আমাদের ব্লগটার যাত্রা শুরু ফেসবুকে ছোট ছোট লেখার মধ্যে দিয়ে। বিভিন্ন বিষয়ে লেখার উদ্দেশ্য বাংলাভাষী পাঠকদেরকে বহির্বিশ্বের নানা সংস্কৃতির সাথে বিভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
ব্লগটি চালু করার সময় নাম নির্বাচন করতে গিয়ে ফররুখ আহমদের ‘সাত সাগরের মাঝি’ বই/কবিতার শিরোনামটি বেছে নেয়া হয়। ফররুখ আহমদ কবি হিসাবে ছিলেন মানবতাবাদী বা হিউম্যানিস্ট। গোড়ার দিকে বামপন্থী চিন্তাচেতনা তাঁকে আকৃষ্ট করলেও পরে বাঙালী মুসলিম পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসাবে আবির্ভূত হন। সেই পরিবর্তনের পিছনে অনুপ্রেরণা যতটা না মুসলিম রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের, তার থেকে সম্ভবত বেশি ইসলামী হিউম্যানিজ়ম। তিনি সম্ভবত বুঝেছিলেন হিউম্যানিজ়ম ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া যায় না, একে গোড়া থেকে কাল্টিভ়েট করতে হয়। বাংলার অধিকাংশ অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত নিপীড়িত মানুষ নিজেদের মুসলিম পরিচয়কে সযত্নে আগলে রেখেছে। এই পরিচয়কে যতই ধর্মরাজনৈতিক সংঘাতের পটভূমিতে দেখার চেষ্টা করা হোক না কেন, সেই পরিচয় থেকে সামাজিকভাবে মুক্তি নেই। তাতে কোন ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, কেননা আরো অন্যান্য সনাতন ধর্মের মত ইসলামধর্মের ইতিহাসেও হিউম্যানিস্ট উদাহরণ ভুরি ভুরি আছে। সেই ঐতিহ্যেই হয়ত ফররুখ আহমদ চল্লিশের দশকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, ৫২এর ভাষা আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন।
কিন্তু বাঙালী বা মুসলিম হিসাবে অনেকে এখনও অন্তর্মুখী। অন্যান্য সংস্কৃতিকে উপেক্ষা না করে তাদের হিউম্যানিস্ট ঐতিহ্যগুলো সম্পর্কে জেনে, তাদের ইতিহাস-পটভূমি কিছুটা বুঝে তাদের প্রতি একটা শ্রদ্ধার ভাব জাগ্রত করা এই ব্লগের অন্যতম লক্ষ্য। অন্য মানুষকে যদি আমরা না বুঝার চেষ্টা করি, সম্মান করা না শিখি, তাহলে তারাও আমাদের বোঝার চেষ্টা করবে না, সম্মান করবে না! ইন্টারনেটের যুগে পুরনো আমলের কূপমন্ডুকতার কোন অজুহাত নেই! ফররুখ আহমদের মাঝি কিংবা নজরুলের কান্ডারীকে হেরমান হেসের সিদ্ধার্থের ফেরিম্যান অথবা কোলরিজের এনশেন্ট ম্যারিনারের সাথে কম্পেয়ার-কনট্রাস্ট করা খুব একটা কঠিন নয়!
এখানে প্রকাশিত লেখাগুলি পুরোপুরি কারো না কারো ব্যক্তিগত মতামত। মুসলিম বা বাঙালীকে লক্ষ্য করে উপরের কথাগুলি লেখা হলেও এতে সাম্প্রদায়িক গন্ধ খুঁজার চেষ্টা করবেন না, এদের টার্গেট করার কারণ হল ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’। ব্লগের লেখাগুলি পড়লে বুঝতে পারবেন যে কোন ধর্মীয়-দেশীয় বা ভাষী মানুষই টার্গেট অডিয়েন্স হতে পারে। বাংলায় লিখলেও চিন্তার মু্ক্তপ্রকাশে কখনো ইংরেজী বা অন্য ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে। তথ্যে ভুল থাকতে পারে, অসম্পূর্ণ হতে পারে, সংশোধন করার চেষ্টা থাকবে। ভিন্ন মতামতকে বস্তুনিষ্ঠতা ও যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে প্রকাশের একটা প্লাটফর্ম দেয়ারও চেষ্টা থাকবে। ব্যক্তিগত আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়!