেও শুরু হলো। এতে করে দ্বাদশ শতাব্দীতে পঞ্চদশ শতকের আগেই একটা রেনেসঁস হয়ে যায়। গথিকশৈলীর বড় বড় গির্জা-ক্যাথেড্রাল তৈরি শুরু হয়, যেমন ফ্রান্সের নত্র দাম আর জার্মানির কল্ন ক্যাথেড্রাল। এসময়ের সঙ্গীতের ছন্দ-মাত্রা-বাদ্যযন্ত্রও নতুন সংস্কারের ছোঁয়া পায়, বিশেষত প্রাচীন গ্রীকদের আর তাদের সুরজ্ঞানের রক্ষক আরব সঙ্গীতবিজ্ঞানীদের প্রভাবে। স্থিতিশীলতার কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, নগরকেন্দ্রিক বসতি গড়ে উঠতে শুরু করে, আর ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরও যাত্রা শুরু হয়।

এই আপাত সমৃদ্ধির বিপরীতে ছিল ক্ষমতাসীন অভিজাত গোষ্ঠীর অর্থলিপ্সা আর দুর্নীতি। এসময়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চের পোপ, বিশপ, কার্ডিনাল — এরা ছিল সকল ক্ষমতার উৎস। ইউরোপের রাজবংশগুলি পোপের কাছ থেকে ঈশ্বরপ্রদত্ত বৈধতার সীলমোহর নিয়ে আসত — কখনো অর্থ, কখনো জমিজমা বা অন্য কোন সুবিধার বিনিময়ে। সাধারণ মানুষ যদি কিছুমাত্র ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি অর্জন করতো, তাতে অভিজাতশ্রেণীর নজর পড়লে তাদের পক্ষে পোপের দলবল দাঁড়িয়ে যেত জাজ-জুরি-এক্সেকিউশনার হয়ে। কখনো কখনো পোপ আর রাজারা নিজেদের মধ্যেও ঝগড়া করত সম্পত্তি নিয়ে। (মিস্টার বীনের প্রথম কমেডি শো ব্ল্যাক অ্যাডারের তৃতীয় পর্ব দ্রষ্টব্য!) এসময়ের দুর্নীতির সবচে’ বড় উদাহরণ পোপ নবম বেনেডিক্ট। তাঁর বাবা জায়গামত ঘুষ দিয়ে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে তাঁর জন্যে পোপের আসন ক্রয় করেন। একইভাবে তিন-তিনবার পোপ হন তিনি। বেনেডিক্ট ব্যতীত আর কোন পোপ একবারের বেশি ধর্মগুরু হতে পারেননি। তিনি আসন ছেড়ে দেওয়ার সময়ও পরবর্তী পোপের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করেন!

শিক্ষিত একটা প্রতিবাদী শ্রেণী ছিল বটে। তারা সংখ্যায় গৌণ আর নির্ধন হলেও সমাজে একটা ভূমিকা ছিল তাদের। এদের শিক্ষাজীবন শুরু হত চার্চ পরিচালিত মঠে, সাধারণ শিক্ষানবিশ যাজক হিসাবে। কিন্তু চার্চের দুর্নীতি দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে এই যুবাবয়সী শিক্ষার্থীরা ভিখারি হয়ে পথে নেমে পড়ে, আর বিদ্রূপাত্মক গান বানিয়ে-গেয়ে ঘুনেধরা সমাজ আর শাসকগোষ্ঠীর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা শুরু করে। এধরনের পল্লীগায়ক বা ত্রুবাদোরদের একটা গ্রুপের নাম গোলিয়ার্। কার্মিনা বুরানার প্রায় আড়াইশ’ বিদ্রূপাত্মক, নৈতিকতামূলক আর প্রেমের গান এরাই লিখে — শুধু লাতিন নয়, ‘অপবিত্র’ পুরনো ফরাসী-জার্মান ভাষাতেও। আর সেসব গানে আহামরি কত নিষিদ্ধ শব্দ আর বিষয়বস্তুর ছড়াছড়ি! সেসব শুনলে তথাকথিত ধর্মীয় নৈতিক চেতনার তল্পিতল্পাবাহী পোপগোষ্ঠীর কর্ণ রক্তিম হতে বাধ্য ছিল!

বলা বাহুল্য সাধারণ মানুষ ত্রুবাদোরদের গান শুনে পুলকিত হলেও গণজাগরণের অবস্থায় তারা ছিল না। তাদের অধিকাংশ ছিল ভূমিদাস আর তাদের গড় আয়ু ছিল পয়ত্রিশের কোঠায়। কোনমতে সেটুকু জীবন পার করে পরবর্তী প্রজন্মকে একই ভাগ্যে সপে দিয়ে অন্তর্ধান করতো তারা। স্বভাবতই এই গানটিতে গোলিয়ার্ ত্রুবাদোরও তাদের উপদেশ দিচ্ছেন বিচারককে নিজের ন্যায্য অধিকারের প্রমাণ দেখিয়ে কালক্ষেপণ না করে অর্থসামর্থ্য থাকলে ঘুষের আশ্রয় নিতে।

কিন্তু গানটার শেষে গীতিকার ঠান্ডা রোষ নিয়ে সাবধানবাণী শোনাচ্ছেন, ক্রাসুস বলে জুলিয়াস সীজারের সমসাময়িক এক প্রাচীন রোমান সেনানায়কের উদাহরণ দিয়ে। ক্রাসুস ক্ষমতাশালী কন্সাল হিসাবে বহু নামী রোমান পরিবারকে রাজনৈতিক প্যাঁচে ফেলে তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ গলাধঃকরণ করেছিলেন, সাধারণ নাগরিকদের হিসাব তো ধর্তব্যেই পড়ে না। এসব করে তিনি হয়েছিলেন রোমের সবচে’ বেশি পরিমাণ স্বর্ণের মালিক। উদ্ধত ক্রাসুস সমরক্ষেত্রে সংখ্যায় দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও শত্রু পার্থিয়ানদের কাছে পরাজিত হন। আর পার্থিয়ানরা তাঁকে বন্দি করে আগুনে গলানো তরল সোনা ঢেলে দেয় তাঁর গলায়।

“স্বর্ণের থেকে মধুর, মূল্যবান, শক্তিমান আর কিছু নেই। এমনকি তর্কবিশারদ সিসেরোর কাছেও বিপরীত কোন যুক্তি পাবে না। কিন্তু সোনা যাকে করে সম্ভ্রান্ত, বেদনাদায়কভাবে তাকে পুড়িয়ে মারেও সেই একই ধাতু। ক্রাসুসের ক্ষুধার জন্যে তাই সবচে’ উপযুক্ত তপ্ত স্বর্ণ! তাই সুবিচার!” (আউরো নিল পতেনৎসিউস …)

সময় লাগলেও গোলিয়ারদের সেই পোয়েটিক জাস্টিস ইউরোপে এসেছিল ঠিকই। প্লেগ-মহামারি হিসাবে, যুদ্ধ-বিগ্রহের আকারে। রাজা-প্রজা কাউকেই অসম চোখে দেখেনি সেই পোয়েটিক জাস্টিস। রোমান ক্যাথলিক চার্চও রক্ষা পায়নি। মার্টিন লুথারসহ অন্যান্য প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কারকদের অনুপ্রাণিত জনরোষের মুখে তারা উড়ে গেছিল তাসের ঘরের মত!

গানটার ভালো ইংরেজী অনুবাদ কমেন্টস সেকশনে দিলাম। সাবটাইটেলেরটা বেশি আক্ষরিক।

ইউ পম গানা?

Featured Video Play Icon

“ইউ পম গানা?” মনে আছে নিশ্চয় অনন্ত জলিলের সেই ইন্টারভিউটার কথা? ইচ্ছাকৃতভাবেই হোক কিংবা ‌অবচেতন মন থেকে হোক, জলিল সাহেব হাঁটে হাঁড়ি ভেঙে বাঙ্গালীর বর্ণবাদী মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছেন।

বাঙ্গালী কতটা-কেন কৃষ্ণাঙ্গদের নিচুচোখে দেখে — সেটা নিয়ে বিতর্ক-গবেষণার অবকাশ আছে। হয়ত সুলতানি আমলে হাবশি ক্রীতদাসদের কূটচালে রাজা হওয়া দেখে প্রাথমিক খারাপ ধারণাটা তৈরি হয়েছে। তারপরে সম্ভবত ব্রিটিশ শাসকদের মাংকি-সী-মাংকি-ডু করে আফ্রিকানরা নিম্নগোত্রীয়, এই বিশ্বাসটা প্রগাঢ় হয়েছে। দ্য গডস্ মাস্ট বি ক্রেজ়ির মত ছবি আমার ছোটবেলায় সেই বিরূপ ধারণা ভাঙতে খুব একটা সাহায্য করেনি। (এর বিপরীতে অবশ্য ছিল কিং সলোমন’স মাইনসএর মত রোমাঞ্চকর উপন্যাস!)

আজকের ট্র্যাকটা পছন্দ করলাম বাঙ্গালী স্টেরেওটাইপিংটাকে যদি কিছুটা নড়বড়ে করে দেয়া যায়, সেই উদ্দেশ্যে। গানের কণ্ঠশিল্পী ভ়িও ফ়ার্কা তুরে মালির অধিবাসী। বাবা আলি ফ়ার্কা তুরেও ছিলেন বিশ্বখ্যাত মিউজিশিয়ান। বিশ্বের কাছে মালির ট্র্যাডিশন্যাল গানবাজনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পিছনে তুরে সিনিয়র আর সিদকি ও তুমানি দিয়াবাতে বলে পিতা-পুত্র ‘কোরা’-বাদকের অনেক অবদান আছে।

যারা মার্কিন ব্লুজ় শুনেছেন, বিশেষ করে জন লী হুকারের গান, তারা এটা শোনামাত্রই বুঝবেন কতটা মিল! এর কারণ পশ্চিম আফ্রিকা থেকে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের সাথে এই ধরনের সঙ্গীত আমেরিকায় আসে। তাদের সুরগুলি গীটারের জন্যে খুবই মানানসই ছিল। নতুন দেশে নিজেদের ভাষা-ধর্ম হারিয়ে ফেললেও তারা সঙ্গীতকে হারায়নি।

এ ঐতিহ্য পশ্চিম আফ্রিকায় এক-দুই শতাব্দীর পুরনো নয়, কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর ধরে তারা সভ্যতার সাথে পরিচিত। মালির জেন্নে শহরে ৩০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের নগরসভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এ সভ্যতা অন্যান্য সভ্যতার মত নদীতীরে গড়ে উঠেছিল; সে নদীর নাম নিঝ়ের বা নাইজার — যার নামে নিঝ়ের ও নাইজেরিয়া দেশদু’টির নাম। আরবরা এই নদীর ডাকনাম দিয়েছিল ‘কৃষ্ণাঙ্গদের নীলনদ’।

অনন্ত জলিল যে গানা দেশটার নাম আমাদের কাছে সুপরিচিত করলেন, সেটা আসলে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী জুড়ে বিরাজমান একটা শক্তিশালী সাম্রাজ্যের নাম। ব্রিটিশ ঔপনেবিশকতা থেকে সর্বপ্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত আফ্রিকার স্বর্ণসমৃদ্ধ দেশটির নাম গোল্ড কোস্ট থেকে পরিবর্তন করে রাখা হয় গানা। অষ্টম শতকে আরবরা উত্তর আফ্রিকাবিজয়ের পরে তাদের বাণিজ্যের কাফেলা সাহারার দক্ষিণেও বিস্তৃত হয়েছিল। গানা সাম্রাজ্যের শহরগুলি এ সময় ছিল সোনা-লবণ রপ্তানির মূল কেন্দ্র। গানার শাসকরা পরে ইসলামগ্রহণ করে নিজেদের রাজবংশকে আরো বৈধতা দেয়। তা হলেও অনেক প্রাক-ইসলামিক নিয়ম রয়ে গেছিল। যেমন মাতৃবংশীয় উত্তরাধিকার ব্যবস্থা, যে কারণে এক রাজার পরের রাজা হত তার ভাগ্নে, ছেলে নয়!

গানা সাম্রাজ্যের অধঃপতনের পরে সেখানে অভ্যুদয় ঘটে মালি বা মান্দে সাম্রাজ্যের। দ্বাদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর এ রাজ্য সমৃদ্ধির শিখরে ছিল মোঙ্গলদের পরেই সেসময়ের সবচে’ বিস্তৃত সাম্রাজ্য। ইবনে খালদুন-ইবনে বতুতা মালি ভ্রমণের সময় তাদের বিপুল সামরিক লোকবল দেখে যেমন অভিভূত হয়েছিলেন, তেমনি অবাক হয়েছিলেন নারীপুরুষের একত্রে ওঠাবসা দেখে। মালির এক রাজা, বা মান্সা, মুসা কেইতা হজ্জ্বে গিয়েছিলেন বিশাল দলবল আর প্রচুর সোনা নিয়ে। তিনি যাত্রাপথে যেখানেই থেমেছেন সেখানেই বিলাসদ্রব্য কিনতে, এমনকি ভিক্ষা দিতেও, সোনা ব্যয় করেছিলেন। তাতে তখনকার পৃথিবীর সোনার সাপ্লাই রাতারাতি দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় বারো বছর ধরে নাকি সোনা অবমূল্যায়িত ছিল! মধ্যযুগীয় ইউরোপীয়রাও এই কাহিনী অবগত ছিল, তাই তাদের তৈরি মানচিত্রে তিম্বাক্তু শহরের অবস্থান দেখানো শুরু হয়।

মালি সাম্রাজ্য স্থাপত্যশৈলী আর জ্ঞানবিজ্ঞানেও এগিয়ে ছিল। তাদের তৈরি অসাধারণ মসজিদ-মাদ্রাসা-মিনারগুলি এখনো তিম্বাক্তু, গাও শহরে দেখা যায়। সাঙ্কারে বলে এক মাদ্রাসায় গোটা বিশ্ব থেকে মনীষীরা আসতেন জ্ঞান আদান-প্রদানের জন্যে। মিশরের প্রাচীন আলেকজ়ান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সাথে টেক্কা মারার মত পান্ডুলিপির সংগ্রহ ছিল সেখানে।

মালি সাম্রাজ্যের অবনতির কারণ ছিল তাদের শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ, যেটার সুযোগ নিয়ে পড়শী সঙায় সাম্রাজ্য তাদেরকে পরাজিত করে। সেই যুদ্ধে মালির শাসকরা নব্য পরাশক্তি পর্তুগীজদের সাহায্য চেয়েছিল। জেনে হয়ত অবাক হবেন যে ইউরোপীয়রা সাম্রাজ্যবিস্তারের সুযোগটা তখন নেয়নি, তারা এটাকে মালির আভ্যন্তরীণ সমস্যা ভেবে পাশ কাটিয়ে গেছিল। অবশ্য সমুদ্রউপকূলে পর্তুগীজদের কেল্লা ছিল, সেসব থেকে তারা ইউরোপে ক্রীতদাস রপ্তানি করত। তাদেরকে লোক্যাল সাপ্লাই দিত কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ দালালরাই!

মালির পরে সঙায় সাম্রাজ্য বেশিদিন টেকেনি। পর্তুগীজ নয়, মরক্কোর সুলতানের পাঠানো সেনাবাহিনীর গোলন্দাজদের কাছে তারা হার মানে। সেই পরাজয়ের পরে গোটা সাম্রাজ্য ভেঙে অসংখ্য টুকরো হয়ে যায়, যারা নিজেদের মধ্যে অনেক যুদ্ধবিগ্রহ করে। ঊনবিংশ শতকে ফরাসীরা এদেরকে বশে এনে উপনিবেশ বানায়। তারপর ষাটের দশকে একে একে অনেকগুলি দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। গানা, সেনেগাল, গাম্বিয়া, মরিতানিয়া, গিনি, গিনি-বিসাউ, বুরকিনা ফাসো, নাইজেরিয়া, নিঝ়ের — এদের সকলেই গানা-মালি-সঙায়দের প্রাচীন ঐতিহ্যের দাবিদার।

‘পম গানা?’ প্রশ্নের উত্তর একটু লম্বা-চওড়া হয়ে গেল, অতএব ক্ষান্ত হলাম!
***

[সাফারে গানটার বিষয়বস্তু অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেও বের করতে পারিনি। ফরাসী কোন ওয়েবসাইটেও লিরিক-ট্রান্সলেশন নেই। ইচ্ছে ছিল এ‌ই গানটার বদলে আলি ফ়ার্কা তুরের ‘আল্লা উইয়া’ গানটা শেয়ার করার, কিন্তু সেটার কোন লাইভ পারফর্ম্যান্স পেলাম না। লাইভে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার যেভাবে দেখা যায়, স্টুডিও রেকর্ডিংয়ে সেটা সম্ভব নয়। আগ্রহী হলে এখানে শুনুন ‘আল্লা উইয়া’।]

close

ব্লগটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন!